Ameen Qudir

Published:
2018-01-29 19:31:28 BdST

একজন নারী ডাক্তারের করুণ মৃত্যুর মর্মস্পর্শী কাহিনি


 

 

 

 

ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী

_____________________________

কথা হলো সদ্য অপমৃত্যুর শিকার, মানহা নামক অপরুপা পরীর হতভাগা মা ডা. রিদ্দিতা সোহানা সাদিক এর পরিবারের সাথে।।

যেহেতু সন্তান জন্মদানের মত ভয়ংকর কষ্টকর কর্মটি তুমি ই করো, তাই বঙ্গদেশের দুঃখীনি মাতাকূল-আমি তোমাদের ই বলছি। আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার সময় দূরু দূরু বক্ষে মলিন মুখে যতই বলো, মেয়ে হইলে ও দুঃখ পাবো না। আমি জানি তুমি মিথ্যে বলছ। তুমি দুঃখ পাবে। এই নোংরা দুর্গন্ধময় সমাজ তোমাকে দুঃখ পেতে বাধ্য করবে।

তোমার চাঁদের মত কন্যা। তুমি তাকে নিয়ে শখ করবে। নিজের রক্ত পানি করা টাকা খরচ করে হলেও তাকে ডাক্তারী পড়াবে।

সে যখন ডাক্তারী পাস করবে। গলায় স্টেথো, শরীরে এপ্রন চড়িয়ে সরকারী চাকুরী করবে, তোমার চোখ জুড়িয়ে যাবে। গর্বে তোমার বুক ফুঁলে উঠবে। কিন্তু গল্পটা এখানে শেষ নয়। গল্পটা এখানে শুরু।

তোমার কন্যাকে তুমি ডাক্তার পাত্র দেখে বড় ঘর দেখে বিয়ে দেবে। বিয়ের পরে তোমার কন্যা নিজের শরীরে একটি ফুঁটফুঁটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেবে। কন্যা বুকে নিয়েই তোমার মেয়ে জানবে পুরুষটির বহু নারী ভোগী স্বভাবের কথা। চাকুরীর স্থলে ওটি বয় কৃত ধৃত হবে অন্য নারী সহ।

শিশু কন্যা সহ তোমার মেয়ে রোজ যাবে পুরুষটির কর্মস্থলে। কন্যার মাথায় হাত রেখে এই ধরনের অপকর্ম না করার প্রতিজ্ঞা করবে কুলাঙ্গারটি । আবার ভঙ্গ। একটা সময় আলাদা জীবন। কন্যা সহ তোমার মেয়েটি অর্ধমৃত হয়ে বেঁচে। তিন বছরের সেপারেটেড জীবন যাপন।

একটা সময় তোমার কন্যার স্বামী এল। কন্যার জন্য আবার নতূন করে জীবন শুরু করবার স্বপ্ন দেখানো। নতুন করে ঘর বাঁধে কন্যা পুরনো ব্যথা বুকে নিয়ে।

মা, ততদিনে তোমার স্বামী পৃথিবী ছেড়েছেন। এবার তোমার কন্যাটি পিতৃহারা। তুমি ও স্বামী হারিয়ে খানিকটা দুর্বল।

স্বামী নিয়ে সুখের দিন গুলো জলদি ফুরলো তোমার মেয়ের। আবার সেই পুরনো কোন্দল। তোমার কন্যাকে গালাগাল, মারধর।

 

 

 

 

জানুয়ারী,২০১৮।।

২১ তারিখে তোমার সেই আদরের কন্যাটিকে প্রচন্ড মারল পুরুষটি । ২২ তারিখে ৩৫ টি ঘুমের ঔষধ খেয়েছে তোমার মেয়ে স্বামীর উপর অভিমানে। নিজের ভাতিজীর সামনে তাকে এতটা মেরেছে! সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেদিন ই স্টমাক ওয়াশ দেয়া হয়। সে খানিক টা সুস্থ হয়েছিল। কথা ও বলেছে। দেন তোমার কন্যাকে নেয়া হয় জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে। ২৪ তারিখে তোমার মেয়েটি পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।

তার কি চিকিৎসা হলো ওখানে মা?

মাত্র ঐ কটি ঘুমের ঔষধ খেয়ে তিন দিন পর তোমার মেয়ে কেন মরবে মা? আর হ্যাঁ! তোমার মেয়ে জামাই তো এনেস্থেসিয়া চিকিৎসক !

তোমার আদুরে নাতনী, যে জীবনের পুরোটাই বাবা থেকে দূরে ছিল, তাকে কেন তোমাদের কাছে দেয়া হলো না? সে পুরো ঘটনার সাক্ষী বলে?

তোমাকে এবং সব মাকে বলছি। আমার মেয়ে কষ্ট পেয়ে মরেছে। আর তাকে পোষ্ট মর্টেম করো না। কাটা ছেড়া করো না। এই সব ডায়ালগ দেয়া বন্ধ করো!

আরে কপালে কাটা ছেড়া নিয়ে আনলে তুমি কি করবে মা? কেন তার মৃত্যুটাকে মিথ্যের জালে জড়াতে দিচ্ছ? আত্মহত্যা পাপ। এই পাপ যদি সে নাই করে থাকে, কাপুরুষ হিসেবে এবং এই পাপের পাপী হিসেবে কেন তার আত্মাটাকে শাস্তি দেবে?

এই দেশে মেয়ের মায়েরা মেয়ের পোষ্টমর্টেমের জন্য রেডী হয়েই থেকো।

একজন সরকারী চিকিৎসকের এমন করুন অপমৃত্যুর পর সরকার কেন অপমৃত্যুর মামলা করবে না। রাষ্ট্র কেন তার নাগরিকের এমন অকাল অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার করবে না?

রিদ্দিতা মরে গেছে।

কিন্তু এমন হাজারো প্রশ্ন রেখে গেছে।

উত্তর বের করার দায়িত্ব আমাদের ডাক্তার সমাজের। রিদ্দিতার কন্যা মানহার সঠিক লালন পালন তদারকির দায়িত্ব আমাদির ডাক্তার সমাজের।

রিদ্দিতার মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা তা বুঝতে আর বোধ করি আমাদের শার্লক হোমস হতে হবে না। আর এই অপমৃত্যুর বিচারের দাবী আমাদের সকলের। ওর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার মিথ্যাচার বন্ধের দাবী ও আমাদের সকলের।

আর রিদ্দিতার অসহায় বিধবা বৃদ্ধা মাতার কিংবা অসহায় এতিম কন্যার এই দুঃখের সময়ের সাথী কি আমরা হতে পারি না?

ডাক্তার বলেই ওর অপমৃত্যু আজ সাংবাদিকদের কলমের ডগায় নাই। ডাক্তার বলেই নিউজের হেডলাইন এই মৃত্যু নয়।

আর ডাক্তার বলেই আমরা ডাক্তাররা ওর মৃত্যুর বিচার চাই। ওর মায়ের চোখের জল আর কন্যার দীর্ঘশ্বাসের হিসেব চাই।

ডা. রিদ্দিতা হত্যার সঠিক তদন্ত এবং ন্যায় বিচার চাই।

_______________________________

 

 


ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী
মেডিকেল অফিসার,

শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়