Ameen Qudir

Published:
2020-01-20 03:45:17 BdST

কাটা আঙুল পকেটে নিয়ে হাসপাতালে এলেন যুবক, ডাক্তাররাও দিব্যি জুড়ে দিলেন


 

কাজটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। ডা. রূপনারায়ণ জানিয়েছেন, দু’টি আঙুলই অত্যন্ত খারাপভাবে হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। আঙুল দু’টি হাসপাতালে নিয়ম মেনে আনাও হয়নি প্লাস্টিকে মোড়ার পর বরফের বাক্সে করে আনা উচিত ছিল। অথচ আনা হয়েছে পকেটে পুরে। সেই ধুলোমাখা আঙুলই পরিষ্কার করে জোড়া লাগালেন রূপনারায়ণরা।

ডেস্ক
__________________


মেশিনে ঢুকে গিয়েছিল দু’টি আঙুল। বের হল যখন, তর্জনী ঝুলছে হালকা একটা চামড়ার সুতোয়। আর মধ্যমা ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। বোধবুদ্ধি হারাননি। বরং ঠান্ডা মাথায় তর্জনীটি আলাদা করেছেন। তারপর দু’টি আঙুলই প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে সটান হাসপাতাল চলে গিয়েছিলেন বর্ধমানের অভিজিৎ বাগ। কিন্তু সেখানে কিছু হয়নি। শেষে পৌঁছন কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে। সেখানে মধ্যমাটি জোড়া লাগানো হয়। তর্জনীর কোনও হিল্লে অবশ্য করা যায়নি। কারণ, কাটা প্রত্যঙ্গ যেভাবে হাসপাতালে আনা উচিত, তা আনা হয়নি। “বরাতজোরে মধ্যমাটিকে বাঁচানো গিয়েছে।” জানিয়েছেন আর জি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য।

ঘটনাটি গত শনিবারের। এক সপ্তাহ বাদে শুক্রবার রোগীকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, মধ্যমা ঠিকঠাকই জোড়া লেগেছে। রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক হওয়ার পথে। আর তর্জনীর কাটা অংশ যতটা সম্ভব মেরামত করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অভিজিৎ উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়ার নওয়াদাপাড়ার একটি কারখানায় কাজ করেন। শনিবার বেলা এগারোটা নাগাদ কাজ করার সময় মেশিনে অভিজিতের বাঁ হাত ঢুকে যায়। বের হল যখন তখন দু’টি আঙুল হাত থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। তর্জনী কোনওমতে আটকে আছে চামড়ার সুতোয়। আর মধ্যমা গড়াগড়ি খাচ্ছে ধুলোয়। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেশিনঘর। সহকর্মীরা দ্রুত অভিজিৎকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান।

কারখানা থেকে বেরনোর আগে আঙুল দু’টি প্লাস্টিকে মুড়ে পকেটে পুরে নেন অভিজিৎ। আঙুল জোড়া লাগতে পারে, এই সম্ভাবনায় সাগর দত্ত থেকে অভিজিৎকে রেফার করা হয় আরজি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে। দুপুর দেড়টা নাগাদ ট্রমা কেয়ার সেন্টারে আসেন অভিজিৎ। ডাক্তাররা হাত ও কাটা আঙুল দু’টি পরীক্ষা করেন। রূপনারায়ণবাবু জানিয়েছেন, দু’টি আঙুলই বাজেভাবে থেঁতলে গিয়েছিল। মধ্যমার অবস্থা সামান্য ভাল ছিল।

সার্জনরা অবশ্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেন। ডা. রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য, ডা. গৌরাঙ্গ দত্তের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। সঙ্গত করেন ‘পিএইচডি’ করা এক ঝাঁক ডাক্তারি পড়ুয়া এবং অ্যানেস্থেশিস্ট ডা. গুঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত অস্ত্রোপচার চলে।

যদিও কাজটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। রূপনারায়ণবাবু জানিয়েছেন, দু’টি আঙুলই অত্যন্ত খারাপভাবে হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। আঙুল দু’টি হাসপাতালে নিয়ম মেনে আনাও হয়নি প্লাস্টিকে মোড়ার পর বরফের বাক্সে করে আনা উচিত ছিল। অথচ আনা হয়েছে পকেটে পুরে। সেই ধুলোমাখা আঙুলই পরিষ্কার করে জোড়া লাগালেন রূপনারায়ণবাবুরা। আগের সপ্তাহে এসএসকেএম হাসপাতাল কাটা হাত জোড়া লাগিয়েছিল। এবার কাটা আঙুল জোড়া লাগাল আরজিকর।
সংবাদ সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়