Ameen Qudir

Published:
2018-09-04 19:48:25 BdST

"ডাক্তার হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতিতে গা ঘিন ঘিন করছে"


 


অধ্যাপক ডা.অনির্বাণ বিশ্বাস
___________________

ভাল নেই।

মানুষ এখন মনুষ্যতের হয়ে শ্বাস নিচ্ছে।ওকে আমরা বেঁচে থাকা বলি।আমরা কেউ ভাল নেই।

এমন এক সমাজ আমরা তৈরী করেছি,যেখানে সভ্য,শালীন,ভদ্র মানুষকে ব্যাঙ্গ করা হয়,তাঁর অবস্থানের জন্য হাসাহাসি করি,তাঁকে বিব্রত করি,ট্রল করি,তাঁকে আরও অসহায় অবস্থায় ফেলে মজা পাই।তাঁকে মারধর করি,পারলে খুনও করি।আমরা ভাল নেই।

শিক্ষককে অসম্মান করতে আমরা ছোট ছোট ছেলেরা দক্ষ।'ভোট' নামক সংবিধান স্বীকৃত ফাজলামিতে কাজ করতে গিয়ে শিক্ষক খুন হলে আমরা স্টার জলসা দেখি।অপরিসীম আমাদের যৌনক্ষুধা।কামদুনি আমাদের কামেচ্ছা তৃপ্তির পারফেকশন।
আমাদের সন্তান সন্ততিদের কোন ভবিষ্যত নেই।তাদের সামনে কোন আদর্শই তৈরী করতে পারিনি।তাদের যোগ্যতা থাকলেও কলেজে ভর্তী হতে গেলে ঘুষ দিতে হয়। অতঃপর অল্প কিছু ছেলে মেয়ে রাজ্য ছেড়ে বাইরে চলে যায়। বাকিরা তোলাবাজি,সিন্ডিকেট,বুথদখল এইসব করে।এইসব করতে গিয়ে গুলি খেয়ে মরে। আমরা কিন্তু মানুষ থেকে দানব তৈরীর মৈথুন জারি রাখি।
আমরা ভাল নেই।একদম নেই।

রাষ্ট্র 'আচ্ছে দিন'এর স্বপ্ন দেখায়।আমারই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে ফাইন আদায় করে।নোটবন্দীর নামে প্রহসন হয়। আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে বিদেশে সরকারের মদতে রাষ্ট্রের বৈধ সন্তানেরা স্ফূর্তি করে।আমরা অবৈধ সন্তান ব'লে আমরা ট্যাক্সের চক্করে পরি।আমাদের কাউকে প্রকাশ্যে স্টেজ থেকে মাওবাদী বলা হয়,কেউ কেউ 'আরবান নক্সালাইটস' এর গরিমায় ঋদ্ধ হই। আমাদের হিন্দু-মুসলমান এই বোধে উজ্জীবিত করা হয়।আমরা হানাহানিতে মাতি।আমরা ভাল নেই কেউ।

 

চিকিৎসার প্রয়োজনে আমরা অসহায়।সরকারী হাসপাতালে গাদাগাদি,অবহেলা,দালাল রাজ,ক্যাচের জোরে বিভ্রান্ত। বেসরকারী হাসপাতালে শোষনের অবাধ উপায়। তাই আমরা সাউথে যাই।সুচিকিৎসাও পাই।যারা পারিনা যেতে,তারা এখানের সকল প্রকার 'কু-অপ-অনর্থে'-র চিকিৎসার প্রতিবাদে হাসপাতাল ভাঙচুর করি,ডাক্তার পেটাই,গায়ে গু লেপে দেই। আমরা জানি আমাদের মৃত্যু হতে পারেনা।কেবল ডাক্তাররা চিকিৎসার নামে মেরে দেয়। আমরা ইন্টারনেট ঘেঁটে সব জানি।
কেবল বুঝতে পারিনা এরা কারা ?ঐ যাঁরা এখনও স্কুলে পড়ানোর চেষ্টা করেন ? রাত নটা অবধি ব্যাঙ্কে কাজ করেন ?ঐ উর্দীধারীরা,যাঁরা নীতিতে অবিচল থাকতে গিয়ে কম্পালসারী ওয়েটিং/সাসপেনসনে আছেন? ওরা কারা,যাঁরা এখনও হাসাপাতালে যত্ন নিয়ে রোগী দেখেন ?ঐ ট্যাক্সিওয়ালা কে ,যে গাড়িতে টাকাভর্তী ব্যাগ দেখে যাত্রীর বাড়িতে গিয়ে ফিরিয়ে দেন ?

আমরা ভাল নেই।একদম নেই।
____________

 

একটা জিডি করতে চাই

ব্লগ,ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ কিছু অন-লাইন ম্যাগাজিনে লেখালিখি করি।থাকতে পারিনা। নেশা হয়ে গেছে। জেনারেল ডাইরি অর্থাৎ জিডি করার উদ্দেশ্যে সদর থানায় হাজির হলাম। একটু অপেক্ষার পরে সেকন্ড অফিসারের মুখোমুখি -

: একটা জিডি করতে চাই

: কেন?

: অচেনা ফোন নম্বর থেকে গত দু মাস ধরে থ্রেট করা
হচ্ছে,ইনবক্স,মেলে কুৎসিত গালাগালি মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

: কাকে মেরে ফেলার হুমকি ?

: আমাকে

: খামোখা হুমকি দেবে কেন? আপনি কি করেছেন?

