Ameen Qudir

Published:
2017-03-12 20:57:52 BdST

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে নারী তুমি প্রস্তুত?


 


ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী
_____________________________

আমার স্পষ্ট মনে আছে আজ থেকে এক যুগ আগেও মেডিকেল ছাত্রী থাকাকালীন আমার কোন মোবাইল ছিল না।প্রায় দুই শত ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে কেবল অল্প সংখ্যক ছিল যারা মোবাইল ব্যবহার করত!
জীবনটা তাহলে তখন কেমন ছিল?আমি বলব অসাধারন।আমার কিশোরী বয়সটা কেটেছে কেবল নিরানন্দ পড়াশুনা করে।আমি মুখ গুজে বই এ ডুবে থেকেই সব আনন্দ আহরন করতাম।না শুধু পড়ার বই নয়।গোয়েন্দা সিরিজ,রবীন্দ্রনাথ,বঙ্কিম,শরৎচন্দ্র,শীর্ষেন্দু,সমরেশ,সুচিত্রা এদের সাথে যেন চায়ের আড্ডা বসত!আর হুমায়ুন আহমেদ তো বলতেই নেই।জীবন তাই কেটে যেত।

 

আমাদের মেডিকেল জীবনে ও শহরে এত রেষ্টুরেন্ট ছিল না,এত প্রোগ্রাম,পার্টি,হৈ চৈ,এত এত সেলফি এত এত ফটোসেশন কিছুই ছিল না।তাই বলে জীবন বসে থাকেনি।
গত কয়েক বছরের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষের সাথে সাথে আনন্দ বিনোদনের হাজারো উপকরন এখন আমাদের মুঠির মধ্যে।মুহূর্তে সমগ্র পৃথিবীটা ড্রইং রুমে আর ড্রইং রুমের বড় ঝুল পর্দাটা সরাতেই বেড রুমে!
এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য আমরা সকলে প্রস্তুত তো?


আমি বিশেষত নারীদেরকেই বলছি।আমরা কি প্রস্তুত?এখন ও অনেক মধ্যবয়সী মা রয়েছেন যারা এই উর্ধ্বগতির সাথে তাল মেলাতে পারছেন না।কিশোরী মেয়েটির হাতে দামী ল্যাপটপ আছে।সে তার বেডরুমে আছে।মা নিশ্চিন্ত।কিন্তু নিশ্চিন্ততার প্রহর যে কেটেছে তার বোঝার ই সাধ্য নেই।

আমার ছোট বোন যখন প্রাইমারী থেকে গার্লস স্কুলে প্রচন্ড কঠিন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিল,আমার বাবা বলেছেন,ফার্ষ্ট হতে পারলে তোমাকে স্বর্নের চেন দিব।আমার বাবাকে চেন দিতে হয়েছিল।
এ বছর শুনলাম সেই ভর্তি পরীক্ষায় শুধু চান্স পাবার পর বাবা ট্যাব কিনে দিয়েছে!এক তৃতীয় শ্রেনীর বাচ্চা সাফল্যে যদি ট্যাব পায়,তাকে আর পড়বার সুযোগ তো আমি ই কেড়ে নিচ্ছি।

 

আমি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করবার সময় এক মেয়েকে দেখেছিলেম।ওর তথাকথিত প্রেম,ঝগড়া,প্রেমিকের প্রতিশোধ কিছুই বাড়ীর লোক জানে না।মেয়ে স্কুলে যায়।এসব এক আধটু হতেই পারে।তাদের মাথায় বজ্রাঘাত হলো যেদিন বাড়ীর ই কেউ দেখে এল ঐ মেয়ের ভিডিও নেট থেকে।ঝগড়ার পরে সরি লিখে মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে বন্ধুরা মিলে তাকে রেপ করে এবং ভিডিওটি লিক করে।
আগের যুগে চার টা বাচ্চা একত্র হলে হৈ চৈ এ কান পাতা দায় হতো।এখন চলে আসে কবরের নিস্তব্ধতা।ছোট ছোট শিশু নেশাখোরের মত ডুবে আছে গেম বা রাইমে!

 

বরাবরের মত যাদের নিয়ে ভয়টা সবথেকে বেশী তারা নারী।আমি বলতে কষ্ট বোধ করলেও এই সমাজে এখন ও নারীরাই সব অপ্রীতিকর ঘটনার প্রথম শিকার।নারী মায়ের জাতি,নারী সম্মানিত হলেও প্রকৃতির তৈরী নারীর শত ভাঁজের শারীরীক গঠন তো বদলে যায়নি!বদলে যায়নি কিছু লোভী কামুক পুরুষের লিপ্সা।বরং অনেক বেশী সুযোগ তাদের হস্ত মুঠিতে!
তাই তুমি মা,বোন,মেয়ে যেই হও,আমি তোমাকেই বলছি।তোমার হাতে আই ফোন।পার্সে ট্যাব।টেবিলে ল্যাপটপ!তোমার স্ক্রীন জুড়ে ফেসবুক,মেসেঞ্জার,হোয়াটস আপ,ইমো,ভাইবার,স্কাই পি আরো কত কি!
একটু হাই!হ্যালো!
ফেসবুকের কমেন্ট পর্যন্ত ঠিক ই ছিল।দেন এলো ম্যাসেঞ্জারে!আজ এক কথা।কাল দুই কথা।কবিতার কলি।গানমালা।শেয়ারিং।
তোমার জন্য ফেলা টোপ তুমি ধীরে ধীরে গিলছ।এ এক বরশী বরশী খেলা চতুর খেলোয়ারদের।

তুমি টিন এজ।মা বকল,বাবা বকল কিংবা বাবা মায়ের ঝগড়া - কষ্টটা শেয়ার করছ কোন আধ বুড়ো জিনিয়াস কে।সে তোমার সব শুনছে।শান্তনা দিচ্ছে।তুমি খুঁজে নিচ্ছ আশ্রয়।আবেগ তাড়িত হচ্ছো।এক সময় তুমি শব্দের কথামালা থেকে ছবিতে এলে।ছবি রেখে ভিডিও।দেন একদিন জীবন্ত ভেসে উঠলে স্ক্রীন জুড়ে।আবেগ বাড়ল।নির্ভরতা বাড়ল।তুমি বিশ্বাস করলে তাকে।ইথারের তরঙ্গ বেয়ে তোমার একান্ত গোপন কিছু গোপনে সংগ্রহ হলো তার কাছে।


পরবর্তীতে তুমি শুধুই নরকে জ্বলবে।তোমার ই পাঠানো ভিডিও তোমাকে বাধ্য করবে তার সাথে বিছানায় যেতে।হয়ত কোন গোপন ক্যামেরায় এটাও সংরক্ষিত হবে।এর পরের ধাপ হয়ত তুমি তার অঙুলি ইশারার একটা পুতুল মাত্র।
অভিমানী,আহ্লাদী,জেদী পুতুল তুমি?মাত্র কয়েকদিনেই হয়ে গেলে কারো নষ্ট খেলার পুতুল।

 

তুমি চাকরীজীবী?বিবাহিতা?ডিভোর্সড?অবিবাহিতা?একা থাকো?স্বামী বিদেশে?স্বামী ব্যস্ত?বাচ্চা নেই?তোমার সাথে আলাপ জমানো আরো সহজ।একটু সময় নিয়ে তোমার দুর্বলতাটা জানা।জন্মদিনে মন খারাপ।একটু ছোট্ট চমক।তারপর গল্প।শেয়ারিং।এক সময়ে প্রেম নিবেদন।নিজেকে অসুখী আর তোমার বাহুডোরে সব সুখের ঠিকানা বলে তোমাকে বিলিভ দেয়া।
তুমি জানতেই পারছ না খুব রাশভারী তুমি - কলেজের শিক্ষিকা,ব্যাংক ম্যানেজার,পুলিশ কর্মকর্তা,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা বা ডাক্তার সব কিছু ভুলে গিয়ে আর্ট ফিল্মের চরিত্র হতে চলে গেছ নির্জনে।লোকালয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচবার মুখ আর তোমার থাকবে না।

নারী,তুমি মনে রেখ তুমি পন্য না।অন্য কেউ একা তোমাকে পন্য বানাতে পারবে না,যতক্ষন না তুমি নিজে তোমাকে ভুল জায়গায় প্রেরন করবে।
নারী স্বাধীনতা বা নারী জাগরন মানে প্রকৃতি বিরোধিতা না।তোমার শরীর বিধাতা প্রদত্ত উপহার।তোমার শরীর মন তুমি অপাত্রে সমর্পন করো না।
তোমার পারিবারিক,ধর্মীয় এবং একাডেমিক শিক্ষা যেন তোমার চারিদিকে এক স্বর্নোজ্জ্বল বর্ম তৈরী করে দেয়,যা তোমাকে সৎ এবং সুন্দর জীবন যাপনে সাহসী করবে,কারো পদতলে মাথা নত করতে বাধ্য করবে না।

 

নারী তুমি অপার শক্তির আঁধার।নারীর লোভ আর ভোগ বিলাস ই পুরুষের অস্ত্র।যদি সব নারী সম্মান,সম্ভ্রমের জন্য ত্যাগ স্বীকারে ব্রতী হতো সমাজে মন্দ পুরুষগন আত্মাহূতি দিতে বাধ্য হতো!কেবল মহাপুরুষগন ই বেঁচে থাকতো।

তাই বর্তমান পৃথিবীতে নারী তোমার জাগরন হোক আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিময় সমাজকে নিজের পদতলে স্থান দেয়া,কারো পদতলে নিজের স্থান নয়।কোন কিছুর বিনিময়েই নয়।।

___________________________________

ডা. শিরিন সাবিহা তন্বী । জনপ্রিয় লেখক-কলামিস্ট । পেশাজীবী নেতা।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়