Saha Suravi
Published:2025-01-03 09:52:59 BdST
অপরিসীম প্রতিভাবান লেঅনার্দো দা ভিঞ্চি
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
_____________________
র্যনেসঁস যুগের দিকপাল মনীষী লেঅনার্দো দা ভিঞ্চির কথা। অসাধারণ প্রতিভাশালী এই মানুষ টি শুধু মোনালিজা আর Cena ultima, চেনা উলতিমা ( ইং, লাস্ট সাপার) ছবি আঁকার জন্যেই তিনি মানব সভ্যতার ইতিহাসে অমর হয়ে থাকতে পারতেন। কিন্তু মানুষ টি ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, স্থাপত্যবিদ, শরীরতত্ত্ববিদ, বিজ্ঞানী এবং যুদ্ধাস্ত্র বিশারদ। আকাশে উড়বার উপযোগী কিছু যন্ত্রের স্কেচ এবং ড্রইং ও তিনি রেখে গেছেন উত্তরকালের উদ্দেশ্যে।
তিনি একটি ' নোটবই ' রেখে গেছেন উত্তর কালের মানুষজনের জন্যে। আর কি নেই সেই নোটবই তে? -- কিভাবে ট্যাঁকশালে মুদ্রার ওপরে ছাপ দিতে হয়, পরিপ্রেক্ষিতের যাদুতে কিভাবে দ্বিমাত্রিক ছবিতে ত্রিমাত্রিক আভাস আনা যায়, মানবদেহে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস বা জরায়ুর কার্যকারিতা, ভ্রুণের ক্রমবিকাশ, লেদমেশিন, জীবাশ্ম, লেন্স ঘষার সহজ পদ্ধতি, কর্তিত বৃক্ষকাণ্ডের বলয়রেখা গুনতি করে গাছের বয়স নির্ণয় ইত্যাদি, ইত্যাদি এবং শুধুই --- পাগলা ষাঁড়ে করলে তাড়া কেমন করে ঠেকাব তায় বিনে, এমনকি হটাৎ ওঠা ঝড়ের কবল থেকে পালতোলা জাহাজ কে কিভাবে বাঁচানো যাবে --- সঅব।
প্রায় সারাটা জীবন ধরে ৫ হাজার পৃষ্ঠাব্যাপী এই নোটবই তিনি রচেছিলেন ইতালিয় ভাষায়, কিন্তু আদ্যন্ত উল্টো করে, যা শুধু পড়া যায় আয়নায় বা দর্পণে উল্টো করে ধরলেই পড়া যায়!! বক্তব্য সর্বত্র সচিত্র, পাতায় পাতায় ছবি, হবেই যে। জাত আর্টিস্ট তিনি ---- ভাষার চেয়ে ছবি এঁকে বোঝান আরো সহজে।
লেঅনার্দোর জীবনী তে দেখছি যে তিনি ন্যাটা বা বেঁয়ো ছিলেন, আর এই উল্টো করে লেখা আরম্ভ করেন, ২১ বছর বয়েস থেকে। তাঁর অধিকাংশ সৃষ্টি বাম হাতে লেখা বা আঁকা। হয়তো তাঁর এই স্বাভাবিক বামপন্থা কে বাল্যে ও কৈশোরে ধমক দিয়ে নিয়ন্ত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। বয়ঃপ্রাপ্তির পরে তিনি বাম হাতে লিখতে এবং আঁকতে শুরু করেন। এদিকে এতদিনে তাঁর ডান হাতটিও দিব্য রপ্ত হয়ে গেছে। ফলে হলো কি তিনি বিশ্বললিতকলার এক বিচিত্র বিস্ময় বিপুল বিশাল বিশেষ ব্যতিক্রম হয়ে থাকলেন --- একমাত্র প্রকৃত সব্যসাচী। কি বলি একাধারে সোবার্স আর সচিন তেন্দুলকার।
আরো একটা জিনিস লক্ষ্য করার মতো। তিনি ছবিতে শেড আঁকতেন উল্টো দিক থেকে। আমরা আম আদমি, বাম থেকে ডানে এবং ওপর থেকে নীচে টান দিয়ে শেডিং ( বা ছায়াপাত) করি, অথচ লেঅনার্দোর যে কোন স্কেচ লক্ষ্য করে দেখুন -- শেড রেখা পড়েছে ডান থেকে বামে এবং নীচ থেকে ওপরে, যেন সেমেতিক হিব্রু বা আরবি লেখা হচ্ছে।