: জানিনা। আমি রাজনীতির নোংরামি, দূর্ণীতি আর ধর্ম ব্যবসার বিরুদ্ধে লিখি, এবং…

: ও বুঝেছি, আপনি প্রতিবাদী ,তা খোঁচাখুচি করলে তো মার খাবেন,খুনও হতে পারেন...

: আমি প্রতিবাদী কি না জানিনা, তবে প্রতিবাদীদের মারা কি আইনসম্মত! আমিতো এই দেশের নাগরিক…

: আরে থামুন, থামুন, সরকারের বিরুদ্ধে লেখেন না তো?

: কিছু লেখা তো সরকারের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই যায়। সরকারের কুকাজের বিষয়ে লিখি

: এই কাজ করার দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে?

: রাষ্ট্রের সংবিধান দিয়েছে

: তবে পকেটে সংবিধান নিয়ে ঘুরুন। হামলা হলে সংবিধান আপনাকে বাঁচাবে.. হাঃ হাঃ হাঃ : যারা হামলা করবে তাদের সংবিধান দেখিয়ে বলবেন হামলা সংবিধানসম্মত নয় ; হাঃ হাঃ হাঃ

: এখানে হাসার মত কি হলো?

: ভাই, একটা কথা বলি- মন দিয়ে শুনুন। জিডি কোন নিরাপত্তা দেবেনা

: মানে?

: আপনি যে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন জিডি তার রেকর্ড মাত্র। আপনাকে আমরা বড়জোড় এই থানা এলাকায় অল্পদিনের নিরাপত্তা দিতে পারব। তার বেশী না। আপনি তো আর ভি আই পি নন। এছাড়া আরো অসুবিধে আছে

: কি অসুবিধে?

: আপনি সরকারের বিরুদ্ধেও লেখেন। আপনাকে নিরাপত্তা দেয়া ঠিক হবে না

: তবে কি ঠিক হবে?

: আপনাকে তো এখনই তথ্য আইনে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া উচিত

: ভয় দেখাচ্ছেন?

: না, ভয় দেখাই নি। বাস্তব অবস্থা বোঝানোর চেষ্টা করছি

: এখন করনীয় কি?

: সব জায়গায় ক্ষমা চান। লেখালিখি বন্ধ করে দিন

: লেখা বন্ধ করলেই আমি নিরাপদ ?

: না, একবার যখন লিস্টে নাম উঠেছে তখন কখনই নিরাপদ নয়

: তার মানে আপনাদের করার কিছু নেই?

: ভাই, চা আনাই, চা খান। নিজের ভাই হিসেবে বলছি- এখান থেকে চলে যান। অন্য রাজ্যে,অন্যদেশে

: ভাই হিসেবে এই উপদেশ!

: ভাই, আমি আপনাকে চিনি। গত এক বছর ধরে ফেসবুক স্ট্যাটাস, ব্লগ আর নিউজ সাইটে আপনার প্রত্যেকটা লেখা ফলো করি

: তাই না কি? ফলো করেন কেন?

: আপনি থানার লিস্টে আছেন। ' আরবান নক্সালাইটস্' নামে আমাদের হাতে নতুন অস্ত্র এসেছে, জানেন তো ? যে কোন দিন আটক করা হবে। আমি চাইনা কোন ঝামেলায় পরুন।

: আমার প্রতি এত দরদ?

: আপনি যা লেখেন তা সবাই জানে। কিন্তু সবাই বলার সাহস পায় না। আপনার সাহস আছে- এটাকে সম্মান করি। তাড়াতাড়ি রাজ্য ছাড়ুন, নয়ত পার্টির গুন্ডারা আপনাকে খরচ করে ফেলবে, না হলে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে বারোটা বাজাবে
...................................................................
আমার আর জিডি করা হয়না। থানা থেকে বেরিয়ে আসি। বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটি, পা টলে। শরীর ভিজে ওঠে ঘামে। মনে হতে থাকে ঘাতকের দল অনুসরণ করছে। যে কোন মুহুর্তে ঘাড়ে পরবে ছুড়ির ফলা, পিঠ বিদ্ধ করে চলে যাবে ঘাতক বুলেট।

____________


শ্রীমান পুলক দত্ত
...........................

: ক্রিমিনাল পুলিশ কাহাকে বলে?
: আরে দুইটাই সমার্থক, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে।
: তাহা হইলে শ্রীমান পুলক দত্তকে তুমি কি বলিবে ?
: কোন পুলক দত্ত? যাহার প্রেসার বাড়িয়া মাথা গরম হয়?
: হ্যাঁ, আমি নিশ্চয়ই অণ্ডকোষ গরম হইবার কথা কই নাই...সে হইত বটে রুনু গুহনিয়োগীর ।
: ঠিক্কথা ! শ্রীমান পুলক বাবার মাথা গরম হইবার জন্য সে ডঃ শ্রীনিবাসকে ঠ্যাঙ্গানি দিয়াছে, গলা টিপিয়া ধরিয়াছে
: আমি আরও শুনিলাম শ্রীমান পুলক ডঃ শ্রীনিবাসের পকেট হইতে সাতশত টাকা নিজের মনে করিয়া পকেটস্থ করিয়াছে!
: বল কি! তবে চল সবাই গাই

" কলোকি পুলোকি সিংগিল, মেলালিং মেলালিং মেলালিং.."

: অর্থ কি?
: কলিকাতা পুলিশের পুলক সিংগিং "মা মাটির মহান মাল ..."
______________________________

অধ্যাপক ডা.অনির্বাণ বিশ্বাস। কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। লেখখ। কবি।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়