ডা শাহাদাত হোসেন
Published:2022-09-20 04:00:51 BdST
ইরানি তরুণী মাআশা-কে বর্বর হত্যা:বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যেভাবে দেখছেন
ডেস্ক
________________
ইরানি তরুণী মাআশা-র নির্মম ও বর্বর হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অগ্রসর চিকিৎসকরা কলম ধরেছেন।
বিশিষ্ট চিকিৎসক ও লেখক ডা. আহমেদ লিংকন লিখেছেন ,
মাআশা মেয়েটার হিজাব পরাই ছিল। কিন্তু ইরানের শরিয়া পুলিশের মতে সেটা ঠিকঠাক পরা ছিলনা। তাই তাকে গ্রেফতার করে সঠিক হিজাব পরা শিখাচ্ছিল ইরানের শরিয়া পুলিশ। শেখানোর মাত্রা বেশি হওয়াতে সে কোমায় চলে যায় এবং হাসপাতালে তাকে ব্রেইন ডেড ঘোষণা করা হয়।
এখন কেরালার মুসকানের ঘটনায় 'পোষাক যার যার চয়েস' বলে গলা ফাটানো লোকজনকে হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
আপনি যাই পরেন যেটাই করেন তা হওয়া চাই মোরাল পুলিশদের মন মতো। নইলে হিজাব পরেও আপনি রক্ষা পাবেন না। আর মুসলমান হলেও আপনাকে তাদের পছন্দের মুসলমান হতে হবে। এই জন্য তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার পর ও আফগানিস্তানে মসজিদে মসজিদে বোমা মারা হচ্ছে, মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে।
এই যে এইসব অন্যায়ের, মানুষের ব্যাক্তি স্বাধীনতা, বিশ্বাস আর চিন্তার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ, হামলা, মোরাল পুলিশিং এর প্রতিবাদে এখনই যদি আপনি না দাঁড়ান, আপনি অবশ্যই তাদের হাতে নিরাপদ না। কারন আপনি তাদের হিসাবে ঠিকঠাক আছেন কিনা, সেটা আপনি জানেন না।
হিজাব পরা যদি আপনার চয়েস হয়, তা না পরাও কিন্তু আরেকজনের চয়েস। আমি যেমন আপনার চয়েসের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, আপনার ও অন্যের পছন্দের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতে হবে। সেটা যদি আপনি না করেন তাহলে অবশ্যই আপনি একজন ইতর ও নিরেট ভন্ড।
এদিকে বাংলাদেশে কি ঘটছে? ঢাবিতে একদল অকালকুষ্মাণ্ড দাঁড়িয়েছে বোরখা হিজাবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম ঘোষনার দাবিতে!!
মাআশার মৃত্যুর পর ইরানী নারীরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকাশ্যে হিজাব খুলে বিক্ষোভ করছেন, চুল কেটে হিজাবে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ধর্মের নামে মানুষকে নির্যাতন করলে একসময় না একসময় মানুষপ্রতিরোধ করে! আজ সউদি আরব ও বিশ্বে নিজের সন্মান বৃদ্ধির জন্য নারীদের দাবিয়ে রাখা থেকে বের হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের ছবিটা দেখেন। ইরানে যে গোষ্ঠী শরীয়াহ আইনের নরক কায়েম করে রেখেছে, এখানেও সেই একই নরক কায়েমের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। এই জন্য তারা ভর করেছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আঁতুড়ঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাড়ে। স্রেফ বোরখা-নিকাব ছাড়া বাকি সকল পোশাককে অশালীন ও ছোট পোশাক হিসেবে প্রচারের পরবর্তী ধাপ হিসেবে বোরখা-নিকাবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোশাক হিসেবে ঘোষণার দাবী করার স্পর্ধা দেখিয়েছে। এই এরাই যখন বোরখা নিয়ে কথা উঠে, বলে যে পোষাক যার যার চয়েস। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া গবেষনা দক্ষ জনশক্তি গঠন নিয়ে এদের মাথাব্যাথা নাই, এরা আছে বোরকা নিয়ে।
আসলে এদেশে এক যুগ তালেবানী শাসন দরকার যাতে এদের পাছার চামড়া উঠিয়ে ফেলে। তালেবাবেরা কিন্তু অন্য মৌলবাদী ইসলামী দলগুলাকে বিনাশ করছে। এখন আইএস এর সাথে তাদের লড়াই চলছে। তালেবানদের মতে কিন্তু এই দানব বন্ধনের লোকদের পোষাক ও ছহি না।
এবার আমাদের অপরাজেয় বাঘিনীদের দেখুন। দেখুন তাদের আত্মপ্রত্যয় আর কমিটমেন্ট। নারীদের ফুটবল খেলার বিরুদ্ধে তৌহিদি জনতার বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে এই কয়েক বছর আগেও, আজকে আমাদের বাঘিনীরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছে গেছে অপরাজিত দল হিসেবে, হারিয়েছে ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ভুটানের মত দলকে। আজকের ফাইনালে তারা জিতুক বা না জিতুক, উগ্র ধর্মান্ধ মৌলবাদী অপশক্তির গালে তারা নিশ্চিত চপেটাঘাত করেছে।
চপেটাঘাত চলতে থাকুক অন্ধকার, অন্ধত্ব আর কুশিক্ষার গালে।
ক্ষুব্ধ লেখক সঙ্গীতশিল্পী রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন , আপনারা যারা শালীনতার পাহারাদার, যারা নারীর পোশাক ঠিক করে দিতে চান, তাদের জন্য এই মৃতমুখ উপহার দিলাম।
এই ইরানি মেয়েটির নাম মাহসা আমিনি। বাইশ বছরের মেয়েটির চুল খোলা ছিল বলে, হিজাব যথেষ্ট হয়নি বলে একে পিটিয়ে মেরেছে ইরানের 'মোরালিটি পুলিশ'।
আমি বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের মুখে ইরানি মোরালিটি পুলিশের মুখ দেখতে পাই।
ইরানে আজ মাহসার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হিজাব খুলে প্রতিবাদ করেছে অনেক নারী। এটা হয়ত কেবলই শুরু।
আপনার মতামত দিন: