Ameen Qudir

Published:
2019-02-19 23:30:35 BdST

ঢামেক ছাত্রলীগের সাবেক প্রেসিডেন্টই উপজেলায় মিথ্যা অভিযোগে হয়রানির শিকার!



ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ
___________________________

প্রায় দু'দিন পেরিয়ে গেলো।
কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না!
না কোন চিকিৎসক নেতা, না কোন বিএমএ নেতা!

ঘটনাটি যার সাথে ঘটেছে সে যে আমাদের নেতাদের অপরিচিত ব্যাপারটি তেমনও নয়!
বলছিলাম ডা. মাহফুজ রিগানের কথা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ছিলো রিগান। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সমাজসেবা সম্পাদকও ছিলো রিগান।
তাও এই সরকারি আমলে না একেবারে সেই বিরোধি আমলে!

রিগান এখন চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা হেলথ কম্প্লেক্সে পোস্টেড। সে একবারও ট্রান্সফার হয়ে ঢাকাতে আসার চেষ্টাও করেনি যা সচারচার অনেকেই করে!

প্রায় আটবছর রিগান শিবগঞ্জেই আছে, নিয়মিত অফিস করে, নিয়মিত রুগি দেখে এমন কি বিগত সময়ে চিকিৎসকদের একটি কর্মবিরতির সময়ও তাকে আমরা উপজেলা হেলথ কম্প্লেক্সে জরুরী সিজারিয়ান অপারেশন করতে দেখেছি!

এই রিগানের বিরুদ্ধেই সরকারি কাজে বাঁধাদানের অভিযোগ এনে স্থানীয় থানাপুলিশ তাকে হয়রানির চেষ্টা চালাচ্ছে!

ঘটনাটা কি ?
আসুন ঘটনার পিছনের আসল ঘটনাটি জেনে নিই।

ঘটনাস্থল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রায় মধ্যরাত। চার তরুণকে নিয়ে থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম হাজির হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মাহফুজ রিগানকে বললেন, ‘লিখে দিন এরা মদ্যপায়ী।’

ডা. রিগান পরীক্ষা করে তেমন কিছুই পেলেন না। বললেন, কিছুইতো পাচ্ছি না, মদ্যপায়ী কেন লিখবো? এতে ক্ষেপে গেলেন এসআই সিরাজুল। তার ওপর চাপ দিতে লাগলেন। অসৌজন্যমূলক আচরণও করলেন। থানার ওসিকে (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ফোনে ধরিয়ে দিলেন এসআই নিজেই।
তিনিও রিগানকে ধমক লাগালেন!

সরকারের কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলেন!!

এর আগেও আমরা বহুবার দেখেছি দেহতল্লাশী করার নামে পুলিশের কোন কোন অসাধু সদস্য রাস্তায় নিরীহ পথিকের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে তার নামে মাদকের মামলা দিয়ে থানায় নিয়ে যায়!

পরে আটককৃত ঐ মানুষটির আত্মীয় স্বজন বা অভিভাবকের কি পরিমান হয়রানী হয় বা কোন অপরাধ না করেও তার পরিবারের কি পরিমান টাকা পয়সা খসে যায় সে গল্পটুকু মোটামুটি সবারই জানা! সেটা আর নাইবা বললাম!

রাস্তায় যাকে তাকে ধরে কোন কোন অসাধু পুলিশ সদস্য এমন গর্হিত অন্যায় কাজ করলেও খোদ সরকারি অফিসে এসে সরকারি কাজে নিয়োজিত কোন সরকারি অফিসারের উপর এমন মিথ্যা অনৈতিক অভিযোগ আরোপ আমরা আগে দেখেছি বলে মনে করতে পারছি না!

পুলিশ যাকে ধরে আনলো সে মদ্যপায়ী না হলেও তাকে মদ্যপায়ীর সার্টিফিকেট দিতে হবে!
সে ইয়াবা কারবারি না হলেও তাকে ইয়াবা কারবারির সার্টিফিকেট দিতে হবে!

মিথ্যা সার্টিফিকেট না দিলে চিকিৎসককেই ফাঁসানোর চেষ্টা করা হবে!
মিথ্যা সার্টিফিকেট না দিলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধেই সরকারি কাজে বাঁধাদানের অভিযোগ আনা হবে!

চারিদিক দিয়ে সবাই যেন আষ্ঠেপৃষ্ঠে চিকিৎসকদের বেঁধে ফেলতে চায়ছে! সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের অন্যায় খড়গ যেন সদা উদ্যত চিকিৎসকের মণ্ডুপাত করতে!!

কথায় আছে 'কাকের মাংশ কাকে খায় না।'
কিন্তু চিকিৎসকের মাংশ চিকিৎসক ঠিকই খায়!!
অনন্যোপায় হয়ে ঘটনার রাত্রে সাহায্য পরামর্শ চেয়ে ডা. রিগান যখন সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ফেরদৌসকে ফোন করলো তখন তিনি বললেন, 'কম্প্রোমাইজ করো। নইলে চাকরি ছেড়ে দাও।'

এই সিভিল সার্জন ঐ জেলায় ডা. রিগানের সর্বোচ্চ অভিভাবক। তিনি ডা. রিগানের বিপদে রিগানের পাশে এসে তো দাঁড়ালেনই না উল্টো আরো রিগানকে অন্যায়ের সাথে আপোষ করার পরামর্শ দিলেন, আপোষ করতে না পারলে চাকরি ছাড়ারও পরামর্শ দিলেন!

আশ্চর্য!!
এইরকম নতজানু আর অমেরুদণ্ডী সিভিল সার্জনরা যতদিন ডা. রিগানদের ঘাড়ে চেপে বসে থাকবে ততদিন এই পেশার মর্যাদা রক্ষা ও ন্যূনতম নৈতিক অধিকারটুকুও অর্জন করা সম্ভব নয়!!

কিন্তু এভাবে আর কতোদিন ?
এভাবে চলতে পারে না। চলতে পারে না।
আপনারা আর কতো ঘুমাবেন ?
এবার একটু জাগুন।

নিজের অধিকারটুকু রক্ষা করতে না পারুন এই অনৈতিক অন্যায়ের প্রতিবাদটুকু অন্তঃত করুন।
কোন রাজনৈতিক পরিচয় নয়, ন্যূনতমপক্ষে একজন সাধারণ চিকিৎসক হিসেবে ডা. রিগানের পাশে অন্তঃত দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।
_________

পুনশ্চঃ
যে চারজন তরুণকে প্রায় মধ্যরাতে ডা. রিগানের কাছে নিয়ে এসেছিলো পুলিশ তাদেরকে আটক করেছিলো দুপুর দু'টায়।
যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে ঐ চারজন তরুণ সকালে মদ পান করেও থাকেন তাহলে রাত দুপুরে ঐ উপজেলা হেলথ কম্প্লেক্সে ডা. রিগানের পক্ষে নিশ্চয় ডোপ টেস্ট করার কোন সুযোগ ছিলো না।

আর ক্লিনিকালি ডা. রিগানের কাছে মনে হয়নি যে ঐ চার তরুণ মদ্যপায়ী ছিলো, সে তাই ই লিখেছে।

___________________________

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ।
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।
Doctor ,t Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
Former Secretary General বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ,দিনাজপুর।
Studied MBBS. at Dinajpur Medical College, Dinajpur

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়