Ameen Qudir

Published:
2017-03-07 18:30:06 BdST

মেয়ে বলেই


 



ডা. নাসিমুন নাহার
________________

মেয়ে বলেই ছোটবেলায় পুতুল আর হাড়িপাতিল খেলা, শীতকালে বাসার ছাদে বড়জোর ব্যাডমিন্টনটা চলতে পারে।মেয়ে শিশু বলেই তুমি দেখবা সিন্ড্রারেলা নাহয় মীনা কার্টুন।

মেয়ে বলেই ক্লাস সিক্স সেভেন থেকে তোমার পোষাক বদলে যাওয়া,হাঁটার গতি, হাসির শব্দ, গলার ভয়েস কমে আসা।

মেয়ে বলেই তোমার ছোটবেলার খেলার বন্ধুরা, কাজিনরা, পাশের বাসার দুষ্টুমির সঙ্গী ছেলেদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিবা।
হঠাৎ করেই তোমরা জানবা-- তোমরা ছেলে এবং মেয়ে !

মেয়ে বলেই স্যারের বাসায়/কোচিং এ/হুজুরের কাছে/গানের ড্রইংয়ের শিক্ষকের কাছে, পাশের ফ্ল্যাটে যাবার সময়ে সাথে করে তোমার থেকে বয়সে ছোট ভাইটাকে বডিগার্ড হিসেবে নিয়ে যাবা ।

মেয়ে বলেই তোমাকে অবশ্যই রান্নাবান্না শিখতে হবে ভবিষ্যতের জন্য।

মেয়ে বলেই তুমি বড় হয়ে হবা শিক্ষক এবং ডাক্তার (আমাদের সমাজের কমন চয়েস)।শিক্ষকেরা ঘর সংসারে ভালো সময় দিতে পারেন বলে সবার ধারনা, ঝামেলাহীন পেশা। আর অন্য দিকে বিয়ের বাজারে ডাক্তারী পড়ুয়া মেয়েদের বিশাল চাহিদা।পাত্র থেকে শুরু করে হবু শাশুড়ি আম্মাদের প্রথম পছন্দ ডাক্তার বৌমা।তবে পেশাগত জীবনে এবং পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে তারা যে কতটা সহমর্মিতা দেখান তা এক চরম গবেষণার বিষয় বৈকি !

মেয়ে বলেই তুমি বাচ্চা , ঘর সংসার একহাতে সামলে রাখবে, তা যতই চাকরি বাকরি কর না কেন ! প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দিয়ে হলেও অথবা চাকরিতে থেকে হলেও।

মেয়ে বলেই অফিস ফেরত তুমি ঢুকবা রান্নাঘরে,ঘর গোছাবা, দরকার হলে বাজার সদাই করবা, বুয়া না এলে তুমি বুয়া হবা, প্লিজ বুয়া অসুস্থ হলেও তুমি কিন্তু অসুস্থ হতে পারবা না, বাচ্চাকে হোম ওয়ার্ক করাবা, সামাজিকতা আত্মীয়তা মেইনটেইন করবা।
আর যদি তুমি হও হোম মেকার তাহলে তো হলোই----তুমি কি বুঝবে দুনিয়াদারি/ সারাদিন থাক তো ঘরের মধ্যে আরামে/ খবর রাখ কোন কিছু/ টাকা রোজগার করে দেখেছ কেমন লাগে !! 24/7 হিসেবে চলবে সারা বছর ধরে তোমার Thanks less বিনে পয়সায় বিনে সম্মানের দায়িত্ব পালন করা।

মেয়ে বলেই তুমি রাগ, অভিমান, মন খারাপ করতে পারবা না।লোকে তাহলে বলবে -- তুমি ঢং করছ।তোমাকে সব সময় স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করতে হবে।

মেয়ে বলেই তোমাকে মান সম্মান লক করে রাখতে হবে নিজের মনের ভেতরে।

মেয়ে বলেই বাবা মার পরিবার, স্বামীর পরিবার সবার সম্মানের কথা তোমাকে অবশ্যই ভাবতে হবে।নিজে কোন কারণে অন্যায়ের শিকার হলেও চুপ হয়ে যাবা।
ভালো মেয়েরা সবকিছু হজম করে।এ ব্যাপারে ছোটবেলায় আমাদের আম্মুরা বিশাল ট্রেনিং দিয়ে ইস্যুটা আমাদের মগজের একদম ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

মেয়ে বলেই মা হয়ে যাবার পরে আমরা নিজের যত্ন নেই না--সময় কই ! নিজের জন্য ভাবি না ! নিজেকে সময় পর্যন্ত দেই না ! নিজের স্বপ্নের কথা কখনো বলি না।

যাহোক মেয়ে বলেই তুমি শেষ পর্যন্ত সম্ভবতঃ টিকে যাবা হয় মাথা উঁচু করে নাহয় মাথা ঝুঁকিয়ে।প্রতিকূল পরিবেশে মেয়েদের survive করার পার্সেন্টিজ খুব ভালো ! প্রকৃতি আমাদের হেলাফেলায় তৈরি করে নাই।যথেষ্ট ধৈর্য, সহ্য, ক্ষমতা, শক্তি, বুদ্ধি, বিবেক, বিবেচনা, মায়া মমতা এবং সবথেকে বড় কথা সন্তান ধারনের মতো সম্মান দিয়েছে। সুতরাং নিজেকে explore করুন।নিজের জন্যও বাঁচুন।
আশেপাশের সবাই কে ভালো রাখতে যেয়ে নিজেকে ঠকাচ্ছেন কিনা বুঝতে চেষ্টা করুন। নিজেকেও একটু ভালোবাসুন।


_______________________________

লেখক ডা. নাসিমুন নাহার । দেশের জনপ্রিয় কলাম লেখক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়