Ameen Qudir

Published:
2017-02-28 01:37:03 BdST

প্রায়শই ‘হাইজ্যাক’ হয় রোগী, ক্লিনিকে ঢোকালেই কমিশন


 

 


অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

___________________________________


একটা মৃত্যু নতুন করে সামনে নিয়ে এল অনেক দিনের অভিযোগকে।

কী সেই অভিযোগ?

কী ভাবে এক সরকারি হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হয়ে অন্য সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার মাঝপথেই ‘হাইজ্যাক’ হয়ে যান অনেক রোগী। যে অ্যাম্বুল্যান্সের রোগীকে নিয়ে যাওয়ার কথা অন্য এক সরকারি হাসপাতালে, সেই চালকই পরিবারকে ছলে-কৌশলে বুঝিয়ে রোগীকে ভর্তি করিয়ে দেন নার্সিংহোমে। তার সুবাদে চালকের ট্যাঁকে ঢোকে কমিশন।

এখানে কথা হচ্ছে বীরভূমের রামপুরহাট হাসপাতাল নিয়ে। আগের মহকুমা হাসপাতাল এখন জেলা হাসপাতাল। বীরভূম তো বটেই, লাগোয়া ঝাড়খণ্ড ও মুর্শিদাবাদের একাংশ থেকেও প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী এই হাসপাতালে আসেন। অভিযোগ, যে রোগ সারানো সম্ভব রামপুরহাটেই, বহু ক্ষেত্রেই নিজেদের ঘাড়ে তা না রেখে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এই ‘রেফার’ প্রথাই সুযোগ করে দিয়েছে হাসপাতাল চত্বরে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশের সঙ্গে বর্ধমানের কিছু নার্সিংহোমের আঁতাঁতের।

ঠিক যেমন চুমকি লেটের ক্ষেত্রে হয়েছে বলে অভিযোগ। ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার সদ্য মা হওয়া ওই যুবতীকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রামপুরহাটেই। হাসপাতাল তাঁকে ‘রেফার’ করে বর্ধমান মেডিক্যালে। অভিযোগ, যে অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেটির চালক চুমকির বাবা তপন লেটকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যান বর্ধমানের নবাবহাটের পিজি নার্সিংহোমে। বিলের টাকা পুরো জোগাড় করতে না পারায় চুমকিকে ছাড়া হবে না বলে জানায় নার্সিংহোম। মঙ্গলবার আত্মঘাতী হন তপনবাবু।

একই কৌশলে প্রতারিত হওয়া বীরভূমের বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রোগীর রেফারের খবর পরিজনদের জানার আগেই নেটওয়ার্কের সুবাদে আগেভাগে জেনে যান অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা।


শুধু তাই নয়, কোন হাসপাতালের রোগী কখন, কোথায় রেফার হবেন, রোগীর পরিবারের পকেটের জোর কেমন, সব খবরই দুরন্ত নেটওয়ার্কের সৌজন্যে পৌঁছে যায় অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের কাছে। এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক নিজেই জানালেন, রোগীকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে দেখে নেওয়া হয় পরিবারটি কেমন। বেশভূষা, চালনচলন দেখেই সে সব বুঝে যায় চালকদের অভিজ্ঞ চোখ। রোগী রেফার হওয়া মানেই অবস্থা খারাপ, এই ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করা হয়।

 

মুরারই ব্লকের তেমনই এক ভুক্তভোগী রোগীর কথায়, “সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঠিকমতো চিকিৎসা হবে না, আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে রোগী—এই সব ভয় দেখানো শুরু হয়। এর পরে পছন্দের নার্সিংহোমের নামে গুণগান শুরু করে দেন চালক। এক সময়ে তাঁর কথায় বিশ্বাস করে রোগীর পরিবার। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। সুস্থ হয়ে যে বাড়ি ফিরেছি, সেই ঢের।’’

ঘটনা হল, বছর চারেক আগেও রামপুরহাট হাসপাতালে যেখানে চার, পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া খাটত, সেখানে এখন সংখ্যাটি ২৩। বর্ধমানে গত তিন-চার বছরে শুধু জিটি রোডের উপরেই অন্তত ৩১টি নার্সিংহোম খুলেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখে রোগী টানতেই অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের ‘কমিশন’ দেয় নার্সিংহোমগুলির একাংশ। মালিকরা।

বর্ধমান নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা জানালেন, অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সঙ্গে কিছু নার্সিংহোমের আঁতাঁতের কথা তাঁদেরও কানে গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ব্রজেশ্বর মজুমদার।

___________________________

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় । বাংলার লোকসেবী সাংবাদিক।

আপনার মতামত দিন:


ফার্মাসিউটিক্যালস এর জনপ্রিয়