একটা ব্যক্তিগত কথা উল্লেখ না করে পারিনি, যদিস্যাৎ একান্তই এলেবেলে।
আম্মো জন্ম বামপন্থী। এবং আমার প্রয়াতা মা র কাছে, আমার শৈশবে বাম হাত দিয়ে লেখা এবং খাওয়া এক বিকট বিষম অপরাধ ছিলো। আমি বাধ্য হয়েছি ডাইনে হতে। কৈশোরে ফুটবল খেলতে গিয়ে আগে যেত আমার বাঁ পা, ক্রিকেট খেলতে আমার বাম হাত। এখনো এই বয়সেও আমি বাঁ হাতেই চুল আঁচড়াই, বাঁ হাতেই প্রতিদিন গোঁফ দাড়ি কামাই। ডান হাতে সুবিধা হয় না এখনো।
তা বাঁ হাতে তো অনেকেই লেখেন, তাঁরা তো মিরর ইমেজ বা দর্পণ প্রতিবিম্বে লেখেন না আদৌ। এতো বাড়াবাড়ি কেন তাঁর? নি:সন্দেহে তার কারণ গোপনীয়তা। জোর্দানো ব্রুনো কে যখন জীবন্ত দগ্ধ করা হয়, তখন লেঅনার্দো ৪০। তার পূর্বের অনেক বিজ্ঞানীর নিগ্রহের কথা তিনি জানতেন।
মানবদেহের অভ্যন্তর জানার জন্য তিনি অন্ততপক্ষে ৩০ টি শব ব্যবচ্ছেদ করেছেন। তাঁর আশঙ্কা ছিল যে বৈপ্লবিক চিন্তাধারা চার্চ সহ্য করবে না। ধরা পড়লে জীবন্ত দগ্ধ হবার সম্ভাবনা তাঁরো ছিল বৈকি। এছাড়া যাতে তাঁর মৌলিক গবেষণা যাতে চুরি না হয়ে যায়, সেজন্য ও ছিলো এই সাবধানতা। ইচ্ছা মতো রচনা করেছেন, যতিচিহ্ন ব্যবহার করেননি বাক্যে, সাঙ্কেতিক চিহ্ন ব্যবহারে দূর্বোধ্য করেছেন ইচ্ছে করে। কোথাও গাণিতিক ধাপ ডিঙিয়েছেন বা স্টেপ জাম্প করেছেন ; কোথাও বা চার অক্ষরের ' ধারাগোল ' না লিখে লিখেছেন : পায়ে ধরে সাধা, রা নাহি দেয় রাধা।।'
কেন এই এত সুরক্ষা ও গোপনীয়তা? এই বিচিত্র শৈলী? হেতু : গোপনীয়তা এবং নোটবই বা পাণ্ডুলিপি! লেঅনার্দো কখনো দুর্বোধ্য হয়েছেন, দর্পণ প্রতিবিম্বে বা মিরর ইমেজে লিখেছেন স্রেফ এইজন্যে যে, এই সব রচনার পাঠক তো তিনি নিজে। এই পাণ্ডুলিপি অনুসারী একটি সুসংবদ্ধ গ্রন্থ রচনার অভিলাষ ছিল তাঁর। একথা সন্দেহাতীত যে এই পাণ্ডুলিপি থেকে এক বা একাধিক গ্রন্থ রচনার বাসনা তাঁর ছিল বৈকি। দূর্ভাগ্যবশত সে কাজে তিনি হাত ই দিতে পারেননি, সময়াভাব ই মূল কারণ। দায়ী তাঁর চরিত্রগত পল্লবগ্রাহিতা --- ক্রমাগত এই অসম্ভব প্রতিভাবান মানুষটির হৃদয় এবং মস্তিষ্ক --- বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে ঝুঁকেছেন এবং নব নব দিগন্তে আপন মনন কে নিবিষ্ট করেছেন। কিছুটা দায়ী তাঁর ভাগ্য --- রাজ খেয়ালে ভেসে ভেসে বেড়িয়েছেন, কিছুটা বোধকরি তাঁর চরিত্রগত দীর্ঘসূত্রতা। অবশ্য খুব প্রতিভাধর রা -- কখনওই খুব গোছালো হন না -- হয়তো বা এই গোছানোর কাজে নিদারুণ মস্তিষ্ক প্রক্ষালন লাগেই না হয়তো। তাই দীর্ঘ জীবনের শেষপ্রান্তেও পুষ্পনগরীর ( আদতে ফিরেনজে Firenze, ইংরেজি তে ফ্লোরেন্স Florence) এই মালী শুধু পুষ্পচয়ন ই করে গেছেন, মাল্যকার হওয়া তাঁর ভাগ্যে অধরাই ছিলো। যদি পারতেন কি যে হতো কে বলতে পারে?
দা ভিঞ্চির বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকাও দীর্ঘ। ♦১. তাঁর ব্যবহৃত বৈজ্ঞানিক শব্দগুলির নির্দিষ্ট সংজ্ঞার্থ নেই। ♦২. তিনি নাকি স্থানে স্থানে অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাসী। ♦৩. বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অনায়াস ভ্রমণ কালে তাঁর লিখনী সূচীমুখ হয়ে ওঠেনি আদৌ।
কিন্তু কে বা কাহারা অপরাধী? অপরাধী সেই যুগ এবং কাল। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক শব্দের সুনির্দিষ্ট অভিধা তখনো তৈরীই হয় নি যে। বিজ্ঞান যে তখনো নিদ্রিত সুখশয্যায়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্রস্থলে তখনো পৃথিবী স্থির, রোমা (Roma) বা রোম নিশ্চল, রোমার কেন্দ্রবিন্দু তে ভাতিকানো ( Vaticano) বা ভ্যাটিক্যান গতিহীন এবং তারি মধ্যবিন্দুতে পাপা বা পোপ স্থাবর। ' আকাশভরা সূর্যতারা ' তখনো সেই কেন্দ্রস্থ অনড় অচল পাপা কে আবর্তন ই করছে। তখন গতির কথাই তো যুগান্তরে উত্তরণ ; ত্বরণ আশা করবেন কি ভাবে? লেঅনার্দো তাই বারবার ত্বরণ ও গতিকে গুলিয়ে ফেলেছেন।
অতিপ্রাকৃত তত্ব তাঁর রচনায় বারবার এসেছে স্বাভাবিকভাবেই। সে যুগে অতিপ্রাকৃতেরি যে ছিল একচ্ছত্র অধিকার। তদুপরি সেই যুগে রাজা রাজড়া ধনবানেরা বারবার তিনটি শিং এর গুঁতো খেয়ে প্রায় সর্বহারা হতে বসেছেন। ♦১. লোহা থেকে সোনা তৈরী -- সৌজন্যে আলকেমি। ♦২. মৃত্যুঞ্জয়ী অমৃত বা Elisir della vita বা Elixir of life বানানো এবং♦ ৩. বিনা ইন্ধনে অনন্তগতির অধিকারী হওয়ার উপযুক্ত যন্ত্রনির্মাণ। বিজ্ঞানের ঊষালগ্নে দাঁড়িয়ে এই বিজ্ঞানী একক দৃঢ়স্বরে বলেছিলেন --- এর একটি ও কখনো সম্ভবে না। বলেছিলেন মানুষ একদিন মাটি ছেড়ে একদিন আকাশে উড়বে -- কিন্তু লোহা কখনো সোনা হবে না।
লেঅনার্দোর পূর্বসূরীরা কেউ স্থিতিবিদ্যা কে গতিবিদ্যা থেকে আলাদা করে দেখেন নি। স্থিতিবিদ্যার ওপরে আগেই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু গতিবিদ্যা বা ডিনামিক্স পৃথক বিজ্ঞানরুপে চিহ্নিত হলো তাঁরি হাতে। কিন্তু তিনি শুরু করেছিলেন সেই স্থিতিবিদ্যা বা স্ট্যাটিক্স নিয়েই।
সুধী গণ ধৈর্য হারাবেন না, আরেকটু ই বাকি।
এইবার শেষ গুরুত্বপূর্ণ কথাটি লিখবো।
৫ হাজার পৃষ্ঠা জোড়া পাণ্ডুলিপি, যা পরে ১৪ খন্ডে বিভক্ত করা হয়েছে, সেগুলিকে মূল গ্রন্থকার কিন্তু আলাদা আলাদা নামে চিহ্নিত করেননি। সেই সব পাণ্ডুলিপিতে বিষয়বস্তু ক্রমাগত বদল হয়েছে। কিন্তু আছে একটি পাণ্ডুলিপি, যার শিরোনাম লেঅনার্দো নিজে দিয়ে গেছেন ----: Sul volo degli Uccelli --- সুল ভোলো দেলি উচ্চেল্লি --- On Bird Flight. বাঙলাতে বোধকরি বিহঙ্গ বাসনা।
তাঁকে দেখে স্থানীয় ছেলেপুলেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতো -- পাগলা বুড়ো। তিনি নাকি ফিরেনজে শহরের কেন্দ্রের পার্ক টিতে পাখী বিক্রেতার কাছে পায়রা কিনতেন আর একটু আদর করে দানা খাইয়ে উড়িয়ে দিতেন তাদের। আর স্থির লক্ষ্যে বসা বা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে তাদের ডানা ঝাপটে উড়ে যাওয়ার পদ্ধতি টি স্থির দৃ ষ্টিতে বারবার প্রতিদিন লক্ষ্য করতেন। তার ওপর ভরসা করেই তিনি বিমানের উড়ান এবং শুন্যে চলাচলের নীল নকশা প্রায় প্রস্তুত করে ফেলেছিলেন। হ্যাঁ, তার সঙ্গে অঙ্কন এবং অঙ্ক ও ছিল বৈকি নিরন্তর। কতো ভর, গতিবেগ এবং ত্বরণ হলে মাটি ছেড়ে বাতাসে ওড়া সম্ভব, বার বার তা নির্ণয় করতেন ছবির পর ছবি এঁকে আর অঙ্ক করে।।
আগেই লিখেছি -- লেঅর মূল প্রেরণা হলো বিহঙ্গ বাসনা। তিনি জানতে চান পাখি কেন আকাশে ওড়ে, মানুষের পক্ষে কেন তা সম্ভবে না। বলাকার পক্ষস্পন্দনে তাঁর অন্তরাত্মায় জাগে একটি কামনা --' ঐ শব্দরেখা ধরে চকিতে হইবে দিশাহারা ; আকাশের খুঁজিতে কিনারা '। সেই কবিকল্পনা কে বাস্তব রূপ দিতে হলে বিজ্ঞানী হিসাবে তাঁকে প্রথমেই জানতে হবে --- পাখির ভরকেন্দ্র ঠিক কোথায় অবস্থিত। যেন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছেন --'উঁচুতে ওঠার সময়ে, নীচে নামার সময় পাখির দেহাভ্যন্তরস্থ ভরকেন্দ্র কি স্থান পরিবর্তন করে এবং করলে কতখানি করে?'।
এজন্যে একেবারে গোড়া থেকে ই তাঁকে কাজ শুরু করতে হয়েছিল --- স্থিতিবিদ্যা বা স্ট্যাটিক্স থেকে। আরিস্তৎল, আর্কিমিডিস, নেমোরিয়াম প্রভৃতি স্থিতিবজ্ঞানীদের পরীক্ষা গুলি আবার হাতে কলমে করে প্রমাণ করলেন। আবারো! যেমন ধরুন ভার কেন্দ্র বা centro di gravità বা চেন্ত্রো দি গ্রাভিতা র কথা। আর্কিমিডিস শুধু দ্বিমাত্রিক বস্তুর -- সরল জ্যামিতিক চিত্রের ভারকেন্দ্র নির্ণয়ের চেষ্টা করেছিলেন। নবম দশম শতাব্দীর মেসোপটেমিয়া বা আধুনিক ইরাকের আরবি গণিতজ্ঞ -- বাগদাদের ইবন্ খুসরু, ইবন্ সিনার ও তাইই। সব্বাই দ্বিমাত্রিক। ত্রিমাত্রিক বস্তুর ভারকেন্দ্র নির্ণয়ে প্রথম মানুষ হলেন লেঅ। সলিড জ্যামিতি রো তিনিই জনক।
লেঅনার্দো জেনে যেতে পারেননি, ঠিক কি ভাবে? কিন্তু অমন প্রতিভাবান ধরেছেন ঠিক। আজ বরং আমরা জানি, জৈবিক প্রকৃতিগত প্রয়োজনে পাখি তার দেহাভ্যন্তরস্থ বায়ুকে শ্বাসনালী দিয়ে ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয় এবং দেহের ভারকেন্দ্র কে স্থানান্তরিত করতে পারে এবং করেও।
