Ameen Qudir
Published:2017-02-08 23:44:49 BdST
সকল চরিত্র কাল্পনিক
ডা. রাজীব দে সরকার
_____________________________
হঠাৎ করেই প্রচন্ড কোমর ব্যাথা শুরু হলো গণেশ পাল বাবুর। ব্যাথা সহ্যই করা যাচ্ছে না। মালিশ করালেন মেয়ে মৃত্তিকাকে দিয়ে। গরম স্যাক নিলেন। কাজ হলো না।
ফোন দিলেন স্কুল শিক্ষক অনুজ মিলন বেপারীকে। মিলন সাহেব সব শুনে বললেন, না দাদা, আর দেরী না। এক্ষুনি একটা এক্সরে করেন বুক, পিঠ আর কোমরের। গণেশ বাবু একখানি চকচকে এক্সরে করে আনলেন।
মিলনকে দেখালেন বাড়ীতে ডেকে। গভীর মনোযোগ দিয়ে এক্সরে হাতে নিয়ে উপরে তুলে ধরে মিলন সাহেব দেখতে শুরু করলেন। উলটে পালটে লাইটে ধরে ৫/৭ মিনিট ধরে দেখলেন তিনি।
- "দাদা, হাড় মনে হয় বেঁকেছে বা ক্ষয়ে গেছে। আমার ফরিদা মামীর এই রোগ হয়েছিলো। একাই সেরে যায় ঔষধ লাগে না।"
মিলনের কথায় বেশ সস্তি পেলেন গণেশ বাবু। অল্প অল্প ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা করলেন।
কিন্তু ব্যাথা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। মেয়ে বললো, বাবা ডাক্তার দেখাও।
গণেশ বাবু কী যেন একটা ভাবলেন। ফোন দিলেন তার 'বিশেষ' বন্ধু সিকদার মেডিকেল হল এর কর্ণধার আজু সিকদার সাহেবকে।
আজু সিকদার সাহেব এর সকল বিষয়েই অগাধ জ্ঞান। ছোটবেলা থেকে শুধু পড়াশোনাটা হয়নি। হঠাৎ করেই একদিন একটা আরএমপি সার্টিফিকেট জোগাড় করে ফেললেন। সস্তাতেই পেয়ে গেলেন।
যাই হোক, আজু সাহেব এখন এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তি। সুন্নাতে খাৎনা থেকে নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন সকল বিষয়েই তিনি পারদর্শিতা দেখানোর চেষ্টা করেন। অল ইন ওয়ান সার্ভিস - মানুষও খুশি।
- আজু, শুনছো, কোমর ব্যাথাটা তো বাড়লো। কী করি বলো তো?
- আরে দাদা, আমি ওষুধ পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আজু সাহেব ঔষধ পাঠালেন। দুই পিস অ্যান্টিবায়োটিক, দশ পিস গ্যাসের বড়ি, দশ পিস ব্যাথার বড়ি আর এক কৌটা দামী ক্যালসিয়াম। মোট ৭১০ টাকার ঔষধ।
ঔষধ খেতে শুরু করলেন গণেশ বাবু।
এর মধ্যে কখনো ভাতিজা ইভানের কথায় অর্জুনের গাছের ছাল ভর্তা করে আতপ চালের ভাতের সাথে খেলেন। মুদি দোকানী শামীম একটা পাকাকলা পোড়া এনে দিলেন নিজাম সাধুর কাছ থেকে। সেটাও খেলেন তিনি। কোমর ব্যাথার কিছু হোক না হোক, পেট নরম থেকে তরল, তরল থেকে অতি তরল হলো।
গণেশ বাবু এখন প্রায় শয্যাশায়ী। আর উপায় নেই। এখন ডাক্তার দেখানো খুব দরকার। ডাক্তার মানে বড় ডাক্তার, অরিজিনাল ডাক্তার। অর্থোপেডিকস এর এক বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেন।
তিনি সব শুনে, কোমরে একটা বেল্ট পড়তে বললেন। আর দিলেন প্যারাসিটামল ট্যাবলেট। ভিজিট নিলেন ১০০০ টাকা। সময় দিলেন ২/৩ মিনিট।
মাত্র ২ মিনিটে ১০০০ টাকা মানতেই পারছিলেন না গণেশ বাবু। বাড়ি ফিরে এলেন। আলাপ করলেন আজু সিকদারের সাথে। অর্থোপেডিকস এর ডাক্তার হোক, আর যাই হোক, আজুর কাছে না শুনে কোন ঔষধ খান না বিচক্ষণ গণেশ পাল।
আজু সাহেব সুস্পষ্ট ভাবে বলে দিলেন, দাদা, বেল্ট পড়লে কোন লাভ হবে না। আরে বেল্ট তো সিজার করার পরে মহিলাদের পড়ানো হয়।
গণেশ বাবুও ভাবলেন, ঠিকই তো। শালার ডাক্তার এতো বড় বোকা বানালো তাকে। যথারীতি সিকদার মেডিকেল হল এর ঔষধ খেয়ে চললেন গণেশ বাবু।
এভাবে ২ মাস গেলো। গণেশ বাবু এক পায়ে জোর কম পাচ্ছেন। দুর্বল লাগে একটা পা। কিন্তু সুখের কথা হচ্ছে ব্যাথাটা একটু কমেছে।
ব্যাপারটা আলাপ করলেন সাংবাদিক রাব্বানী আর সাংবাদিক নুরু মিয়ার সাথে। দুজনেই স্পষ্ট জানালেন,
- দাদা, ভারতে চলে যান। আমাদের ডাক্তাররা আবার ট্রিটমেন্ট পারে নাকি। বাংলাদেশের ডাক্তাররা চিকিৎসার নামে ব্যবসা করে।
দেরী করলেন না গণেশ বাবু। ভারতে চলে গেলেন।
বড় হাসপাতাল, বড় ব্যাপার স্যাপার। ৩ জন ডাক্তার দেখলেন গণেশ বাবুকে। এক ঘন্টা করে সময় দিলেন। গল্প করলেন। গণেশ দার শ্বশুরবাড়ি কোথায়, মৃত্তিকা কী নিয়ে পড়াশোনা করে, মৃত্তিকার বিয়ে কবে দেবেন, দেশের কথা, ক্ষেতের কথা - সব কিছু নিয়ে গল্প হলো। কি দারুন ব্যবহার। সিস্টাররা যেমন সুন্দর দেখতে, তেমন সুন্দর কথা বলে।
ডাক্তাররা বললেন,
- দেখুন আপনার সব কথাই তো শুনলাম। কিন্তু বাংলাদেশে আপনি যা ঔষধ খেয়েছেন সব ভুল ছিলো (গণেশ বাবু বেমালুম ভুলেই গেলেন, ওষুধ খেতে দিয়েছিলেন বড় ডাক্তার আজু সিকদার)। আপাততঃ নিউরো সার্জারীর একটা অপারেশন করাতে হবে। আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হবে। বাংলাদেশের ডাক্তাররা যদি আপনাকে মাত্র ২ মাস একটা বেল্ট পড়তে দিতো, এই ভোগান্তি আর হতো না।
আর কোন কথা কান দিয়ে ঢুকছে না গণেশ বাবুর।
তার মাথায় শুধু এখন আড়াই লক্ষ টাকা ঘুরছে।
"শালা বাংলাদেশের ডাক্তাররা তার কী ক্ষতিটাই না করলো !!"
_____________________________
ডা. রাজীব দে সরকার
বিশেষ কর্মকর্তা, কো-অর্ডিনেশন সেল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ
আপনার মতামত দিন: