DR. AMINUL ISLAM
Published:2024-12-12 10:47:50 BdST
হাড় ব্যথা কেন হয়?
ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
অধ্যাপক, অর্থোপেডিক্স সার্জারি, শিশুসাহিত্যিক
__________________
হাড়ের ক্যান্সারে হাড়ভাঙা বেড়ে যায়, ত্বকের নিচে পি- অনুভব করা যায়, টিউমারটি নার্ভে চাপ দিলে অসাড় বা ঝিনঝিন অনুভূতি হয়। হাড়ে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে জয়েন্টে ব্যথা হয়, জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যায়
অনেক কারণে হাড়ের ব্যথা হতে পারে-
ইনজুরি : ইনজুরি বা আঘাত হাড়ে ব্যথার সাধারণ কারণ। সাধারণত আঘাত থেকে গাড়ি এক্সিডেন্ট বা পড়ে যাওয়া থেকে ব্যথা হতে পারে। হাড়ে যে কোনো ধরনের ক্ষতি হলে হাড় ব্যথা করতে পারে। তাই সচেতন হোন।
খনিজের ঘাটতি : আপনার হাড় শক্তিশালী করতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ ও ভিটামিন, বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র প্রয়োজন হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র অভাবে সচরাচর হাড়ের ভঙ্গুর রোগ অস্টিওপরোসিস হয়। অস্টিওপরোসিস হাড়ের খুব সাধারণ রোগ। অস্টিওপরোসিসের শেষ স্তরে হাড়ে ব্যথা হয়।
ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার : শরীরের এক স্থানের ক্যান্সার অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। স্তন, ফুসফুস, থাইরয়েড, কিডনি ও প্রোস্টেটের ক্যান্সার সাধারণত হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
হাড়ের ক্যান্সার : হাড়ের ক্যান্সার হাড়েই উৎপন্ন হয়। হাড়ের স্বাভাবিক গঠন ধ্বংসের মাধ্যমে এটা হাড়ে ব্যথা ঘটাতে পারে।
রক্ত সরবরাহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রোগ
কিছু রোগ যেমন সিকেল সেল এনিমিয়া হাড়ে রক্ত সরবরাহে বাধা দেয়। রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে হাড়ের টিস্যু মারা যেতে শুরু করে। আর এর ফলে হাড়ে মারাত্মক ব্যথা হয় ও হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে।
ইনফেকশন : হাড়ে ইনফেকশন হলে যে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয় তার নাম অস্টিওমাইলাইটিস। হাড়ের এই ইনফেকশন হাড়ের কোষগুলোকে মেরে ফেলতে পারে ও হাড়ের ব্যথা ঘটাতে পারে।
লিউকেমিয়া : লিউকেমিয়া হলো অস্থিমজ্জার ক্যান্সার। অধিকাংশ হাড়ে অস্থিমজ্জা থাকে এবং এটা হাড়ের কোষ তৈরি করে। লিউকেমিয়ার রোগীদের হাড়ে বিশেষ করে পায়ে ব্যথার অভিজ্ঞতা ঘটে।
উপসর্গ : হাড়ের ব্যথার সবচেয়ে লক্ষণীয় উপসর্গ হলো বসে থাকলে বা নড়াচড়া করলে অস্বস্তি লাগে। অন্যান্য উপসর্গগুলো নির্ভর করে আপনার হাড়ের ব্যথার নির্দিষ্ট কারণগুলোর ওপর। ক্স ইনজুরির ক্ষেত্রে যে হাড়ে ব্যথা হয় সেখানে আরও কিছু উপসর্গ থাকে যেমন স্থানটি ফুলে যাওয়া, দৃশ্যমান ভাঙা বা অঙ্গবিকৃতি, আঘাতের স্থানে কট করে শব্দ হওয়া ইত্যাদি। ক্স অস্টিওপরোসিসে পিঠে ব্যথা করে, রোগী নুয়ে থাকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমে যায়। ক্স ছড়িয়ে পড়া বা মেটাস্টাটিক ক্যান্সারে বিস্তৃত উপসর্গ থাকে যা নির্ভর করে ক্যান্সারটি কোথায় হয়েছে তার ওপর। এক্ষেত্রে মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, হাড় ভেঙে যাওয়া, খিঁচুনি, মাথাঘোরা, জন্ডিস, ছোট ছোট শ্বাস ফেলা, পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকে। ক্স হাড়ের ক্যান্সারে হাড়ভাঙা বেড়ে যায়, ত্বকের নিচে পি- অনুভব করা যায়, টিউমারটি নার্ভে চাপ দিলে অসাড় বা ঝিনঝিন অনুভূতি হয়। ক্স হাড়ে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে জয়েন্টে ব্যথা হয়, জয়েন্ট কাজ করে না, জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যায়। ক্স ইনফেকশনের ক্ষেত্রে ইনফেকশনের স্থানটি লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, গরম হয়ে যায়। অঙ্গ নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়, বমিবমি ভাব হয়, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। ক্স লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ে, ত্বক ফ্যাকাশে হয়, এমনকি রোগী ছোট ছোট শ্বাস নেয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, এছাড়া রাতে ঘেমে যায় ও হঠাৎ ওজন কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় হাড়ে ব্যথা : অনেক গর্ভবতী মহিলার পেলিভক বা শ্রোণির হাড়ে ব্যথা হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। এই ব্যথা কখনো কখনো গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত শ্রোণি চক্রে স্থানান্তরিত হয়। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে পিউবিক হাড়ে ব্যথা এবং পেলিভক জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যাওয়া ও ব্যথা করা। বাচ্চা প্রসব না হওয়া পর্যন্ত ব্যথা যায় না। অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসা নিলে উপসর্গ কমে যায়। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-ক্স জয়েন্টগুলো সঠিকভাবে নাড়াচাড়া করা ক্স ফিজিক্যাল থেরাপি ক্স ব্যায়াম ক্স তলপেটের ব্যায়াম
হাড়ের ব্যথা কীভাবে নির্ণয় করবেন?
