Ameen Qudir

Published:
2020-02-24 06:28:57 BdST

নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে অদম্য কিশোরী ঝর্ণা আজ ডাক্তার: বাংলাদেশে সর্বপ্রথম নজির



ডেস্ক
____________________

বাংলাদেশে এই নারী চিকিৎসক সর্বপ্রথম নজির। এক অদম্য কিশোরী নিজেই লেখাপড়ার অদম্য স্পৃহায় ঠেকিয়েছিল তার বাল্য বিবাহ। তার পর সৃষ্টি করলেন ইতিহাস। ডা. ঝর্ণা এখন জীবনজয়ী আত্মজয়ী আত্মপ্রত্যয়ী নারীর প্রতীক।
৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান।

পরিবারে ছিল আর্থিক অসচ্ছলতা। তাই তাকে অষ্টম শ্রেণিতে বিয়ের দেয়ার উদ্যোগ হয়েছিল।তাকেই বাল্যবিবাহ ঠেকাতে হয়েছে। পরিবারে র ৪ মেয়ের বড় ছিল ঝর্না। পুরো নাম জান্নাতুল ফেরদৌস।
ডা. ঝর্না বলেন, আমি যে ঘরে পড়তাম,তার পাশের ঘরেই আমার বিয়ের আলোচনা চলত, সবই আমার কানে আসত। মানসিক চাপের মধ্যে থাকতাম সব সময়।
চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ঝর্ণা। বাবা ফরিদুল ইসলাম চট্টগ্রামে মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। মা হাছিনা গৃহিণী। চার মেয়ে নিয়ে এ দম্পতির দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না।
বিয়ে ঠেকানোর জন্য অনেকটা জেদ করেই অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেলেন ঝর্ণা। তারপরও বিয়ের কানাঘুষা চলতেই থাকে। পড়শিরা বলতে থাকেন, মেয়েদের কেন বিয়ে দিচ্ছেন না? পড়াশোনা করে কী হবে? মাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পেয়ে জান্নাতুল খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেন। শহরের কলেজে ভর্তি, চিকিৎসক হতে চাওয়ার বিষয়গুলো শুনে ঝর্ণার বাবা বলতেন, এসব বড়লোকদের বিষয়। ঝর্ণা শহরের কলেজে পড়তে না পারলেও উচ্চমাধ্যমিকেও জিপিএ–৫ পেলেন।

ঝর্ণা বললেন, বাবাকে অনেক শহরের একটি কোচিংয়ে ভর্তি হই। ২০১০-১১ সেশনে সরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিই। কিন্তু পাস করতে পারলাম না। আবার সেই চিন্তা, এবার তো বিয়ে দিয়ে দেবে।

ঝর্ণা বললেন,‘তবে বাবা তখন বললেন, তুমি তো সব একবারেই করেছ। এইবার না হয় আরেকবার সুযোগ নাও। আমার যুদ্ধ শুরু হলো। তারপর যেদিন এমবিবিএস পাস করলাম, তখন মনে হলো, এখন আর বিয়ে নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’ অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মোমিনুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় ঝর্ণার।
এসব কথা মিডিয়াকে বলেন ঝর্ণা নিজেই।

প্রথমবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে পারেননি। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের হাজিগাঁও এলাকার জান্নাতুল ফেরদৌস ঝর্ণা আজ তিনি গর্বিত চিকিৎসক।

জান্নাতুল ফেরদৌসের পরীক্ষার ফল বরাবরই ভালো ছিল। ২০১৭ সালে সরকারি জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান।
বাবা ফরিদুল ইসলাম বললেন,‘নিজের কোনো জায়গা জমি ছিল না। রোজগারও তেমন ছিল না। চারটা মেয়ে। তাই চিন্তায় থাকতাম। তবে মেয়ে বিয়ের প্রস্তাব এলে বিয়ে করবে না বলে ফিরিয়ে দিত। আজ সেই মেয়ে ডাক্তার।’

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়