Ameen Qudir

Published:
2016-12-06 17:57:51 BdST

ডাক্তারি চেম্বারে পৃথিবীর কুৎসিত একটি অভিজ্ঞতা বলছি আজ




______________
ডা. নাসিমুন নাহার

_________________________


তিন বছর টানা শহুরে জীবন বিবর্জিত বন জঙ্গল অজপাড়া গাঁয়ে বসবাস করে একটা জিনিস পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি--
একই ঘটনা গ্রাম এবং শহর ভেদে উপস্থাপন ভিন্ন হয়।শহরে যে ঘটনা চেপে যাওয়া হয়, গ্রামে সেই ঘটনাই ঢাক ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানানো হয়।

 

 

গতকালের ঘটনা। চেম্বারে বসে আছি।আটটা পাঁচ/ দশ বাজে।হুড়মুড় করে চার পাঁচজন মানুষ আর তিনটা বাচ্চা ঢুকে পড়ল রুমে।রিসিপশনের কারো কথাই না শুনে, নাম এন্ট্রি না করেই।যাহোক এরকম হয়, নতুন কিছু না।ডাক্তারকে আন অফিসিয়ালী এসব অঞ্চলের লোকেরা ঘরের লোকই ভাবে(!), কোন ফরমালিটিজের ধার এরা ধারে না।প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও এখন মোটামুটি মানিয়ে নিয়েছি।

 

আমি ভাবলাম বাচ্চাদের মধ্যে কেউ রোগী হবে।জিজ্ঞেস করলাম রোগী কে ?
লোকটা রীতিমত হাঁপাতে হাঁপাতে চিৎকার করে মহিলাটার দিকে ইশারা করে বলল ও রোগী।
আমি বললাম-ঠিক আছে রোগীর সঙ্গে একজন থাকুন বাকীরা বাইরে যেয়ে বসুন।আমি এভাবে হৈচৈর মধ্যে রোগী দেখতে পারব না । এইসব কথা আমি আজকাল কঠিন গলায় বলতে শিখে গেছি।কাজ হল।ততক্ষণে এটুকুও বুঝে নিয়েছি 'পেসেন্ট পার্টি গরম'!
লোকটা বলল --ম্যাডাম ওরে পরীক্ষা করে কন কাল রাতে ও অন্য বেডার লগে সহবাস করছে কিনা ? আমার সামনেই পরীক্ষা করেন। আজকে এসপার ওসপার করুম আমি।লাগলে ডিএনএ টেস্ট করেন (!)।আমাগো বাজারের ফার্মেসীর জালাল দাক্তুর কইছে ডিএনএ টেস্ট করলে ধরা পড়ব।টেকা পয়সা যা লাগে লাগুক।
তিন বাচ্চার মা হবার পরেও হা** মিটে নাই মা***।

আমি মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম- দু জোড়া তীক্ষ্ণ চোখ প্রবল মায়া আর কথা নিয়ে আমার তাকিয়ে আছে।আর কোলের বাচ্চাটিকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে আছে।

পৃথিবীর সব থেকে মন খারাপ করা কুৎসিত দৃশ্যগুলোর সাক্ষী প্রায়ই আমাকেই কেন হতে হয় ?

__________________________________


লেখক ডা. নাসিমুন নাহার।
হাজারো পাঠকের মন জয় করা লেখক। লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়