সঠিক চিকিৎসার জন্য হাড়ের ব্যথার কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। হাড়ে ব্যথার নির্দিষ্ট কারণের চিকিৎসা করলে আপনার ব্যথাও কমে যাবে।
আপনার চিকিৎসক আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন, আপনার সমস্যার ব্যাপারে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করবেন। সাধারণ প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে- আপনার ব্যথা কোথায় হয়?
♦ প্রথম কবে ব্যথা শুরু হয়েছিল?
♦ ব্যথা কি খুব খারাপ অবস্থায় যায়?
♦ হাড়ে ব্যথার সঙ্গে কি অন্য কোনো
উপসর্গ রয়েছে?
আপনার চিকিৎসক আপনার ভিটামিনের ঘাটতি দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে দিতে পারেন, ক্যান্সার আছে কি না নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্যান্সার মার্কার পরীক্ষা দিতে পারেন। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসক আপনার ইনফেকশন ও এড্রেনাল গ্রন্থির অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে জানতে পারেন যা আপনার হাড়ের স্বাস্থ্যে বাধা প্রদান করে। চিকিৎসক আপনার হাড়ের এক্স-রে, এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান দ্বারা ইনজুরি, হাড়ের ক্ষত এবং হাড়ের মধ্যকার টিউমার দেখতে পারেন। মাল্টিপল মায়োলোমাসহ অস্থিমজ্জার মধ্যকার অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করার জন্য প্রস্রাব পরীক্ষা করা যেতে পারে।
হাড়ের ব্যথায় কী চিকিৎসা দেবেন?
চিকিৎসক হাড়ের ব্যথার কারণ নির্ণয় করার পর সেই কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করবেন। আক্রান্ত স্থানটি যতটা সম্ভব বিশ্রামে রাখতে হবে। মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা উপসমের জন্য ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
যদি ইনফেকশন সন্দেহ করা হয়, তাহলে চিকিৎসক আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করতে পারেন। ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করবেন, এমনকি আপনার উপসর্গ চলে যাওয়ার পরেও কিছুদিন পর্যন্ত প্রদাহ কমাতে সাধারণভাবে কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হাড়ের ব্যথার চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে-
ব্যথানাশক ওষুধ
হাড়ের ব্যথা কমাতে সচরাচর ব্যথানাশক ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়, তবে এসব ওষুধ হাড় ব্যথার নির্দিষ্ট কারণগুলোকে সারিয়ে তোলে না। সাধারণভাবে আইবুপ্রফেন বা প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়।
অ্যান্টিবায়োটিক
যদি আপনার হাড়ে ইনফেকশন থাকে, তাহলে ইনফেকশন ঘটানোর জন্য দায়ী জীবাণুগুলোকে মেরে ফেলতে আপনার চিকিৎসক আপনাকে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করতে পারেন। এসব অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ক্লিন্ডামাইসিন বা ভ্যানকোমাইসিন। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে।
পুষ্টির জোগান
যেসব মানুষের অস্টিওপরোসিস রয়েছে তাদের ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি’র মাত্রা ঠিক রাখার প্রয়োজন রয়েছে। চিকিৎসক পুষ্টির সাপ্লিমেন্ট প্রদান করতে পারেন।
লেখক : অধ্যাপক, অর্থোপেডিক্স সার্জারি
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।
মিজানুর রহমান কল্লোল এর বই
আপনার মতামত দিন: