Razik hasan
Published:2021-11-16 19:11:57 BdST
ফরেনসিক মেডিসিন ২৫ বছর অপেক্ষায় ছিল প্রমাণ,অতঃপর ধর্ষণ মামলার অপরাধীর ফাঁসি হল
লেখক
রাজিক হাসান
লন্ডন থেকে
_______________
সন ১৯৭৮, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি সুন্দর সকাল। প্রত্যুষের সব নির্মলতাকে ম্লান করে দিল একটি নির্মমতা।
একটি সুন্দরী মেয়েকে ধর্ষিত ও মৃত অবস্থায় পাওয়া গেলো তার শোয়ার ঘরে। হত্যাকারী ঘরে এসে তাকে খুন করে চলে গেছে। সারা অঞ্চল এই ঘটনায় তোলপাড় হয়ে গেল। কে? কে করল এমন কাজ? মেয়েটি ছিল খুবই ভাল, হাসিখুশী, সুন্দরী। বিউটি কনটেস্টে প্রাইজ জিতেছে। তার এমন পরিনতি? পুলিশ খুনীকে খুঁজে বের করার জন্য উঠে পড়ে লাগল। কিন্তু কোথাও কোন সূত্র পেল না। মেয়েটির মা, বোন ও পরিবারের অন্যান্যদের জিজ্ঞাসা করা হলো মেয়েটির কোন শত্রু আছে কি না। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারল না।
মেয়েটি কর্মসূত্রে নিজের পরিবার থেকে দূরে একা থাকত। তার একজন বয়ফ্রেন্ড ছিল। সে নিয়মিত মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে আসত। মেয়েটির মৃত্যুর দিনও সে সন্ধ্যায় এসেছিল।
মেয়েটির পাশের বাড়িতে থাকত একটি কালো যুবক। পুলিশ তাকে এবং বয়ফ্রেন্ডকে নানা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করল। মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড বলল সে ওই কালো যুবককে সন্দেহ করে। কারণ মেয়েটি তাকে বলেছিল সেই যুবক না কি মেয়েটিকে মাঝে মাঝে বিরক্ত করে। কালো যুবকটি এই অভিযোগ অস্বীকার করে। সে বলল, "হ্যাঁ আমি মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করতাম। বলতাম, হাই আমার দিকেও একটু দেখ, আমি খুব খারাপ মানুষ নই। নিছকই মজা করার জন্য। এমন কাজ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। বরং মৃত্যুর আগে ওর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গেই ওর শেষ দেখা হয়েছিল।"
এর পর পুলিশ ওই দুই যুবককেই সন্দেহের তালিকায় রাখে কিন্তু কোন প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারে না। অপরাধী খুবই চতুর। মেয়েটির নখে অপরাধীর মাংস ও চামড়া লেগেছিল। তার নমুনা পুলিশ সংগ্রহ করেছিল, কিন্তু এর দ্বারা অপরাধীকে ধরার মত উন্নত টেকনোলজি তখনও আবিষ্কার হয় নি। কিন্তু ওই নখে লেগে থাকা ওই নমুনা তারা সংরক্ষিত করে রেখেছিল।
এর পর ২৫ বছর কেটে গেছে। ডি এন এ ম্যাচ করার টেকনোলজি আবিষ্কৃত হয়েছে। পুলিশ ওই দুই যুবককে খুঁজে বের করে তাদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করল। পরীক্ষার পর কালো যুবকের সঙ্গেই ডি এন এ ম্যাচ করল। এরপর তাকে অ্যারেস্ট করা হয় এবং ২০০৪ সালে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। (সূত্র আইডি চ্যানেল)
২০২১ সালে আমাদের দেশের চেহারা? মধ্যযুগকেও হার মানিয়েছে; অপরাধ প্রমাণ করার উন্নত প্রযুক্তি হাতের নাগালে থাকলেও আদালত যুক্তি দেখিয়েছে -
১. ৩৮ দিন পর কেন মামলা হলো?
২. মেডিক্যাল রিপোর্টে আলামত নেই অর্থাৎ ধর্ষণও নেই। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে।
৩. রিমান্ডের আসামীর স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী গ্রহনযোগ্য নয়।
৪. কোর্টের মূল্যবান ৯৪ দিন কেন নষ্ট হলো?
৫. ৭২ ঘন্টা পর পুলিশ যেন কোন ধর্ষণের মামলা না নেয়।
আমরা কি এমন আদালত চেয়েছিলাম? আশ্চর্যের বিষয় হল বিচারক ও সরকারী প্রসিকিউটর দু'জনই নারী। মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় সেই নারী হুজুরের বিচারিক ক্ষমতা আপাতত মুলতবি করেছেন। আইনমন্ত্রী মহোদয়ও এই মুলতবিকে স্বাগত জানিয়েছেন। এখন দেখার পালা, কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।
আপনার মতামত দিন: