Dr. Aminul Islam
Published:2024-08-29 12:51:59 BdST
হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরীর প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য এজেন্ডার ৫ পয়েন্ট
ডেস্ক
__________
বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং ব্র্যাকের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারপারসন ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী বাংলা দেশের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের জন্য এজেন্ডায় ৫ পয়েন্ট জানিয়েছেন ।
তাঁর ভাষায়,
" বাংলাদেশের জরাজীর্ণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে জাতি হিসেবে আমাদের কী কী করণীয়, সে ব্যাপারে আমাদের গুণীজন মোটামুটি একমত। এই এজেন্ডাকে মোটা দাগে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১. উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্থায়ী জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন স্থাপন করা, যার কাজ হবে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসুরক্ষা বা ইউএইচসি কর্মসূচি কীভাবে চালু করা যায়, তার রোডম্যাপ তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়নে নজরদারি করা।
২. স্বাস্থ্যব্যবস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে একটি ‘ন্যাশনাল হেলথ সিকিউরিটি অফিস’ স্থাপন করা, যার কাজ হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘পারচেজার’ ও ‘প্রোভাইডার’ ভূমিকাকে আলাদা বা বিযুক্ত করা এবং প্রোভাইডারদের নজরদারি করা।
৩. সুশাসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
৪. স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিনিয়োগ পর্যায়ক্রমে মোট জাতীয় আয়ের দুই ভাগে নিয়ে যাওয়া এবং বাজেটে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার অগ্রাধিকার বাড়ানো।
৫. মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণা কাজরত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা, মান ও নজরদারি বাড়ানো।"
তিনি এক নিবন্ধে বলেন,
দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটি নেতিবাচক দিক হলো বিনিয়োগ। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্য খাতে যে হারে বিনিয়োগ করে, তা বিশ্বে প্রায় সর্বনিম্ন। দেশের জাতীয় আয়ের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয় হয়। জাতি হিসেবে এটা দুর্ভাগ্যজনক। এই কিঞ্চিৎ বিনিয়োগ দিয়ে একটি আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা কল্পনা করা যায় না। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মানব উন্নয়ন খাতগুলো ছিল পতিত সরকারের সর্বনিম্ন অগ্রাধিকার। আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা। তারা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচকে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। সেই শ্রীলঙ্কা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জাতীয় আয়ের নিরিখে আমাদের চেয়ে প্রায় চার গুণ অধিক অর্থ ব্যয় করে। দেশে যে যৎসামান্য টাকা স্বাস্থ্য খাতে দেওয়া হয়, তাও আবার আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খরচ করতে পারে না। গত কয়েক বছরে পুরো বরাদ্দের ৮০ ভাগ বা আরও কম খরচ হয়েছে। এর একটা প্রধান কারণ হলো অপ্রতুল ধারণক্ষমতা। মন্ত্রণালয়ের সুষ্ঠুভাবে বাজেট প্রণয়ন, প্রস্তাব ও তহবিল ব্যবহারের দক্ষতার অভাব সর্বজনবিদিত। আরেকটা কারণ হলো, দূরদৃষ্টি বা ভিশনের অভাব। আমরা যদি একটি উন্নত জাতি হিসেবে পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশ করতে চাই, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কেমন হবে তার একটা দর্শন আমাদের স্বাস্থ্য পরিকল্পনাবিদদের মধ্যে থাকা উচিত এবং সে হিসেবেই বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। এক ‘চিন্তা-দৈন্য’ যেন আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে গ্রাস করে আছে।
যেসব উন্নয়নশীল দেশ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে, তাদের একটা মাপকাঠি হলো সেসব দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় বিনিয়োগ। বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা উপজেলা থেকে ইউনিয়ন এবং কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত ব্যাপৃত। প্রাথমিক স্তরকে উপেক্ষা করে নগরপ্রধান বড় বড় হাসপাতালভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা সামাজিক বৈষম্যকেই লালন করছে। আমাদের উচিত হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী রেফারেল সিস্টেম তৈরি করা, যার ফলে নগর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ অনেক কমে যাবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি বিশেষ সমস্যা হলো তার মানবসম্পদ। এখানে সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীর স্বল্পতা রয়েছে। ডাক্তার, নার্স বা মিডওয়াইফের সংখ্যা, বিশেষভাবে শেষোক্তদের, প্রয়োজনের তুলনায় অত্যল্প। এ সংকট কাটাতে বিগত কয়েকটি সরকার সরকারি ও বেসরকারি খাতে অনেক নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লাইসেন্স দিয়েছে। এগুলো মানবসম্পদ সংকট কাটাতে অবদান রাখছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এ ধরনের শত শত প্রতিষ্ঠানের গুণমান যাচাই এবং এদের মান জোরদারকল্পে তেমন কোনো কার্যকরী পন্থা চালু হয়নি। একইভাবে স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায়ও আমাদের নজর দিতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ বাংলাদেশের ৫০ বছর পালন উপলক্ষে একটি দীর্ঘ গবেষণাভিত্তিক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশ কীভাবে তার প্রতিবেশীদের চেয়ে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে রয়েছে। এ গবেষণায় প্রাপ্ত একটি বিষয় অবশ্য অনেককেই আশাহত করেছে। স্বাস্থ্য গবেষণার ক্ষেত্রে পূর্বে যদিও বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে ছিল কিন্তু গত কয়েক বছরে পাকিস্তান আমাদের পেছনে ফেলে এসেছে।
২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন দলিলপত্রে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা বা ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি) অর্জনে তৎকালীন সরকারের অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছিল। দুঃখজনক হলো, এটা কীভাবে অর্জিত হবে, এর জন্য বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসবে তার কোনো রোডম্যাপ কেউ কোনো দিন বলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি।"
আপনার মতামত দিন: