Ameen Qudir
Published:2017-02-28 02:42:13 BdST
বর্বরতার সব সীমা ক্রস করা দুটি ঘটনার কথা বলি
ডা.শিরিন সাবিহা তন্বী
__________________________
ঘটনা এক .
স্বামীর ভাষ্যমতে স্ত্রী তার ছ মাসের মেয়ে সন্তানকে ফেলে চলে গেছে।মেয়েকে রেখে উনি গেছেন শহরে রোজগার করতে।মেয়েটি দাদা বাড়ীতে বৃদ্ধ দাদা দাদীর কাছে বড় হচ্ছিল চরম অযত্নে।ফুফু এলে তার সাথে ফুফুর বাড়ীতে বেড়াতে গেল।ফুফু কাজ করতে গেলে ফুফুর পাশের বাসায় মানুষ রুপী এক পৌঢ় কুকুর পানি খাবার কথা বলে জোরপূর্বক ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানি করে আট বছরের ছোট্ট মেয়েটির।আহত শরীর আর শতচ্ছিন্ন মন নিয়ে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত এই শিশুটির ভবিষ্যৎ কি?
ঘটনা দুই .
বিয়ের মাস কয়েক পরই সন্তান সম্ভবা বউকে ফেলে পালিয়ে গেছে স্বামী।অনেক কষ্টে ঐ অবস্থায় লোকের বাড়ী কাজ করে পেটের ভাত জুটিয়ে তার কন্যাকে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখাল মা।মেয়ের মুখে অন্ন দিতে দিন রাত কঠোর পরিশ্রমের জীবন।পরিচয় হয় এক পুরুষের সাথে।
এত শারিরীক মানসিক চাপের বোঝা কমাতে ঘর বাঁধল ওরা।পাঁচ বছরের মেয়ের পর নতুন সংসারে ছেলেও আসল।এই এক বছরে বিয়ের সাধ জন্মের মত মিটেছে।তার পাষন্ড স্বামী মেয়েকে কিছুতেই তার ঘরে থাকতে দিবে না।ঘর থেকে নামানোর কৌশলটা বর্বরতায় সব সীমা ক্রস করেছে।ঐটুকু মেয়ে যে নিজের বাবাকে দেখেইনি,সে যাকে বাবা বলে ডাকে সেই পশু তার মায়ের সামনে তার শরীরের প্রাইভেট অংশ গুলোকে নানা নোংরা উপায়ে ক্ষত বিক্ষত করে।
পাঁচ বছরের অভাগা বাল্যকাল আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে।দিনরাত কাঁদে।মা কাঁদে।হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যন্ত্রনায় কাতরায় মেয়েটি।স্টেপ বাবা ঘরে উঠতে দেবে না।এই পশু ভর্তি দুনিয়াতে ঐ মেয়েকে ঘর থেকে বের করে কোথায় পাঠাবে ওর মা???
দুটো ঘটনার শিকার বাচ্চা মেয়ে দুটি ই আমার মনে এমন গভীর ক্ষতের জন্ম দিয়েছে!নিম্নবিত্ত অশিক্ষিত পরিবারের সাথে সাথে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারে ও ক্রমেই বাড়ছে এমন চরম স্বার্থপর দায়িত্বহীন বাবা মায়ের সংখ্যা।
দুজনের চাওয়ায় যে নিষ্পাপ শিশু পৃথিবীর আলোয় চোখ খুলে,একজন তার দায়িত্ব থেকে পালিয়ে গেলে দ্বিগুন না চারগুন পরিশ্রম করতে হয় একাকী পেরেন্টিং এ।একজনকেই সন্তান লালন,তার মৌলিক চাহিদা পূরন -খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা,চিকিৎসা,তার বিনোদন,খেলা,শারিরীক মানসিক বর্ধন!
এই কাজগুলো করতে করতে একক পিতা বা মাতাকে হতে হবে প্রচন্ড আত্মপ্রতয়ী এবং সাহসী।আপনার কষ্ট হবে!বার বার মানসিক শক্তি হারাবেন হয়ত আপনি।তবু জেগে উঠবেন।
সন্তানের জন্য যতটা না ত্যাগ,তার থেকে বেশী বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করুন।
পিতা মাতার একজন ছেড়ে গেলে বা দায়িত্বহীন হলেই সন্তানটিকে যেন আপনার অবহেলায় বা স্বার্থপরতায় জীবনের চরম মূল্য দিতে না হয়।আর দিতে হলে সবাই ক্ষমা করলেও আপনি নিজে কি পারবেন নিজেকে ক্ষমা করতে????
_______________________
ডা.শিরিন সাবিহা তন্বী । দেশের জনপ্রিয় কলামিস্ট। প্রতিভাবান কথাশিল্পী। মেডিকেল অফিসার, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। পেশাজীবী নেতা।
আপনার মতামত দিন: