Ameen Qudir

Published:
2016-12-11 19:45:10 BdST

হাসপাতালের বকশিস চাঁদাবাজি : রেহাই পান না ডাক্তারও


__________________________

ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী



তিন বছর আগের কথা।কর্মস্থল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই আমার সিজারিয়ান অপারেশন হলো।যাবার দিন কেবিনের বিল মেটালাম।ওটি ফি আর বিবিধ মিলে হাজার খানেক টাকা।

যাবার বেলায় মাসীরা এল বকশিশ নিতে।কত চায় তার উত্তরে বলল,,কত আর দিবেন ম্যাডাম?১২০০ নাইলে ১৫০০ টাকা।ডাক্তার রা তো এর থেইকা কম দেয় না।
এটা বকশিশ না চাঁদাবাজি আমি বুঝিনি।
এরপর যত বার কেবিনে পরিচিত রুগী ভর্তি থেকেছে,দেখতে গেলেই এদের অত্যাচারের নালিশ করেছে।


তিন বছর আগে সিজার হলে যারা দেড় হাজার আদায় করত,এখন তারা কত আদায় করে আমার জানা নাই।
এটুকু জানা আছে,ডাক্তার না হয়ে অন্য যে কোন প্রফেশনের হলে ফ্রি কেবিন,অপারেশন এবং ফলো আপ ফ্রি - সব পেয়েও ডাক্তারদের এ দোষ,ঐ দোষ গাইতাম!

বুয়ারা রুম + গামলা পরিস্কার করত না,স্যাভলন + সাবান রোজ গায়েব,এসি কাজ করেনি,রোদ ছিল না - কাপড় শুকোয় নি,সিস্টার ক্যানুলা করতে চার বার ছিদ্র করেছে!তারপর ১৫০০ টাকা নিছে।

এই টাকা কি সরকার পাবে??...............ডাক্তার গুলা কসাই।সেবা??ঐ টাকায় ভাগ পায় এরা।একটা এন্টিবায়োটিক দিতে এত ছিদ্র করছে।মন থাকে চেম্বারে.....ব্লা ব্লা ব্লা !!!!


সরকারী হাসপাতালে আয়া বুয়া থেকে শুরু করে সকলের সিন্ডিকেট আছে,কমিটি আছে,ইউনিয়ন আছে।এবং এরা খুব ই সংঘবদ্ধ!
এখানে ঔষধ,খাবার,পরিচ্ছন্নতা সব দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারদের দায়িত্বে দেয়া।


খাবারের মান খারাপ হলে,ঔষধ খোলা বাজারে চুরি করে বিক্রি করলে,ডেলিভারীর পর বাচ্চা কোলে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিলে,ট্রলীতে রুগী বাইরে পরীক্ষার জন্য বা ছুটির পরে স্থানান্তর করতে শত শত টাকা হাতিয়ে নিলে এর কোনটাতে ডাক্তারের দোষ নেই।শুধু তাই না।প্রশাসনিক ক্ষমতা কুক্ষিগত প্রশাসন ক্যাডারের হাতে।তাই এদের কন্ট্রোল করার কোন সুযোগ ই আমাদের হাতে নাই।আপনারা যতটুকু ভোগান্তির শিকার,,এই বিষয়ে আমরাও সমান ভোগান্তির শিকার!


তাই হাসপাতালের সেবা ভোগী বা সেবা গ্রাহক - শিক্ষিত,,অশিক্ষিত,,গরীব,,ধনবান সকলের কাছে আন্তরিক অনুরোধ,সঠিক সমস্যা অনুধাবন করুন।সঠিক অপরাধীকে চিহ্নিত করুন।সমাধান বের করুন।কতৃপক্ষের কাছে সঠিক চিত্র তুলে ধরুন।
বাংলাদেশের প্রতিটি ডাক্তার নব্য ডাক্তার জীবনে রুগীর সেবার মহান ব্রত নেন।যাদের সেবা দেই,তাদের অকারন দোষারোপ আর মিথ্যাচার আপনাদের প্রতি সেবার মনোভাবকে নষ্ট করে দেয় দিন দিন।


দোষীদের দোষ দেয় না বলে ঐ চক্রের কুকর্ম বেড়েই চলছে দিন দিন।কমছে না রুগীর ভোগান্তি।অপবাদের বোঝা বাড়ছে চিকিৎসক নামক মেধাবী,নিরীহ গোষ্ঠীর!
এই অবস্থার পরিবর্তনে সকলের আন্তরিক এবং সোচ্চার হতে হবে,আজ এখুনি ই !!!!!!

____________________________


লেখক ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । জনপ্রিয় কলামিস্ট । নিয়মিত লেখেন ডাক্তার প্রতিদিনে।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়