Dr. Aminul Islam

Published:
2020-10-10 19:08:33 BdST

সোনার হরিণ"সিভিল সার্জন স্যার এসে আমাদের দুইজনকে লাল কালি দিয়ে এবসেন্ট করে চলে গেছেন!"


 


ডাঃ সুকুমার সুর রায়


(উনবিংশতম - পর্ব) /প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।
---------------------------------------------------------
৯১ সালে চতুর্থ কর্মস্থল রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে চাকরি করতাম।
রাজশাহী শহরের রামচন্দ্রপুরের ভাড়া বাসায় থাকতাম।
প্রতিদিন সকালে রিকশায় তালাইমারি মোড়ে গিয়ে কুষ্টিয়াগামী 'তুবা এক্সপ্রেস' 'বাসে চেপে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ১৫ মিনিটে পৌছে যেতাম বানেশ্বর মোড়ে। সেখান থেকে বাঘাগামী লক্কর মার্কা বাসে উঠে নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে হেলথ কমপ্লেক্সের গেটে নেমে পড়তাম।
কোন কোন দিন বাস বিভ্রাটের কারনে একটু দেরি হয়ে যেত।
এইরকম বিভ্রাটের কারনে একদিন আমি ও মেডিকেল অফিসার মারুফা বেলা দশটা নাগাদ অফিসে পৌছালাম।
পৌছেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে! যেদিন বেশি লেট হয়েছে, সেই দিনই সিভিল সার্জন স্যার এসে আমাদের দুইজনকে লাল কালি দিয়ে এবসেন্ট করে চলে গেছেন!
আমাদের মধ্যে সিনিয়র রাকিব ভাই চাকুরি বিধিমালা ও আইনকানুন ভালো জানতেন।
বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে রাকিব ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম - " ভাই, চাকরি কি থাকবে, নাকি চলে যাবে!? "
আমার কথা শুনে ইউএইচএফপিও জহুরুল স্যার মিটি মিটি হাসতে লাগলেন !
রাকিব ভাই জিজ্ঞেস করলেন -- " চাকরি কয় বছর হয়েসে গো? "
বললাম - " সাত বছর "।
" বি সি এস হয়েসে ? "
" জ্বি, বি সি এস হয়েছে। "
" চাকুরী স্থায়ীকরনের কাগজ পেয়েসেন? "
" জ্বি, তাও পেয়েছি।"
রাকিব ভাই সোৎসাহে বলে উঠলেন, " আরে আপনার চাকরি খায় , এমন কোন মামুর বুঠা আসে নাকি! ? মনে রাখবেন, ছরকারি ক্যাডার ছার্ভিসে চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন! চাকরি যাওয়া তার চেয়েও কঠিন!! আরো একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা কিন্তু ছরকারের চাকরি করি না, আমরা প্রজাতন্ত্রের চাকরি করি। "
আমি বললাম -" সেটি কিরকম? "
তিনি বললেন - " এই ধরেন - আমাদের দেশের নাম ' গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ '। আমাদের ছরকারের নাম - ' গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ছরকার '। এই যে দেখেন, বর্তমানে যে ছরকার আছে, একবছর আগে কিন্তু এই ছরকার ছিল না। তখন ছিল হোসেইন মুহাম্মাদ এরশাদের স্বৈরতান্ত্রিক ছরকার। সেই ছরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছংগ্রাম হল, তার পতন হলো,তারপর নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান ছরকার আইস্যাছে! আবার চার বছর পর নির্বাচন হবে, তখন হয়তো আরেক দল নির্বাচিত হয়ে ছরকার গঠন করবে।কিন্তু ছরকার পরিবর্তন হলেও দেশের নামের কোন পরিবর্তন হবে না, এটা ছব ছময় ' গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ' হিসাবেই থাকবে। আর আমরা হলাম সেই প্রজাতন্ত্রের চাকর!!
" তবে মনে রাখবেন যখন যে ছরকার ক্ষমতায় থাকবে, ছেই ছরকারই হল প্রজাতন্ত্রের একমাত্র রক্ষক ও অভিভাবক।
ভুলেও কখনো কোন ছরকারের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও উচ্চারণ করবেন না। যদিও আমরা প্রজাতন্ত্রের চাকর, তথাপি প্রজাতন্ত্রের অভিভাবক হিসাবে যখন যে ছরকার ক্ষমতায় থাকবে তাদেরই খাস চাকর হিসাবে যত বেশি আনুগত্য করতে পারবেন আপনার চাকরি ততবেশি মজবুত হবে!।"
রাকিব ভাইয়ের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিধায় তার কথা বার্তায় ' স', 'শ' ও ' ছ' এগুলির উচ্চারণের ব্যাপারে একটু ঝামেলা থাকলেও তার বুঝানোর ব্যাপারে কোন ঝামেলা ছিল না।
তার নাতিদীর্ঘ বক্তৃতার পর বোঝা গেল চাকরি যাওয়া অত সোজা নয়।
খলিল ভাই বললো, " যাক দাদার চাকরি তো মজবুত হয়ে গেল, তাইলে আজকের দুপুরের নাস্তার দায়িত্ব দাদার। "
আমি কিছু বলার আগেই ডাঃ মারুফা বললো - " না, আজকে দাদা নয়, আজকের নাস্তার দায়িত্ব আমি নিলাম। "
আরএমও খলিল ভাই বললো - " তাইতো,তাইতো, মারুফার চাকুরীওতো আজই চলে গেছিলো দাদার চাকুরির মত। তাহলে আজ মারুফা, আরেকদিন দাদার নাস্তার দায়িত্ব থাকলো।"
মারুফার হাসব্যান্ড ডাঃ সাইফুল তাতে সম্মতি দিয়ে বললো -" তবে তাই হোক "।
এইবার চাকুরি বিধিমালা বিশেষজ্ঞ রাকিব ভাই যোগ করলেন --
" শুধু আজই নয়, মাঝে মাঝে আমাদের আরএমও ছাহেব এবং ইউএইচএফপিও ছাহেবকে পালাক্রমে এন্টারটেইন করে তাদের মন জয় করে রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে, 'ইমেডিয়েট বশ্ ইজ দি বশ্! ।
তারা যদি ছন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে ছরকার আপনার প্রতি ছন্তুষ্ট থাকবেন।
এইভাবে তারা আবার উর্দ্ধতনদের সাথে লিয়াজোঁ রক্ষা করবেন।
এইভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগন নিজেদেরকে ছরকারের নির্ভেজাল খাস চাকর বলে প্রমান করতে পারবেন।
বিপদেআপদে ছরকারও তার খাস চাকরদের ভালোমন্দ দেখভাল করবেন। "
মারুফা জোক করে বললো, " আচ্ছা, যদি মরে যাই, তাহলে চাকরির কি হবে!? "
এতক্ষন চুপচাপ থাকা ডাঃ চিন্ময় দাস বলে উঠলো - " মরা অত সোজা লয় মামুর বুঠা!
মরে যদি যাও তোমার পেনশন গ্র‍্যাচুইটি পাবে তোমার হাসব্যান্ড সাইফুল, সে যদি না থাকে তোমার ছেলে মেয়ে পাবে, কেউ যদি না থাকে চাকর বাকর যার নাম থাকবে সেই তোমার টাকা পয়সা পাবে। এই হলো সরকারি চাকুরির মজমা!
অতএব এইবার সবাই উঠে, যার যার রুমে গিয়ে সরকারি কাজকাম করে, সরকারের খাস চাকর হওয়ার চেষ্টা করা যাক।
এক কোনায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা ডাক্তার সিরাজুল বলে উঠলো - " যে যতই চেষ্টা করেন না কেন, ডাক্তার সমাজের পক্ষে সরকারের খাস চাকর হতে অনেক দেরি আছে, কিংবা আদৌ কোন সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। কারন ডাক্তার সাহেবেরা জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর! করতে পারে না । আবার তৈল মর্দনও করতে পারে না!
( ---- চলবে -----)

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়