Ameen Qudir

Published:
2017-08-12 18:48:30 BdST

স্টাটিন গোষ্ঠীর ওষুধ পত্র নিয়ে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের প্রচারের জবাবে


 

 


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় _______________________________________


কোন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক, এই ফেসবুকের মাধ্যমে, জনগণ কে জানাচ্ছেন যে -- স্টাটিন গোষ্ঠীর ওষুধ পত্র নিয়মিত চল্লিশোর্ধ দের খেয়ে যেতে হবে, কারণ রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কম করার জন্যে এই ওষুধ টি ভারি প্রয়োজনীয়।

 

এটি নইলে ঘোর সর্বনাশ। আকাশ হয়তো মাথায় ভেঙ্গে পড়বে না, কিন্তু হৃদয়ের অ -- সুখ এবং রক্ত জমাট বেঁধে তাঁদের মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন থেকে, সেরিব্রাল হেমারেজ অথবা সেরিব্রাল ইনফার্কশন, এই প্রাণঘাতী অথবা একদিক ( হাত এবং পা মিলিয়ে) পক্ষাঘাতগ্রস্ত হবেই হবে। যেন এই স্টাটিন গোষ্ঠী র ওষুধ না খেলে -- জনগণ বহুদিন নীরোগ শরীরে এবং পুলকিত মনে অন্তত পঁচাশি -- নব্বই অবধি বহাল তবিয়তে বাঁচবেন। এই নামী চিকিৎসক বলেননি অবশ্য, যে এই বটিকা নিয়মিত খেলে নির্ধনের ধনলাভ হবে বা অপুত্রকের পুত্র লাভ হবে, মানুষ হবে চিরযৌবন এর অধিকারী বা অধিকারিণী।

 


এই শতকের শুরু থেকেই এই গোত্রের মহৌষধের আবিষ্কার, এবং গুণাবলী কিছু মূলত বিদেশী ওষুধ কোম্পানি চিকিৎসক এর মনে গেঁথে দিতে পেরেছিল। কারণ এই ওষুধ বিক্রিতে সমূহ লাভ বা নাফা। তারা বিদেশী ' স্টাডি ' তে এমন ও দেখিয়েছিল যে বয়সের সঙ্গে যে রক্তবাহী নালীগুলিতে কোলেস্টেরল এর আস্তরণ পড়ে তা আর পড়বে না, এবং প্লিওট্রপিক ইফেক্ট এর দৌলতে আমাদের বয়স সংখ্যায় বাড়লেও, প্রকৃত প্রস্তাবে বাড়বে না, আমরা অক্ষয় যৌবন লাভ করবো। এমনকি এই মহৌষধ আমাদের কোলেস্টেরল এর রক্তনালী তে পড়ে যাওয়া পরত ও আবার কমিয়ে ফেলবে। বেশ অনেকগুলি সেমিনারে বিশিষ্ট সুগৌর, ইংরেজি ভাষী, দীর্ঘকায়, সায়েব সুবোরা স্বাধীন ভারতে বারবার পদার্পণ করলেন ( পড়ুন পরার্থে কাঞ্চনমূল্যে ছুটি কাটিয়ে গেলেন) এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কুল কে বুঝিয়ে গেলেন --- যা কিছু ঘটে কোলেস্টেরল ব্যটাই চোর এবং তাকে সামলাবার মারণাস্ত্র স্টাটিন এসে গেছে মা ভৈ বলে।

 


বাদামী থেকে কালো চামড়ার আমরা বিলক্ষণ বিশ্বাস করলেম। আমরা ভুলে গেলেম যে কোলেস্টেরল বিনে শরীরের একটিও হরমোন আদৌ তৈরী ই হয়না -- হয়নি কখনো। দুই আড্রেনাল গ্লান্ড ( ডান ও বাম) থেকে ক্ষরিত হওয়া হরমোন তৈরী বন্ধ হয়ে গেলে ভারি অসুবিধায় পড়বো আমরা মানবজাতি।

 


