DR. KAZAL DAS

Published:
2020-12-05 01:07:55 BdST

ডা. কথা ৪ বছর ধরে কোমায় : তাকে 'না জানিয়ে' স্বামী কমল চলে গেলেন পরপারে


ডা.কাজল দাস
_______________________

দু:খ লুকিয়ে থাকে শোকের গভীরে। কবির কথা। সেই কথাই মনে পড়ল বগুড়া মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ডা. কথা ও কমল লোদীর জীবনের মর্মান্তিক ট্রাজেডিতে। কথা ও কমল আমাদের অমর বন্ধু । কমলের সঙ্গে ডা. কথার বিয়ের পর তারা চলে যায় ওমানে। সেখানে কপোত কপোতীর সংসার অনাবিল সুখে চলছিল। হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনা সব তছনছ করে দেয়। ২০১৬ সালে ওমানে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় কথা ও কমল গুরুতর আহত হয়। ডা. কথা সেই থেকে কমায় চলে গিয়ে চিকিৎসাধীন।
এরই মাঝে আজ শুক্রবার চিরতরে ডা. কথাকে ফাঁকি দিয়ে কমল চিরতরে চলে গেল ওপারে।

বগুড়া মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী ডা. এ্যানি নতুনা দেওয়ান কথা' র স্বামী কমল লোদী আজ শুক্রবার মৃত্যু বরণ করেছেন।

অঞ্জন বিশ্বাস কাব্য ২০১৬ সালে জানিয়েছিলেন সেই দু:খজনক কাহিনি।
·
Dr. Anne Natuna Dewan ( kotha) ...1st batch of Bogra medical college, was severely injured in a car accident in Oman on 29,December 2016. Now she is in coma with multiple rib fracture,lumber spine fracture,multiple pelvic fracture with haemopneumothorax. Her husband also injured in the accident .

কমল লোদী লড়াই করেছেন অবিরাম । বাঁচতে চেয়েছেন। কিন্তু মর্মান্তিক মৃত্যু কেড়ে নিল তাকে।

ডা. শাহানা পারভিন পলি এক ফেসবুক মন্তব্যে জানান, ওদের বিয়ে হয়েছে ছাত্রজীবনে। পাশ করার পর কয়েকবছর কথা স্কয়ার হাসপাতালে চাকুরি করেছে। তারপর ওমানে গিয়েছে।

 

কমল লোদী সম্পর্কে সাংবাদিক রাবউল ইসলাম খান  ফেসবুকে জানান,

 

 আমার অত্যন্ত সুসম্পর্কের বন্ধু কমলের বাইক এক্সিডেন্ট-এ মৃত্যু সংবাদটি শোকাবহ । ৪ ডিসেম্বর ২০২০) বেলা ১২টার দিকে রেডিও-আগারগাঁও এলাকায় লোদী তার মেয়ের একটা এসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য বাইক নিয়ে যাচ্ছিল। পেছন থেকে কাভার্ড ভ্যান তাকে ধাক্কা দেয়। সোহরাওয়ার্দীতে নেওয়ার আগেই সে মারা গিয়েছে। 

ঘটনা।
কমলের স্ত্রী ঢাকার স্কয়ার হসপিটালের ডাক্তার ছিলেন। ওমান সরকারের আমন্ত্রণে এবং সেখানে সরকারি হসপিটালে সুযোগ পাওয়ার পর, দুজনই ওমান চলে যান। কমল অত্যন্ত মেধাবী ছেলে। তার ওখানে ব্যাবসা ছিল।
চার বছর আগের কথা। স্ত্রীকে অফিসে নামিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছিল সে। রাস্তায় মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়। গাড়ি পুরো দুমড়ে-মুচড়ে যায়। কমল এবং তার স্ত্রী উভয়েই অজ্ঞান হয়ে যান।

এরপর কমলের জ্ঞান ফিরেছিল কিন্তু তার স্ত্রীর আর জ্ঞান ফেরেনি। তার স্ত্রী মারা যাননি, কোমায় চলে গিয়েছেন। তিনি শুধু বেঁচে আছেন, শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসটা চালু আছে! আর কোনো জ্ঞান নেই! ওমান সরকার বাংলাদেশের এই কৃতী চিকিৎসকের সুস্থতার জন্য বড়ো বড়ো চিকিৎসকদের বোর্ড বসিয়ে একাধিকবার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। তার স্ত্রীর জ্ঞান ফেরেনি।

এই অবস্থায় আমার বন্ধু কমল, তার ব্যাবসা, তার ব্যক্তিগত কাজ, তার অন্য আত্মীয়-স্বজনকে সময় দেওয়া, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সময় কাটানো, সবকিছুর পাট চুকিয়ে, সব কিছু বিসর্জন দিয়ে, তার স্ত্রীর সেবায় নিয়োজিত ছিল।
কোমায় থাকা স্ত্রীকে সময়মতো ওষুধ খাইয়ে দেওয়া, লিকুইড খাবার দেওয়া, বিছানা পাল্টিয়ে দেওয়া, অজ্ঞান অবস্থাতেও বাড়তি কোনো জটিলতা দেখা দিলে সেটার আলাদা যত্ন নেওয়া, অর্থাৎ সার্বক্ষণিকভাবে স্ত্রীর কাছে থেকে যা যা করা দরকার, সেই মহান কাজটিই কমল করে যাচ্ছিল। কারণ, তাকে সেবা দেওয়ার মতো আর কেউ নেই। একমাত্র মেয়েটি ছোটো।
এভাবেই দেড় বছর ওমানে থাকার পর তাঁরা দেশে ফিরে এসেছে আরও আড়াই বছর আগে। দেশে ফিরে এসেও কমল কোনো চাকরি বা ব্যাবসার সাথে যুক্ত হয়নি, শুধু স্ত্রীকে সময় দেওয়ার জন্য। গত বছর আমি যখন নাজমুল হক শামীমের সাথে শেওড়াপাড়ায় কমলের বাসায় গেলাম, তখন তাঁর অচেতন স্ত্রীকে একনজর দেখে এসেছিলাম। স্ত্রীর জন্য নিজেকে এমন উৎসর্গ করে দেওয়া মানুষ আমার দেখা আর কেউ নেই।

সেবা দিয়ে যাওয়া মানুষটিই আজ চলে গেল! শেওড়াপাড়ার বাসায় অচেতন পড়ে আছেন তাঁর স্ত্রী! 

 

 

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়