Ameen Qudir
Published:2017-04-05 18:03:46 BdST
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সত্যজিৎ-এর প্রথম যখন দেখা
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
___________________________
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সত্যজিৎ-এর প্রথম যখন দেখা হয় তখন সত্যজিৎ-এর বয়স সাত বছর। মা’র সঙ্গে শান্তিনিকেতন গেছেন পৌষ মেলা দেখতে।সঙ্গে নতুন কেনা অটোগ্রাফের খাতা। রবিবাবু নাকি খাতা দিলেই কবিতা লিখে দেন যখন তখন। ছোট্ট সত্যজিৎ-এর তাই শখ হয়েছে খাতার প্রথম পাতায় তাঁকে দিয়ে কবিতা লিখিয়ে নেবেন একটা। বাকি টা সরাসরি তুলে দিলাম স্বয়ং সত্যজিৎ-এর বয়ানেই...
“ উত্তরায়ণে গিয়ে দেখা করলাম তাঁর সঙ্গে। জানালার দিকে পিঠ করে চেয়ারে বসে আছেন, সামনে টেবিলের উপর বই খাতা চিঠিপত্রের বিরাট অগোছাল স্তূপ। আমি তখন দেশবিদেশের ডাকটিকিট জমাতে শুরু করেছি আর এখানে চোখের সামনে দেখছি রংবেরঙের ডাকটিকিট লাগানো বিদেশি চিঠির খামগুলো এখান-সেখান থেকে উঁকি মারছে। মনে মনে ভাবলাম আমার যদি বিদেশ থেকে এত চিঠি আসত তাহলে ডাকটিকিটের জন্য আর অন্যের কাছে হাত পাততে হত না। অটোগ্রাফের খাতাটা আমি এগিয়ে দিলেও, কবিতা’র ফরমাশটা এল মা’র কাছ থেকেই। আমি ছিলাম বেজায় মুখচোরা,বিশেষ করে রবিবাবুর সামনে তো বটেই। কিন্তু কই-তখন তখন তো লিখলেন না কবিতা।তাতে যে একটু নিরাশও হয়েছিলাম সেটাও মনে আছে। বললেন ‘কাল সকালে এসে নিয়ে যেয়ো।’
গেলাম পরদিন সকালে। বুকের ভিতরে ঢিপঢিপ করছে; এত কাজের মধ্যে আমার খাতায় কবিতা লেখার কথা কি আর মনে থাকবে? বললেন, ‘লেখা হয়ে গেছে,তবে খাতাটা কোথায় রেখেছি সেটাই হল প্রশ্ন।’ মিনিট দশেক খোঁজাখুঁজি করে ছোট্ট বেগুনি খাতাটা বেরোল একরাশ বই আর তার খাতার নীচ থেকে। সেই খাতার প্রথম পাতা খুলে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘এর মানে আরেকটু বড় হলে বুঝবে।’ দেখলাম খাতার পাতায় লেখা একটা আট লাইনের কবিতা। সেটা সেইদিন থেকে প্রায় বারো বছর অবধি ছিল আমার একার জিনিষ। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর সেটা পত্রিকা আর বইয়ের পাতায় ছাপা হওয়ার ফলে হয়ে গেল সকলের। কবিতাটি হলঃ
“বহু দিন ধরে’ বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু ।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু ।।”
৭ই পৌষ ১৩৩৬ শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শান্তিনিকেতন
সাত বছর বয়সের ছোট্ট সত্যজিৎ এই কবিতার অর্থ তখন হয়ত বুঝতে না পারলেও ওনার বাকি জীবনের কার্যকাণ্ডের গতি প্রকৃতি হয়ত এই একটা কবিতাই তাঁর অবচেতনে কাজ করে যায়। তাই আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র বানিয়েও, হলিউডের প্রতি বিশেষ অনুরাগ বুকে নিয়েও বাংলার কিম্বা ভারতের বাইরে কোনদিন ক্ল্যাপস্টিক ফেললেন না।
প্রনাম জানাই দুজনকেই।।
____________________________
লেখক ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় । কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক । কবি।
Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC)
আপনার মতামত দিন: