Dr. Aminul Islam

Published:
2021-05-01 17:01:25 BdST

নিজের ঘরেই যেভাবে অক্সিজেন বাড়াবেন, এই সময়ের সবচেয়ে ইমার্জেন্সি


 

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
বাংলাদেশের লোক স্বাস্থ্যাচার্য
-----------------------------------------------

বর্তমানে যে সমস্যা তা হলো করোনা রোগীর শরীরে হটাৎ ঘটে যাচ্ছে অক্সিজেন–সংকট। হাসপাতালে যেতে যেতে অক্সিজেন–সংকট অনেকের প্রকট হয়ে পড়ে। আর তখন আইসিইউ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এমন পরিণতি ঠেকাতে আছে ঘরে বসে অপেক্ষার সময় শরীরে অক্সিজেন মান বাড়ানোর উপায়। আর এ ব্যাপারে আছে বিশেষজ্ঞ পরামর্শও।

ভারতে হঠাৎ অক্সিজেনের চাহিদা তীব্র হওয়ায় মানুষের মৃত্যু বাড়ছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছেন, এর মূলে হলো নতুন ধরনের করোনা, যা শরীরের ফুসফুস ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে শ্বাসকষ্ট হলে তখন নজরে আসে এই ভয়ানক ভাইরাসের উপসর্গ। দু–তিন দিনের মধ্যে অবস্থা শোচনীয় হতে থাকে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮০ শতাংশের নিচে নেমে যায় আর অবিলম্বে অক্সিজেন দরকার হয়।

ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেস - এইমস এ রকম এক স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর প্রস্তুত করল আপৎকালীন চটজলদি ব্যবস্থা হিসেবে, যার অনুমোদন দিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঘরে হটাৎ শরীরে অক্সিজেন কমে গেল বিভ্রান্ত বা অস্থির না হয়ে নিজের চেষ্টায় নিজেকে সুস্থ্য রাখতে পারেন। বলা হচ্ছে রোগীকে উপুড় করে শোয়ালে অক্সিজেন মানের পুনঃস্থাপন করা সহজ হয়।

প্রোনিং বা উপুড় হয়ে শয়ন হলো শরীরকে চিৎ অবস্থা থেকে ধীরেসুস্থে পেটের ওপর উপুড় করে শোয়ানো। চিকিৎসায় অনুমোদিত এই পদ্ধতি গ্রহণ করলে শ্বাসক্রিয়া স্বস্তিকর হয়, আর অক্সিজেনায়ন বাড়ে। কোভিড ১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে যেখানে শরীরে অক্সিজেন–সংকট হয় প্রধান, সেখানে এই পদ্ধতি গ্রহণ অনেক সময় হতে পারে জীবন রক্ষাকারী।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই উপুড় হয়ে শোয়া

১. উপুড় হয়ে শুলে বাড়ে বায়ু চলন, শ্বাসকর্ম হয় সহজ আর খুলে যায় সব বায়ুকোষ।

২. রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে আর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪–এর নিচে চলে গেলে রোগীকে উপুড় করে শোয়াতে হবে।

৩. গৃহে অন্তরীণ থাকলে পালস অক্সিমিটার দিয়ে নিয়মিত অক্সিজেন মান দেখা ছাড়াও নজরে রাখতে হবে দেহতাপ মানে। রক্তচাপ আর রক্তের সুগার দেখা দরকার।

৪. দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি বা হাইপক্সিয়া নজর না করলে রোগীর অবস্থা শোচনীয় হতে পারে।

৫. সময়মতো উপুড় করে শোয়ানো আর বায়ু চলাচল বজায় রাখলে বাঁচে অনেক জীবন।

বালিশ রাখার পদ্ধতি

একটি বালিশ রোগীর গলার নিচে। দু–তিনটি বালিশ ঊরু থেকে ওপরে বুকের নিচে। আর জঙ্ঘার (হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত অংশ) নিচে দুটি বালিশ রেখে রোগী উপুড় হয়ে শুয়ে থাকবে। পর্যায়ক্রমে অবস্থান বদল করতে হবে। এক অবস্থানে সাধারণত আধঘণ্টার বেশি না রাখার চেষ্টা করুন।

যেভাবে উপুড় হয়ে শোবেন

সময়কাল অবস্থান

আধঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা পেটের ওপর উপুড় হয়ে শোয়া।

আধঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা ডান কাত হয়ে শোয়া

আধঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা হেলান দিয়ে উঠে বসা (৬০-৯০ ডিগ্রি)

আধঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা বাঁ কাতে অবস্থান

আধঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা আবার প্রথম অবস্থানে ফিরে আসুন।

সাবধানতা

আহারের পর এক ঘণ্টার বেশি উপুড় হয়ে শোয়া ঠিক না।

যতক্ষণ সহ্য করা সম্ভব, তত সময় উপুড় হওয়া উচিত।

একজন ব্যক্তি একটানা পালাক্রমে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত এ অবস্থানে থাকতে পারেন।

প্রেশার এলাকা বদলাতে আর আরামের জন্য বালিশের অবস্থান বদলানো যেতে পারে।

চাপে কোনো ক্ষত হচ্ছে কি না, খেয়াল করতে হবে।

গর্ভবতী নারী, ডিপ ভেন থ্রম্বসিস রোগী, হৃদ্‌রোগী বা হাড়ভাঙা রোগীদের উপুড় হয়ে শয়নপদ্ধতি এড়িয়ে চলা ভালো।

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়