Ameen Qudir
Published:2017-03-01 16:17:43 BdST
দুর্ঘটনার শিকার যুবককে গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন মানবসেবী চিকিৎসক
শুভ্রবিকাশ নন্দ
_____________________
পথ দুর্ঘটনার শিকার এক যুবককে নিয়ে যেতে রাজি নয় কেউ। রবিবার রাতে কামালগাজি উড়ালপুলে এ দৃশ্য দেখে আর সময় নষ্ট করেননি চিকিৎসক। সঙ্গে সঙ্গে নিজের গাড়িতে তুলে ওই যুবককে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। যাকে বাঁচানোর জন্য এত চেষ্টা করলেন সেই রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়েছে, সোমবার রাতে এ খবর শোনার পর কার্যত ভেঙে পড়লেন আর এন টেগোর হাসপাতালের অস্থিরোগ বিভাগের প্রধান সূর্যউদয় সিংহ।
বললেন, ‘‘যদি আর একটু আগে নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে পারতাম, হয়তো বেঁচে যেতেন ওই যুবক।’’
নরেন্দ্রপুরে একটি আবাসনে থাকেন সূর্যউদয়।
রবিবার রাতে হাসপাতাল থেকে তিনি খবর পান ৯৩ বছর বয়সি এক বৃদ্ধের জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হবে। খবর শুনেই গাড়ি নিয়ে রওনা হয়েছিলেন হাসপাতালের উদ্দেশে। কামালগাজি উড়ালপুল দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান একটি মোটরবাইক এবং পড়ে থাকা এক যুবককে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েকজন। বেশ কয়েকটি মোটরবাইক থাকলেও তাঁদের কারও কাছে কোনও গাড়ি ছিল না। বেশ কয়েকটি গাড়িকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন কয়েকজন যুবক। কিন্তু রাহুলকে গাড়িতে তুলে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি ছিলেন না কেউ।
সূর্যউদয় বলেন, ‘‘আমি প্রথমে কিছুটা ধন্দে ছিলাম। দু’টি প্রাণ বাঁচানোই প্রয়োজন। কী করব! আমি হাসপাতালে ফোন করে পুরো বিষয়টি আমার সহযোগী চিকিৎসকদের জানাই। তাঁদের বলি, ওই বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে। আমি গাড়ি চালিয়ে ওই যুবককে স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যাই।’’
রাহুলকে কেন কেউ গাড়িতে তুলতে রাজি হচ্ছিলেন না? পুলিশি হেনস্থার ভয়, নাকি শহর ক্রমশ অমানবিক হচ্ছে?
এক নামী চিকিৎসকের অনুপ্রেরণায় দিল্লি, মুম্বইয়ের পরিবর্তে কলকাতাকেই কাজের জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়া সূর্যউদয়ের বক্তব্য, ‘‘মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ শহর এখনও অনেক বেশি মানবিক। আমি চিকিৎসক হিসাবে নয়, একজন নাগরিক হিসাবেই ওই যুবককে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি জানতাম না কী তাঁর পরিচয়।’’
রাহুলকে স্ট্রেচারে তোলার পরই আর এন টেগোরে পৌঁছেছিলেন সূর্যউদয়। সেখানে ওই বৃদ্ধের অস্ত্রোপচার সেরে বাড়ি ফিরেছিলেন রাত ৩টের সময়। এদিন সন্ধ্যায় কামালগাজির পথ দুর্ঘটনার পুরো বিবরণ শুনে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পথ দুর্ঘটনায় আহত কাউকে নার্সিংহোমে পৌঁছে দেওয়ার পর পরিচয় প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক নয়— এই বার্তাটা পৌঁছে দেওয়া খুব প্রয়োজন।’’
_______________________________
শুভ্রবিকাশ নন্দ , কলকাতা।
এ বেলার সৌজন্যে।
আপনার মতামত দিন: