Ameen Qudir

Published:
2017-03-04 15:11:22 BdST

অবিলম্বে সব ডাক্তারের এম আর আই করে দেখা দরকার, মেরুদন্ডটা কোথায় আছে?


 

দেশ বরেণ্য বিতার্কিক ও মিডিয়া পারসন ডা. আব্দুন নূর তূষার বগুড়া মেডিকেলের ঘটনায় মিডিয়ার জন্য একটি সুলিখিত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। বলেছেন, মেরুদন্ড থাকলে এখনি প্রতিবাদ করেন।

ডা. আব্দুন নূর তূষার
_______________________________

 

বগুড়ার মেডিকেল কলেজটিতে চারজন ইন্টার্ন ডাক্তার তাদের ট্রেনিং থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন।

তাদের অপরাধ তারা একজন ইভটিজার যিনি কোন রোগীর আত্মীয়, তার টুটি চেপে ধরেছিলেন, হয়তো হালকা পাতলা প্রহারও করেছিলেন।

সেই আত্মীয়টির বক্তব্য তিনি রোগীর উপরে থাকা ফ্যানটির সুইচ কই সেটা জানতে চেয়েছিলেন।

মহিলা চিকিৎসকের বক্তব্য সেই লোকটি তাকে ”মাল” বলেছেন ও আরো নানারকম অপমানজনক কথা বলেছেন।

১. রোগীর মাথার উপরে ফ্যান চালাতে হলে পাশের বেডের আত্মীয়, নার্স, ওয়ার্ড বয়কে জিজ্ঞাসা করা যায়। এটা খুব বেমানান যে ফ্যানের সুইচ কই সেটা ডাক্তারের কাছে জানতে চাইতে হবে। তার চেয়েও বড় কথা দেয়ালে যেখানে সুইচ আছে সেটা সহজেই দেখা যায়। ফলে সেটা কাউকে জিজ্ঞাসা করার দরকারই পড়ে না।

২. তার মানে যে কোন কারনেই হোক , সেই লোক মহিলা ডাক্তারটিকেই জিজ্ঞাসা করতে চেয়েছে ফ্যানের সুইচ কোথায়। বিষয়টি কেমন যেন অস্বাভাবিক।

৩. মহিলা ডাক্তার শুনলো যে তিনি মাল বলেছেন, এবং অশ্লীল কথা বলেছেন।ওয়ার্ড ভর্তি এত লোক থাকতে কেন মহিলা ডাক্তার এই লোকটির কথাই বলবেন? এই লোকটির সাথে তো তার কোন পরিচয় বা পূর্ব শত্র ুতা নাই।

৪. মেয়েরা সাধারনত যথেষ্ট পরিমানে উত্যক্ত না হলে বিষয়টি ইগনোর করেন। কারন কুৎসিত মনোজগতসম্পন্ন কিছু পুরুষ তাদের সর্বত্রই নানাভাবে উত্যক্ত করেন। প্রতিটি মেয়ের জীবনে এরকম কুকথা শোনার অভিজ্ঞতা আছে। তাই সেই আত্মীয় তাকে নিশ্চয়ই যথেষ্ট পরিমানে বাজে কথা বলেছেন। নইলে সাধারনত মেয়েরা এটা এড়িয়ে যায়।

৫. কার্যকারন বিবেচনায় পরিস্কার মনে হচ্ছে যে লোকটি আসলেই বাজে কথা বলেছে।

৬. এবার বাজে কথা বললে যদি ডাক্তার বন্ধুরা তার টুটি চেপে ধরে থাকে সেটা হয়তো আইন হাতে তুলে নেয়া হয়েছে। কিন্তু নিজের বোন বা বন্ধুকে এমন নাজেহাল হতে দেখে চুপ করে বসে থাকা কি সম্ভব ?

৭. এই অপরাধে কি তার ট্রেনিং নিষিদ্ধ হতে পারে? এটা কি কোন অ্যাকাডেমিক অসততা বা কোন রোগীকে ইচ্ছাকৃত ভুল চিকিৎসা করার মতো অপরাধ?

৮. ইভটিজিং ও কাউকে মারা, দুটোই ফৌজদারী অন্যায় । এটার জন্য মামলা হলে এই ডাক্তাররা সেটা কোর্টে গিয়ে লড়বে। মন্ত্রী কেন ট্রেনিং বাতিল করতে বলবেন?

ক) মাননীয় মন্ত্রী স্বৈরাচারের মত তাদের ট্রেনিং ক্যান্সেল করার অধিকার রাখেন কি?

খ) প্রতিটি হাসপাতালে রোগীর সাথে একাধিক আত্মীয়ের আনাগোনার ব্যাপারে তিনি কি কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন?

গ) রোগীর সাথে অ্যাটেনডেন্ট একজন আসতে পারে, হাসপাতাল কি বেড়ানোর জায়গা?

ঘ) প্রতিটি হাসপাতালে , স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে , ইউনিয়ন কেন্দ্রে, ডাক্তাররা নিরাপত্তাহীন। কয়েকদিন পরপর ডাক্তারকে নাজেহাল ও প্রহারের সংবাদ। এটা অসম্ভব যে প্রতিটি ঘটনায় ডাক্তারই দোষী। আর ডাক্তার দোষী হলে কি তাকে প্রহার করা জায়েজ? এসব ক্ষেত্রে দোষী লোকদের কাউকে শাস্তি দেবার ব্যাপারে মন্ত্রী কি করেছেন?

কয়েকদিন আগে ঢাকা মেডিকেলে যারা লিফট ভাংলো তাদের ধরার জন্য মন্ত্রী সাহেব কি করেছেন? সরকারী সম্পত্তি ভাংচুর করে তারা পার পেলো কেন?

আমার এসব প্রশ্ন করার কথা না। আমি ডাক্তারী করে জীবনেও পয়সা নেই নাই। চাকরি করি না, প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করি না। আমি ভোটে দাঁড়ালে ডাক্তাররা আমাকে শুণ্য ভোট দেবেন।

ডাক্তাররা যাদের ভোট দেন, তৈলমর্দনের জন্য পেছন পেছন ঘোরেন, ব্যানার পোস্টারে ছবি ছাপেন, সেইসব তৈলাক্ত নেতারা এখন কি করছেন?

ভোট ছাড়া মনোনীত লোকজন দিয়ে নেতাগিরি করলে এরকমই হবে।

অবিলম্বে সব ডাক্তারের এম আর আই করিয়ে দেখা দরকার, মেরুদন্ডটা কোথায় আছে?

মেরুদন্ড থাকলে এখনি প্রতিবাদ করেন।

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তবঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।

অন্যায় করবেন না , সহ্যও করবেন না। করলে আপনাদের কপালে এরকমই হবে।

অবিলম্বে সকল ইন্টার্ণদের প্রতি অন্যায় শাস্তি বাতিল করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ যদি তাদের অধীনস্থ চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে না পারেন তবে তারা তাদের অপারগতা স্বীকার করুক। সন্যাসি হোক। বনবাসী হোক। কারন অত্যাচার মেনে চুপ করে থাকা তো সন্যাসব্রতের লক্ষন।

বি: দ্র: (শাহজাহান খান সাহেবকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী করা হোক। ড্রাইভাররাও তাদের নেতা ঠিকমতো নির্বাচিত করে, ডাক্তাররা পারে না।)

_______________________________

ডা. আব্দুন নূর তূষার; জনপ্রিয় মিডিয়া পারসন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়