DR. RAZ MAHAJAN

Published:
2024-04-30 11:11:03 BdST

বাংলাদেশে এমআরসিপি সেকেন্ড পার্টের পরীক্ষা কেন্দ্র চালু :সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা


ডা. আজাদ হাসান ;বাংলাদেশের স্বাস্থ্য প্রশাসন বিশেষজ্ঞ লেখক




ডা. আজাদ হাসান

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য প্রশাসন বিশেষজ্ঞ লেখক
_______________________

বাংলাদেশে এমআরসিপি সেকেন্ড পার্টের পরীক্ষার কেন্দ্র চালুর মাধ্যমে যে সম্ভাবনা ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হলো। সেসব বলছি।

দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশে এমআরসিপি ডিগ্রীধারী চিকিৎসকরা দেশী ডিগ্রীধারী নীতি নির্ধারক চিকিৎসকদের দ্বারা নানান ভাবে কোণঠাসা হয়ে ছিলেন। তবে আশার কথা হলো, এ বিষয়ে এখন ধীরে ধীরে বরফ গলতে শুরু করেছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ কাউন্সিল সেন্টারে এমআরসিপি
ফার্স্ট পার্ট (১ম পর্ব) পরীক্ষার সেন্টারে পরীক্ষা নেয়া চালু রয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের এভার কেয়ার হাসপাতাল পরীক্ষা সেন্টারটি এমআরসিপির সেকেন্ড পার্ট পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হওয়ায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা বিকাশ- এর ক্ষেত্রে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম বলে আমি মনে করি।

এমআরসিপি পরীক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা এবং পাকিস্তানের মতো আমাদের দেশেও যেন এমআরসিপি পরীক্ষার সেন্টার চালু হয়। কিন্তু নানা মহলের বিরোধিতার কারণে উদ্ভূত জটিলতায় তা এতদিন আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছিল না।

আকজের আলোচনায় আমি এই পরীক্ষা সেন্টারটি চালু হওয়ার মাধ্যমে আমাদের দেশে মেডিকেল এডুকেশন এর ক্ষেত্রে কি ধরনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হলো তা তুলে ধরছি।

আলোচনার শুরুতে আমাদের দেশে এমআরসিপি পরীক্ষার সেন্টার চালু হওয়ায় যে সব বেনিফিট পাওয়া যাবে তা সংক্ষিপ্ত পরিসরে তুলে ধরছি। এর মাধ্যমে ~
১) আমাদের দেশের মেধাবী চিকিৎসকদের মধ্য হতে আন্তর্জাতিক মান এবং স্বীকৃতি সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরীর সুযোগ তৈরী হলো।
২) এমআরসিপির পরীক্ষা কেন্দ্র সমূহে ৮০% স্থানীয় পরীক্ষার্থীর জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে সীট সংরক্ষিত থাকে (এলাউ করার পর), ২০% বিদেশী ক্যান্ডিডেট -দের জন্য সীট বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। সেই হিসেবে বাংলাদেশী পরীক্ষার্থীদের জন্য অধিক হারে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হলো।
৩) যেহেতু আন্তর্জাতিক স্টুডেন্টরা পরীক্ষা দিতে বাংলাদেশে আসবেন, সুতরাং তাদের পরীক্ষার ফিস্ (সেন্টার ফিস), থাকা (আবাসন/হোটেল) এবং খাওয়া ও ট্রান্সপোর্ট হতে আমাদের দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সমর্থ হবে।
৪) এখন হতে বাংলাদেশী পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে বাংলাদেশের বাহিরে যেতে না হওয়ায়~
ক) বিমান এবং হোটেল ভাড়া সাশ্রয় হলো। তথা আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় সাশ্রয় হলো।
খ) বিদেশে যাওয়া এবং আসার জন্য ব্যয়িত অতিরিক্ত সময় সাশ্রয় হলো এবং সেই সাথে সরকারী চাকুরীজীবি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে বহিঃবাংলাদেশ ছুটির জন্য ডিজি হেলথ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দৌড় ঝাপ হতে রেহাই পেলেন।
গ) বিদেশে যাওয়া আসার জন্য শারীরিক ও মানসিক ধকল হতে রেহাই পাওয়া গেলো। অর্থাৎ মানসিক টেনশন এবং শারীরিক পেরেশানি হতে রেহাই পাওয়া গেলো।
৫) আরো/অধিক বিশেষজ্ঞ তৈরীর মাধ্যমে দেশের জনগণের জন্য আরো বেশী করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো।
৬) যে সব দেশে এমআরসিপি ডিগ্রী স্বীকৃত, সেসব দেশে বাংলাদেশী চিকিৎসকদের জন্য কাজের সুযোগ (জব অপারচুনিটি) সৃষ্টি হবে। তথা দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা যুক্ত হলো।

পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম, সম্প্রতি ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ হতে একটি টীম বাংলাদেশে এসেছেন আসন্ন এমআরসিপি পরীক্ষার পরীক্ষকদেরকে আগামী শেসনের পরীক্ষা কনডাকশন/পরিচালনার জন্য ট্রেনিং দেয়ার জন্য। আর এর থেকে প্রত্যাশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশের চিকিৎসকরাও এক্জামিনার হিসেবে রয়েল কলেজের পরীক্ষা নিতে রয়েল কলেজ এপ্রুভ সেন্টারগুলোতে যেতে পারবেন। আর এভাবে এসব এক্জামিনারদের হাত ধরে আমাদের দেশের এফসিপিএস / এমডি পরীক্ষা সমূহও একদিন এমআরসিপির স্ট্যান্ডার্ডে উন্নীত হবে।

প্রত্যাশাঃ
১) উভয় দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষকদের আসা যাওয়ার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে এমআরসিপির বিদেশী এক্জামিনার -দেরকে এই দেশের পোস্ট গ্রাজুয়েট পরীক্ষা সমূহ চলার সময় অবজারভার হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। এবং পর্যায়ক্রমে আমাদের দেশ হতে প্রদত্ত পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসকদের ডিগ্রী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
২) বিএমডিসির প্রতি অনুরোধ বিসিপিএস এবং আমাদের দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রী সমুহের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং গ্রহন যোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ পূর্বক সেই সব দেশের মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিষ্ট্রেশন অর্জন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।।

আর এভাবে বহিঃ বাংলাদেশে আমরা বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধি করতে পারবো এমনটাই সবার প্রত্যাশা।

#

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়