Saha Suravi

Published:
2024-04-21 13:47:22 BdST

প্লান্ট কোলেস্টেরল বা ফাইটোস্টেরল এবং তার বিপত্তি



ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
____________________________

কোলেস্টেরল যদিও মেটাবলিক ফুয়েল বা ইন্ধন নয়,তবুও আমাদের শরীরে তার যথাযথ পরিমাণে উপস্তিতি খুবই প্রয়োজন।
কারণ অতি প্রয়োজনীয় বাইল অ্যাসিড এবং বাইল সল্ট, এছাড়াও বিভিন্ন হরমোন এবং এনজাইম তৈরী তে, ভিটামিন ডি তৈরী তে, রেড ব্লাড সেল, প্লেটলেট ইত্যাদি তৈরী তে খুবই দরকারী।

আমাদের গাইডলাইন অনুযায়ী লো ফ্যাট এবং হাই কার্ব ডায়েট প্রমোট করা হয়, প্রথমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এবং পরে প্রায় সমস্ত দেশেই। কারণ কোলেস্টেরল খুব খারাপ কিছু এমন ধারণা ছিল ( আজ্ঞে এখনো দিব্য আছে), বা আমাদেরকে জানানো হয়েছিল।

আদতে উদ্ভিদের যা কোলেস্টেরল তার নাম ফাইটোস্টেরল, যা কিছুটা কোলেস্টেরলের মত বটে কিন্তু পুরোপুরি এক নয়। আদতে এই ফাইটোস্টেরল কিন্তু প্রাণীজ কোলেস্টেরল কে প্রতিস্থাপিত করতে চায় এবং অনেকটা সফল ও হয় বটে কিন্তু তাতে ক্ষতি হয় বেশ অনেকখানি।

আমাদের মানবজীবনে নিম্নোক্ত জিনিস বা অভ্যাস গুলি খুবই প্রয়োজনীয়

১.খাদ্য
২. উপবাস
৩. চলাফেরা বা মুভমেন্ট
৪. সূর্যালোক
৫.ঘুম
৬. স্ট্রেস
এবং ৭.সাপ্লিমেন্ট

ইদানীং কার যথেচ্ছ PPI গোত্রের ওষুধ খাওয়ার ফলে আমাদের পাকস্থলী এবং স্মল ইনটেসটাইনের অ্যাসিড অনেকটা হ্রাস পেয়েছে বইকি এবং সেই কারণে SIBO বা স্মল ইনটেসটিনাল ব্যাকটেরিয়াল ওভারগ্রোথ বলে একটি জিনিস প্রায়ই দেখা যায় যার পরোক্ষ ফল হলো কিছু অটো ইমিউন ডিজিজ, যেমন টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস, রিউম্যাটয়েড আর্থরাইটিস , SLE ইত্যাদি।

সীড অয়েল গুলি থেকেই কিন্তু বিপুল পরিমাণ ফাইটোস্টেরল আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। আমাদের শরীরের দরকার কোলেস্টেরল, কিন্তু পরিবর্তে তাকে দেওয়া হচ্ছে ফাইটোস্টেরল। এখন শারীরবৃত্তীয় নিয়মে সেই ফাইটোস্টেরল কে শরীর বার করে দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেকটা আমাদের মলে র সঙ্গে, ( উল্লেখ্য যে কোলেস্টেরল এর আধিক্য এই পথেই নিষ্কাশিত হয়) কিন্তু সকলের শরীরে এই মেকানিজম সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, যার উদাহরণ হলো
১.জ্যানথোমা
২.জ্যানথোস্যালমা
৩. আর্কাস সেনিলিস।

এই জ্যানথোস্যালমা দেখা যায়, খুব স্বাভাবিক ভাবেই বেশি দেখা যায় নিরামিশাষী দের চোখের পাশের চামড়ায়, যা আমরা কোলেস্টেরল স্পট হিসেবে এতদিন জেনেছি। আদতে এইগুলো ফাইটোস্টেরল ডিপোজিট এবং এর সঙ্গে কোলস্টেরলের মাত্রা বা মানের সাধারণত কোন সম্পর্ক নেই।

কোলেস্টেরল কমানো হয় বেশ কিছু ওষুধ দিয়েও এবং এইগুলো সাধারণত স্টাটিন গোষ্ঠীর অথবা ইনজেকশন PCSK9 ইনহিবিটর দিয়ে, এবং তার ফলেই বাড়ে ফাইটোস্টেরল এর শোষণের মাত্রা এবং কমে খুব প্রয়োজনীয় CoQ10, এবং এর জন্যে অথবা এই কারণে বাড়ে টাইপ টু ডায়বেটিস এর সম্ভাবনা। কারণ ইনসুলিন সিগন্যালিং টিই LDL কোলেস্টেরল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

এছাড়াও এই ফাইটোস্টেরল শোষিত হলে কোলেস্টেরলে ভরপুর রেড ব্লাড সেল বা লোহিত রক্তকণিকা গুলো নমনীয়তা হারিয়ে ফেলে, এবং ফলে অতি সরু রক্তনালী বা জালিকার মধ্যে দিয়ে সহজে যাতায়াত করতে পারে না, যার ফল সেরিব্রো ভাসকুলার জটিলতা এবং কার্ডিও ভাস্কুলার জটিলতা এমনকি মৃত্যু ও।

অতএব যথাসম্ভব কম করা উচিৎ ভেজিটেবল অয়েল ব্যবহার। সব সীড অয়েল বা ভেজিটেবল অয়েল ই খারাপ, কারণ এতে ফাইটোস্টেরল থাকবেই, তবে এগুলো র মধ্যে কম খারাপ হলো অ্যাভোকাডো অয়েল ( আমাদের দেশে ব্যবহার নেই) , অলিভ তেল , নারিকেল তেল কারণ এগুলি সীড অয়েল নয় বলে এতে ফাইটোস্টেরল তুলনায় অনেক কম মাত্রায় থাকে। আদর্শ হলো প্রাণীজ ফ্যাট যা স্বাভাবিক ভাবেই ফাইটোস্টেরল মুক্ত৷ যেমন আমাদের দেশের জন্য ঘি এবং মাখন ও বিদেশ বা সব দেশেই লার্ড বা শুকরের চর্বি অথবা ট্যালো বা গরু বা মহিষের চর্বি।


আশা করি সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়