Ameen Qudir

Published:
2019-02-23 20:58:41 BdST

চকবাজার ট্রাজেডিক্লিনিকের শাটার টেনে বাঁচতে চেয়েছিল দুই মেডিকেল ছাত্র:রোগীসহ আগুনে শহীদ


 

নিহত দের স্বজনদের কান্না

ডেস্ক , ঢাকা
____________________

ক্লিনিকের শাটার টেনে বাঁচতে চেয়েছিল দুই মেডিকেল ছাত্র। কিন্তু চকবাজারে মানুষের লোভ ও অব্যবস্থাপনার লেলিহান শিখায় পুড়ে মারা গেল তারা। শহীদ হল মানবসেবার ভবিষ্যৎ কারিগররা। সৃষ্টি হল এক মর্মান্তিক ট্রাজেডির। সঙ্গে মারা গেছেন একাধিক রোগী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজের শেষ বর্ষের দুই ছাত্র ইমতিয়াজ ইমরুল রাসু ও আশরাফুল হক চকবাজারের একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করতেন।
সেটি আবার আরেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র কাওসার আহমেদ পড়াশোনার পাশাপাশি মদিনা মেডিক্যাল সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ার নামে এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন । তার সহযোগী হিসেবে ফার্মেসি ও ক্লিনিকে পার্টটাইম কাজ করতেন বড়কাটরা মাদ্রাসার শিক্ষক ওমর ফারুক। ইমতিয়াজ ইমরুল রাসু ও আশরাফুল হক সেখানে প্র্যাকটিস করতেন। ওই ডেন্টাল ক্লিনিকে দাঁত দেখাতে গিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যয়নরত কাজী এনামুল হক। ছিলেন আরেক নারী ও তার শিশুসন্তান। সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর সড়কে আগুন ছড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি তারা ডেন্টাল ক্লিনিকের শাটার টেনে দেন। ভাবলেন, হয়তো আগুনের কবল থেকে বাঁচা যাবে। বিধি বাম। যম তাড়া করছিল তাদের। আত্মরক্ষার সেই চেষ্টাই কাল হলো তাদের। ভয়াবহ আগুনের তাপ ও ধোঁয়ায় প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই মারা যান তারা।
যমপুরী হাজী ওয়াহিদ ম্যানশন যেন মৃত্যুপুরী । এই ভবনের পশ্চিম দিকেই দেড়তলা পাপ্পুর বাড়ি। এর নিচতলায় ছিল মদিনা মেডিক্যাল সেন্টার অ্যান্ড ডেন্টাল কেয়ার। সেখানেই সর্বনাশা আগুনে নিভে এতগুলো মেধাবী প্রাণ।


নুসরাত জাহান মুক্তা। কাওসার আহমেদের স্ত্রী। এখন শুধুই কাঁদছেন। ১১ মাস বয়সী দুই শিশু মেহজাবিন সারা ও জামিল আহমেদ কাফি অবুঝ শোকে মোহ্যমান। মুক্তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনেরা। কিন্তু মন কি মানে!
মুক্তার ভাই আজিজুল ইসলাম জানালেন, বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয়েছে কাওসার ও মুক্তার। কাওসারের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। বাবার নাম ডা. খলিলুর রহমান। কাওসার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে থাকতেন চুড়িহাট্টার পাশেই।
আশরাফুল হকআজিজুল ইসলাম জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি মদিনা মেডিক্যাল সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ার নামে প্রতিষ্ঠানটি চালাতেন তিনি। আগুনে সব শেষ। অবুঝ দুই সন্তান নিয়ে মুক্তা পড়লেন অথৈ সাগরে।

বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মর্গে এসেছিলেন। । কাঁদছেন। ইমতিয়াজ ও আশরাফুলের বন্ধুরা জানান, ডেন্টাল অনুষদের পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই প্র্যাকটিস শুরু করেছিলেন তারা। চুড়িহাট্টার মদিনা মেডিক্যাল সেন্টার অ্যান্ড ডেন্টাল কেয়ারে সন্ধ্যায় বসতেন দুজন। সেখানেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তাদের। ইমতিয়াজ থাকতেন ধানমন্ডির শংকরে ডেন্টাল ছাত্রাবাসে। তার বাবার নাম নজরুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি পাবনার বেড়ায়। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ইমতিয়াজ ছিলেন বড়। আশরাফুল হকের বাবার নাম জামসেদ মিয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরে। বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনি থাকতেন মগবাজারে।
। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, মদিনা মেডিক্যাল সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ার থেকে একজন নারী ও একটি শিশুর লাশও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের স্বজনদের কাউকে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তারাও ওই ডেন্টাল কেয়ারে দাঁতের ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন। সেখানেই আটকে পড়ে করুণ মৃত্যু হয় তাদেরও।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়