Ameen Qudir

Published:
2019-03-19 05:27:10 BdST

বিশেষ কলাম ৯৩ ভাগ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ : রোগীর করণীয় বলছেন ডাক্তার ও ওষুধ কম্পানির কর্তারা


 

ডেস্ক
_________________________

রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ ব্যাপারে
ওষুধ উৎপাদন কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠিত ওষুধ কম্পানি মেয়াদ নিয়ে জালিয়াতি করে না। জালিয়াতি হলে ফার্মেসী বা খুচরা বিক্রি পর্যায়ে হয়। সবচেয়ে বেশী জালিয়াতি হয় বিদেশী আমদানি ওষুধে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বিশ্বমানের সেটা স্বীকৃত। ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশে উৎপাদন হচ্ছে। কিছু ওষুধ উৎপাদন সম্ভব হয় না বাজারের ছোট আয়তনের কারণে। অর্থনৈতিক হিসাবে মেলে না। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেশীয় ওষুধ বিক্রি না করে আমদানি ওষুধ উচ্চদামে বিক্রি করে। ক্রেতাও ভাবে , বিদেশী ওষুধ বেশী কার্যকর। এসব কারণে জালিয়াতি বাড়ছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ আমদানি হয় কিনা, জোর দিয়ে বলা যায় না। কিন্তু আমদানি ওষুধের বিক্রি কালে মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে তা ফেরত দেয়া যায় না। তাই অসাধু বিক্রেতা নতুন করে মেয়াদের স্টিকার লাগিয়ে , ঘষে মেজে বিক্রি করতে পারে। সেটা ক্রেতা সচেতন হলে ধরা সম্ভব। যেহেতু এই অসাধু জীবন ঘাতী কাজে দেশীয় উৎপাদক বা চিকিৎসক সমাজের দেখভালের সুযোগ নেই তাই সচেতন জনগনকেই হতে হবে।

এ ব্যাপারে ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক এবং বিএসএমএমইউর মনোরোগ বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা এলগিন বলেন, এরকম অভিযোগ কানে এসেছে। সেজন্য আমরা রোগীদের সাবধান করি সবসময় যে , ওষুধের মেয়াদের জায়গায় কাটাকুটি করা , কিংবা ওপরে আবারও স্টিকার লাগানো , নতুন দাম লাগানো ওষুধ কিনবেন না। এ ব্যপারে ক্রেতাদের সচেতন হতে হবে। চিকিৎসক পরামর্শ লিখে দেন। দেশীয় নিয়ম অনুযায়ী রোগী বা স্বজন ফার্মেসী থেকে ওষুধ কেনেন। তারা অবশ্যই সাবধান হবেন । প্রতিটি ওষুধের প্যাকেট সাবধানে দেখে ওষুধ কেনা উচিত। কোন অবহেলা যেন না হয়। যদি খুচরো ওষুধ কেনেন, তবে যেন মূল প্যাকেট দেখে মেয়াদের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নেন। কোন ফার্মেসী বাতিল ওষুধ বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
ডা. এলগিন আরও বলেন , প্রশ্ন হল, অশিক্ষিত রোগীরা কি করবেন। তারা অশিক্ষার কারণে প্রতারিত হতে পারেন। এটা নিশ্চিত করে বলব, অশিক্ষিত রোগী প্যাকেট নিয়ে এলে ডাক্তাররা দেখে দেন। সুশিক্ষিত সচেতন রোগী স্বজন নিজেরা সচেতন না হয়ে জালিয়াতির শিকার হলে সে দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। বিশেষ করে দেশে উৎপাদিত সুলভ ওষুধ না কিনে বেশী অনেকে জোর করেই বেশি দামে বিদেশী ওষুধ খান। বলে বেড়ান , দেশীয় ওষুধ ভাল না। অসাধু চক্র রোগীদের টাকার গরম ও মানসিকতার আশ্রয় নিতে পারে।

অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, অসাধু বিক্রেতারা অনেক সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের গায়ে নতুন করে মেয়াদ সংবলিত স্টিকার লাগিয়ে তা বিক্রি করে। নতুন স্টিকার উঠিয়ে দেখা গেছে ২০১৮ সালে যে ওষুধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সে অষুধে ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদ লাগানো হয়েছে। তাছাড়া অনেক সময় বিদেশ থেকে আমদানি করা ওষুধের প্যাকেটে কোনো ধরনের উৎপাদন তারিখ বা মেয়াদের তারিখ থাকে না।

ফার্মেসি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাই এই অনিয়ম ঠেকাতে অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারা দেশে তিন স্তরের তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ক্রেতা সেজে বা ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে ফার্মেসিগুলো তদারকি করবে। ওষুধ বিক্রিতে কোনো ধরনের অনিয়ম পেলেই ভোক্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার মিডিয়াকে বলেন, ‘নিয়মিত বাজার তদারকির এক বছরের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। অধিদফতর ভোক্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে। এই প্রতারণা রোধে অধিদফতরের পক্ষ থেকে সারা দেশে তিন স্তরের তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ক্রেতা সেজে বা ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে ওষুধ বিক্রি তদারকি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধে সম্প্রতি আমরা তেজগাঁও এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এ সপ্তাহের মধ্যে পল্টন ও মিটফোর্ড এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করব। এরপর মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে ভোক্তা আইনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

অধিদফতরের বাজার তদারকির তথ্য অনুযায়ী, ৫ মার্চ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযানকালে রাজধানীর ধানমণ্ডি ও শাহজাহানপুর থানার কিয়োর ফার্মেসিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রর দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই এলাকার প্যানকেয়ার মেডিসিন কর্নারকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ৭ মার্চ শ্যামলীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির দায়ে চারটি ফার্মেসিকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ৯ মার্চ মুগদা এলাকার ভোলা ড্রাগ হাউস, ঢাকা ড্রাগ হাউস এবং রানা ফার্মেসিকে ৩০ হাজার টাকা করে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ১১ মার্চ বনানী এলাকায় বেস্ট ফার্মাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এই অপরাধে ১২ মার্চ খিলক্ষেতের সিয়াম ফার্মেসিকে বন্ধ করে দেয়া হয়।

অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন বাজার তদারকি করছি। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি প্রতিরোধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন)-১ সদস্যরা।’

 

জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মিডিয়াকে বলেন, ‘আমাদের দেশে যারা ওষুধ বিক্রি করেন তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তারা কেউ লোকসান দিতে রাজি নয়। তাই অবিক্রীত ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলেও প্রতারণা করে ভোক্তার কাছে বিক্রি করে দেন। এ জন্য ক্রেতাদের সচেতন থাকতে হবে। মেয়াদ দেখে ওষুধ কিনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি জীবননাশের হুমকিতে পড়ছেন। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের কথা কল্পনাও করা যায় না। উন্নত দেশগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বাজারজাত করলে কঠিন শাস্তি হয়। তাই বাংলাদেশেও কঠোর আইনের মাধ্যমে এই দুষ্কর্ম বন্ধ করতে হবে।’

আপনার মতামত দিন:


ফার্মাসিউটিক্যালস এর জনপ্রিয়