Ameen Qudir

Published:
2017-03-01 18:50:29 BdST

আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ৪০০রবেশি রোগীর বিনামূল্যে প্রস্টেট অপারেশন



টুটুল রহমান
__________________________

বিষয়টি চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়। রোগ মুক্তির পর রুগীর মনে যে প্রশান্তির ছায়া পড়ে সেই চিত্রই ফুটে উঠল বিনামূল্যে প্রস্টেট অপারেশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে। বিনামূল্যে রোগ থেকে মুক্তির কথা জানাতে গিয়ে অনেকের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। অনেকেই আবেগে হয়ে পড়লেন বাকরুদ্ধ।


শুধু ঢাকার রোগীই নয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন প্র¯্রাব জনিত সমস্যায় ভুগছেন এমন বয়স্ক পুরুষ রোগীরা। একমাস ধরে বিনামূল্যে এসব রোগীদের অপারেশন থেকে শুরু করে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিয়েছে ঢাকার আদ্-দ্বীন হাসপাতাল। গত ২৮ ফেব্রæয়ারী ২০১৭ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অডিটরিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল সমাপনি অনুষ্ঠানে। এতে রোগীরাই জানালেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা। ব্যতিক্রমধর্মী এই অনুষ্ঠানের মধ্যমনি ছিলেন রোগীরাই।


বক্তব্য রাখেন আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং ইউরোলজী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আফিকুর রহমান, এডভাইজার (অধ্যক্ষ) এবং সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. এ. আশরাফ আলী, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এম. এন. নাগ, পরিচালক-রেগুলেটরী এ্যাফেয়ার্স ডা. আনোয়ার হোসেন মুন্সী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে সেবা নিতে আসা রুগী মোহাম্মদ আলী জানালেন, “বেশ কিছুদিন আগে তার প্র¯্রাব বন্ধ হওয়ার সমস্যাটি দেখা দেয়। নারায়ণগঞ্জে প্রাথমিক সেবা নেয়ার পর তাকে জানানো হয় অপারেশন করতে হবে। যার খরচ ৫০,০০০.০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা। খরচের কথা চিন্তা করে বিমর্ষ হয়ে পড়েন তিনি।


অনেকটা আবেগ আপ্লুত মোহাম্মদ আলী বলেন, সেই সময়ে আমার পকেটে ৫০ টাকাও ছিলনা। পরবর্তীতে পত্রিকার মাধ্যমে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের মাসব্যাপী এই কার্যক্রমের খবর জানতে পারি। বয়ষ্ক দরিদ্র পুরুষ রোগীদের বিনামূল্যে অপারেশনের কথা শুনে ছুটে আসি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা করে এবং এই রোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের সেবায় আমি খুব খুশি। সরকারকে অনুরোধ করব আদ্-দ্বীন হাসপাতালকে যেন সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন যাতে তারা এ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে”।

চাঁদপুর থেকে আসা আইয়ুব আহমেদ জানালেন, “আদ্-দ্বীন হাসপাতালে আসার আগে ১৭ দিন অন্য হাসপাতালে ছিলাম। তারা পর পর ২ বার আমার অপারেশন করে জানায়, আমার পাথর উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে এক্সরে রিপোর্টের মাধ্যমে জানতে পারি আমার পাথর রয়ে গেছে। প্রচন্ড কষ্ট পাই আমি। বিজ্ঞাপন দেখে ছুটে আসি আদ্-দ্বীন হাসপাতালে। এখানকার চিকিৎসা সেবা, ওষুধ, খাবার মানসম্মত। আমি বড় খুশি হয়েছি। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ দেশের অন্যান্য হাসপাতালেও যেন বিনামূল্যে এ ধরনের চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়। তাতে আমাদের মতো দরিদ্র, বয়ষ্ক রোগীরা বড়ই উপকৃত হবে।

বরিশাল থেকে আসা এ কে এম সামছুদ্দিন খান বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে যাতায়াত করেছি। এ হাসপাতালের মতো সেবা কোথাও পাইনি। এ হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, কর্মীদের সেবা দেওয়ার মানসিকতা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত কোন হাসপাতালে পাওয়া যায় না। আদ্-দ্বীন হাসপাতালের এই সেবা বিশ্বের মডেল হয়ে থাকবে”।

ঢাকার রোগী কাজী জাফর আহমেদ বলেন, “১০/১২ বছর ধরে প্রসাব সমস্যাজনিত রোগে ভুগছি। অনেক হাসপাতালে অপারেশন করাতে ৪০-৪৫ হাজার টাকা লাগে। কোন হাসপাতালে বিনামূল্যে এ অপারেশন হয় তা কখনো শুনি নাই। আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম থাকলেও এ ধরনের সেবার ব্যবস্থা নাই। সরকারের কাছে অনুরোধ প্রত্যেকটি বৃদ্ধাশ্রমে এ ধরনের সেবা চালু করুন”।
রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারার এই সমাপনী দিনকে নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন উল্লেখ করেন এই উদ্যোগের সফল রুপকার অধ্যাপক ডা. মো. আফিকুর রহমান। বলেন তাঁর চিকিৎসক হয়ে ওঠার পেছনের গল্প। জানান, তাঁর বাবা ছিলেন একজন আর্মি অফিসার। এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে কাজ করার সময়ে এক চিকিৎসক দম্পত্তিকে দেখে নিজের সন্তানকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন দেখেন তাঁর পিতা মাতা। সেই স্বপ্নের ফসল তিনি। পরবর্তীতে তাঁর পিতা প্রস্রাব জনিত সমস্যা রোগে ভুগেন। তখন তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নী করছিলেন। পিতার সেই কষ্ঠের স্মৃতি আজও তাকে তাড়িত করে। বাবার উপদেশেই তিনি পরবর্তীতে ইউরোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেন। হয়ে ওঠেন একজন প্রখ্যাত ইউরোলোজিস্ট। পিতার সেই প্রোস্টেট জনিত কষ্ট অনুভব করেন বলেই রোগীরা সবাই তার পিতৃতুল্য। সেবা প্রদানকে দেখেন কর্তব্য হিসেবে।
তিনি বলেন, আপনারা এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে এসেছেন বলে ভাববেন না আপনারা গুরুত্বহীন। বরং যারা পয়সা দিয়ে সেবা নেয় তাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনারা। পয়সা দিতে পারেন না এটাই আপনাদের ক্রেডিট। এ হাসপাতালের জন্য আপনারা ভিভিআইপি। প্রোস্টেট অপারেশনের সঙ্গে আমার আবেগ জড়িত। আমি যতদিন বেঁচে আছি এ সেবা দিয়ে যাবো। উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য বিশ্বের যে কোন জায়গায় যেতে হলে আমি যাবো।
তিনি আরো বলেন, এই বিনামূল্যে প্রোস্টেট অপারেশনে আমার চাইতে এ হাসপাতালের কর্মীদের অবদান বেশি বলে আমি মনে করি। তারা রাত/দিন পরিশ্রম করে রোগীদের সুস্থ করে তুলেছে। বেডের স্বল্পতার কারণে অনেক রুগীকে সেবা দিতে পারি নাই এ দু:খ মনে রয়ে গেলো। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমি প্রতি মাসে ২ জন রোগীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এ অপারেশন করাবো বলে আশা করছি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় মাসব্যাপী এই চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে ৪০০ জনের বেশি রোগী সেবা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে অধ্যাপক ডা. আফিকুর রহমান নিজের তত্ত¡াবধানে ৭৫ জন রোগীর অপারেশন করেন। আরো ৫ জন রোগীর অপারেশন করানো হবে। গত ১লা ফেব্রæয়ারী ২০১৭ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যের এ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম গ্রহণ করে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল। সারাদেশের রোগীদের মধ্য থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায় ।

___________________________

টুটুল রহমান
কনসালটেন্ট (মিডিয়া)
আদ্ব-দীন হাসপাতাল

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়