আটোরভা দিয়ে শুরু হয়েছিল, এরপরে এলো সিম্ভা,এবং শেষে রসুভা। ওমা, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন তো,বন্ধ হলো না, বন্ধ হলো না সেরিব্রাল হেমারেজ ও ইনফার্কশন ও। মাঝ থেকে অর্থ ব্যয় হলো প্রচুরতর। লিভার বা যকৃত যেহেতু কোলেস্টেরল তৈরীর মূল কারখানা, সেও চাপে পড়ে বিষম আচরণ করতে থাকলো, কারণ তাকে তার অনেকানেক কাজের একটি, কোলেস্টেরল তৈরী করতে দেওয়া হচ্ছে না। লিভারের কার্যকারিতার পরীক্ষা গুলি বর্ধিত ফল দেখাতে আরম্ভ করলো। অনেকের মাংসপেশি তে হালকা থেকে ভারি ব্যথা শুরু হলো, অনেকের এই ব্যথা তাদের প্রায় অথর্ব করে ফেললো।

 

তবু ১৪ বা 14 বছর কাটলো এইভাবে। এরপর নিরপেক্ষ চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখলেন নানা দেশে তিন ( ৩ বা 3) বছর ধরে, সত্যিকার কি উপকার হলো এতদ্বারা!!
ও নোহ্। ও নাহ্। দেখা গেল তেমন লাভ কিছুই প্রায় হয়নি জনগণের, তবে ওষুধ কোম্পানি দের ব্যবসায় লাভ উপছি পড়িল।

 

একটু পেছনে ফিরি। সিনেমার ভাষায় ফ্ল্যাশব্যাকে যাই। কি দেখি আর জানি? ১( 1).অন্তস্বত্তা মহিলাদের কিন্তু এই জাতীয় স্টাটিন দেওয়া বারণ ছিলই। ২ (2) বয়:সন্ধি বা অন্তত একুশ বছর বয়েস কাল পর্যন্ত এই ওষুধ দেওয়া যাবে না, কারণ তখনি গ্লুকোকর্টিকয়েড,মিনারেলোকর্টিকয়েড এবং যৌন বা সেক্স হরমোন গুলি তৈরী হওয়া সমূহ প্রয়োজন কারণ এই অন্তক্ষরী বা এন্ডোক্রিন হরমোন ( আবারো মনে করাই, অভাগা, কলঙ্কিত কোলেস্টেরল বিনে এই হরমোন গুলি তৈরী হওয়ার যো টি নেই আমাদের শরীরে)। আবার এমনো মোটেই নয় যে যে একুশোর্ধ
এমন কি চল্লিশ -- পঞ্চাশ, বা ষাটোর্ধ এমনকি সত্তরোর্ধ বয়সেও বা বলাভালো মৃত্যু পর্যন্ত ই এই হরমোন গুলি দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে না আদৌ।

 

আবার, অপরদিকে চিকিৎসা র উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আঞ্জিওপ্লাস্টি এবং উন্নতমানের বাইপাস সার্জারি র সঙ্গে, মানুষের আয়ুরেখা বা আয়ুষ্কাল বেড়েছে অনেকটাই, কিন্তু স্টাটিন গ্রহণে কি বা মোক্ষলাভ হোল এতদ্বারা। অনেক টাকা বেশী খরচ হওয়া ছাড়া!!!
কিন্তু হায় লাভের কড়ি কে বা হারাতে চায়। তাই কয়েকজন তন্নিষ্ঠ চিকিৎসক কে স্বপক্ষে এখনো বলে আর লিখে যেতে হচ্ছে।


এটা অনস্বীকার্য যে আমাদের শৈশবের ফিনাইলবুটাজোন, অক্সিফেনবুটাজোন, রেসের্পিন, বড় শিশির নানা উজ্জ্বল রঙা টনিক, বি কম্পলেক্স ভিটামিন ক্যাপসুলের বাড়াবাড়ি এখন যেমন প্রায় ইতিহাস হয়েছে আজ,স্টাটিনের কপালেও তাই ই নাচছে, সময় টা শুধু আজ অথবা কাল অথবা পরশু।।

_______________________________
লেখক ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় । কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক । কবি।

Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC)

আপনার মতামত দিন:


ফার্মাসিউটিক্যালস এর জনপ্রিয়