আরেকটি প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় বলি, মানুষ যখন কোন দ্বিচক্রযান, ধরুন সাইক্ল, স্কুটার বা মোটরসাইক্ল চালাতে শেখে, তখন কিন্তু এই কাজটি শিখতে হয় অভ্যাসে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের আয়ত্ব নয় ঘটনাটি। ব্যালেন্স মানে প্রতিমুহুর্তে আমাদের ভারকেন্দ্র পরিবর্তন হচ্ছে এবং আমরাও হয় হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে বা শরীরের স্থান পরিবর্তন করে ক্রমাগত পরিবর্তিত ভারকেন্দ্রের সঙ্গে আমাদের ভারসাম্য বজায় রাখছি। প্রথম সাইক্ল চালানো শিখতে গিয়ে একবারো পড়েনি বা ধাক্কা মারেনি এমন মানুষ দুর্লভ। কিন্তু একবার শিখলেই সাধারণত আর ভোলে না কেউ বড় একটা, যেমন কিনা একবার জলবসন্ত বা চিকেন পক্স হলে সাধারণত এক জীবনে দ্বিতীয় বার আর জলবসন্ত হয় না, কারণ আমাদের শরীরের ঈমিউন সিস্টেম ওই ভাইরাসের প্রতিষেধক আ্যন্টিবডি তৈরী করে ফেলে।
আবার খোশগল্প ছেড়ে মূলে ফিরি। লেঅ জানতেন পাখিদের ভারকেন্দ্র স্থানান্তরণ এর বিষয় টি। আরেকটি জানতে চাইলেন, যে দণ্ডায়মান মানুষ সবসময় দুপায়ে সমান ভর দিয়ে হাঁটে না যে।
যখন বসে, দৌড়ায়, ডিগবাজি খায় ; তখন ভারকেন্দ্রের অবস্থান জানতে হবে। বন্ধুরা বললে -- জেনে কি হবে?তুমি কি জীবদ্দশায় উড়তে পারবে?
লেঅ বলেন,' জানিনে। আমি হয়তো পারবনা, কিন্তু মানুষ যে একদিন আকাশে উড়বে, তা জোর দিয়ে বলা যায় ---- যেমন বলা যায় কাল সকালে পূর্বদিকে সূর্য উঠবে।
ত্রিমাত্রিকের গোড়া থেকে শুরু করলেন --- এখনকার ভাষ্যে ফান্ডা থেকে। হেলে ধরা ছেড়ে এবার কেউটে ধরলেন ---- টেট্রাহেড্রন ও পিরামিড। এবং নির্ণয় পূর্বক লিখলেন ---- ' ইহা (?) হইতে বুঝা যায় যে, পিরামিডের ভারকেন্দ্র তাহার কেন্দ্রীয় অক্ষরেখার উপর অবস্থিত --- শিখর থেকে ৩/৪ ভাগ দূরে এবং ভূমিরেখা হতে ১/৪ উপরে।
ব্যস।কোন ব্যাখ্যা নেই, নেই কোন কৈফিয়ৎ।
উত্তর নির্ভুল। কিন্তু ঐ ত্রিমাত্রিক জ্যামিতি চিত্রের পায়ে ধরে অনেক সেধেছি ; রা দেয়নি রাধা। ইহা হইতে বলতে কিহা হইতে তা লেঅনার্দোয় মালুম।
তিনি ক্রমাগত নোট নিতে থাকেন আর দেখেন --- পাখিদের উড্ডয়ন ভঙ্গিমা। পাতার পরে পাতা আর খাতার পরে খাতা।
লেঅ অকৃতদার, বাউন্ডুলে মানুষ। বাজার হাট করে শিষ্যরা। এখন কিন্তু তাঁকে প্রায়শই দেখা যাচ্ছিল ফিরেনজে অথবা ফ্লোরেন্সের পাখিবাজারে। একের পর এক পায়রা কিনছেন আর উড়িয়ে দিচ্ছেন আর স্কেচ করছেন। সে বাজারে তাঁর নাম ই হয়েছিল : পায়রা --- ওড়ানো কাপ্তেন।
Aeronautics এর বাঙলা অনুবাদ বিহঙ্গ বিজ্ঞান নয় --- ইতালিয় Aeronautica আয়েরোনৌতিকা র অর্থ অনেকটা তাই। আর Grande uccello volante বা গ্রান্দে উচ্চেল্লো ভোলান্তে মানেও মহাবিহঙ্গ।।###
আপনার মতামত দিন: