DR. AMINUL ISLAM
Published:2024-10-22 10:54:01 BdST
জরায়ুমুখ ক্যান্সারে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ হাজার নারী মারা যান
ডেস্ক
_______________
বাংলাদেশে প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যান। আর প্রতিবছর লাখে ১১ জন নারী এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সে হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার। জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ। তিনি এক কর্মশালায় এ তথ্য জানান ২১ অক্টোবর২০২৪।
এইচপিভি কী?
কর্মশালায় জানানো হয়, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) একটি যৌনবাহিত ভাইরাস। এটি জননাঙ্গে আঁচিল (ওয়ার্টস) ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। আজ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া শতাধিক ধরনের এইচপিভি ভাইরাসের মধ্যে প্রায় ১৩টি সেরোটাইপ ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। তার মধ্যে ১৬ এবং ১৮ সেরোটাইপ খুবই মারাত্মক, যা ৭০% জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। শতকরা ৯৯ ভাগ জরায়ুমুখ ক্যান্সার এইচপিভি ভাইরাস দ্বারা হয়।
এইচপিভি ছড়ায় যেভাবে
অনিরাপদ শারীরিক মিলনের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইচপিভি ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না। সাধারণত এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়া থেকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ১৫-২০ বছর সময় লাগে। তবে স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন নারীদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারে রূপ নিতে মাত্র ৫-১০ বছর সময় লাগে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত এবং দেহরসে এই ভাইরাস পাওয়া যায়।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ
কর্মশালায় জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো—
অতিরিক্ত সাদা স্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্তস্রাব, মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার পর পুনরায় রক্তপাত, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, শারীরিক মিলনের পর রক্তপাত ও কোমর/তলপেট/উরুতে ব্যথা।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অধিক ঝুঁকিতে যারা
বাল্যবিবাহ, ঘন ঘন সন্তান প্রসব, অনিরাপদ শারীরিক মিলন। একাধিক যৌনসঙ্গী, ধূমপায়ী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী (যেমন—এইডস রোগী) এবং যে সকল নারী প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন নন এবং সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের অথবা স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নেন না, তাদের এই ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
এইচপিভি টিকা পেতে নিবন্ধন যেভাবে
কর্মশালায় বলা হয়েছে, টিকা নেওয়ার জন্য https://vaxepi.gov.bd/registration ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তবে যাদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ নেই, তাদেরও বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত করে টিকা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শুরুতে এ কার্যক্রম সাতটি বিভাগের নির্দিষ্ট বয়সী ও নির্ধারিত শ্রেণীতে অধ্যয়নরত কিশোরীরা www.vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে টিকাকার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। পরে ওই কার্ড দেখিয়ে টিকার ডোজ গ্রহণ করা যাবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হালনাগাদ সুপারিশে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এক ডোজ টিকাই কার্যকর। এ ক্যান্সারে প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশকে টিকা, ৩৫ ও ৪৫ বছর বয়সে অন্তত দুবার স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা এবং ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে।
সম্প্রতি
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম’ প্রকল্পের আওতায় গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
ওদিকে
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে কিশোরীদের এ বছরও এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা বাদে দেশের সাত বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে বিনা মূল্যে এ টিকা দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টিকা ক্যাম্পেইন চলবে।
আপনার মতামত দিন: