ডেস্ক

Published:
2021-04-20 17:00:52 BdST

সন্তানের প্রচন্ড জ্বর ,ডাক্তার আপু ডিগ্রী ও শিক্ষার জন্য সংগ্রাম করছিল একাকী এই নগরে...


 

ফাইল প্রতীক ছবি 

 


ডা সালেহ মুনীর রাজী
-----------------------------------

একজন স্পেশালিষ্ট সিনিয়র ম্যাডাম হেনস্তা হয়েছেন, গালি দিয়েছেন তাই জাতি বিভক্ত।
সবাই জাজমেন্ট শুনাচ্ছেন। আচ্ছা, কয়েকজন আপু এবং ম্যাডাম এর গল্প শুনাই। ইনারা সবাই জীবন্ত চরিত্র এবং প্রায় সবাই আমার ফেসবুকে কানেক্টেড ।
---
১.
তখন থার্ড ইয়ার ই হবে। পরীক্ষার আগে আগে তুমুল পড়াশুনা চলছে। আমি দুপুর এর খাবার খেতে বের হয়েছি। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে সন্ধ্যায় ব্যাক করব। হঠাৎ এক কোণায় দেখি এক আপু দুপুরের লাঞ্চ করছে। এক প্যাকেট এনার্জি প্যাক বিস্কিট। আপু গাইনীর কোন এক কোর্সে ছিল ;বরিশাল এর দিকে হবে বাড়ি। সেই আপুর সাথে কয়েকদিন পর রাতে দেখা। এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলছে। কোলে বাচ্চা। আমাকে বলল, তোদের এখানে শিশু ডাক্তার ভাল হবে রে। আমি বললাম। বাবুর চোখ মুখ লাল। প্রচন্ড জ্বর ছিল। আপু ডিগ্রী কিংবা সংগ্রাম করছিল একাকী এই নগরে...
২.
এই ঘটনা আমি বলতে চাই না। মনেও করতে চাই না। শুধু এতটুকু বলি এক আপু তার একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছেন এই নগরীতে ওয়ার্ড-পড়াশুনা -পরিবার ব্যালেন্স এর নিরন্তর সংগ্রামে। জীবনের সব রঙ এক মূহুর্তে ছাই হয়ে যাবার দুঃসহ মূহুর্তের সাক্ষাৎ সাক্ষী! কি যাতনা!
৩.
ব্যস্ততম নগরীর পাবলিক বাসে ঝোলা ব্যাপার না। কিন্তু দুশো টাকার সস্তা জামা গায়ে এক হাতে তিন মাসের বাচ্চা আর আরেক হাতে ঝোলাঝুলি বেশ কষ্টের। সেও এফসিপিএস এর পুরো চার বছর ট্রেনিং...
এই গল্প আমার কলিগ এর বড় বোনের। এখন জুনিয়র কন্সাল্ট্যান্ট। আচ্ছা উনি কি হাজার টাকা ভিজিট নিলে কি খুব ক্ষতি হবে!

৪.
এক তপ্ত রোজার দিনে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ম বর্ষের পোলাপান বিরাট গল্প চিল্লাচিল্লি করছে। ম্যাডাম এর ক্লাস নিতে আসেন নাই৷ ম্যাডাম ক্লাস নিতে এলো ১২ টার পর.. কারণ সেহরির পর ম্যাডাম কে একবার জরুরি ওটি তে আসতে হয়েছে। ৬ টার দিকে ওটি শেষ করে আবার ১২ টার দিকে পোলাপান এর আইটেম নেয়ার কোন মানে ছিল কি? একদিন ক্লাস না হলে কি আসে যায়, ভার্সিটিতে তো হর হামেশাই তা হয়।
৫.
এই গল্প একই ওয়ার্ডেরই। এক বছর পরের রোজার৷ আমি ইন্টার্ন। যথারীতি পেশেন্ট খারাপ, আমাদের একজন সিনিয়র রেসিডেন্ট এলেন রেসকিউ সার্জন হিসেবে। দেড় দু ঘন্টায় সব ম্যানেজ করে রাত দুটার সময় উনি যাচ্ছেন গিয়ে সেহরির ভাত রান্না চড়াবেন! আহারে জীবন!!
৬.
এই বারের গল্প একজন এসোসিয়েট প্রফেসর স্যার এর। উনি ভাবলেন আজ তাড়াতাড়ি ছাড়া পাওয়া গেল চেম্বার থেকে ,বাসায় সময় দেয়া যাবে। বাসায় যেতেই এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ম্যাডাম দৌড়াচ্ছেন। প্রাইভেট হাসপাতালে না, রামেকে। বলল, মিড লেভেল ফোন দিল, হেল্প লাগবে। স্যার এর ভাষ্যমতে, খেলাম। ঘুমায় গেলাম। তোমাদের ম্যাডাম কখন আসলো, কে দরজা খুলল টেরই পাই নি।
এমন হওয়ার কথা ছিল কি!
-----
আরো লেখা যাবে । স্পেশালিষ্ট হবার সংগ্রামের আমাদের নারী চিকিৎসকদের প্রতিদিনকার রোজনামচা! এনার্জি প্লাস বিস্কুট, বাসে ঝোলাঝুলি, ক্যারিয়ার এবং রঙিন যৌবন এর ধূসর হওয়া... সমস্যা এটা না, সমস্যা হল, দুপুর বেলা ভরপেট ভাত খেয়ে, হাজবেন্ডে/ ওয়াইফ সাথে ন্যাকা ঝগড়া করে, দু ছিলিম পান মুখে দিয়ে পিচ করে পিক ফেলার মত অশুদ্ধ বাংলিশ এ ডাক্তার দের লাইফ স্টাইল কে জা'জ করতে যাওয়া যার সম্পর্কে কোন আইডিয়াই নাই বা সমান যোগ্যতাও নাই .....
----
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক!

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়