Dr. Aminul Islam

Published:
2023-02-05 10:52:06 BdST

রুয়ান্ডা মডেল ও জরায়ুমুখের ক্যানসার


ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট; এসিস্টেন্ট প্রফেসর, ডালহাউসী ইউনিভার্সিটি, হ্যালিফ্যাক্স, কানাডা

ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন

_________________

১৯৯৪ সালের পর থেকে রুয়ান্ডায় প্রতি ১০০ হাজারে ৫০ থেকে ৫৫ জন মহিলা প্রতিবছর জরায়ুমুখ এর ক্যানসারে আক্রান্ত হতেন। গরীব দেশ হওয়ার কারণে চিকিৎসাব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। ২০০৬ সালে জরায়ুমুখ এর টিকা, যেটি এইচপিভি ভ্যাকসিন নামে পরিচিত, আবিস্কার হয়।
গ্লোবাল এল্যায়েন্স ফর ভ্যাক্সিন এন্ড ইমিউনাইজেশন  এর সাথে রুয়ান্ডা সরকার তার দেশের ১২-১৫ বছরের মেয়েশিশুকে এইচপিভি টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নেন। যার ফলে ২০১১ সনে শুরু করা টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে অচিরেই রুয়ান্ডা প্রথম আফ্রিকান দেশ হবে জরায়ুমুখ ক্যানসার মুক্ত। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার এর তথ্য অনুযায়ী ৫০ মিলিয়ন বাংলাদেশী মহিলা জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। প্রতিবছর ১৭-১৮ হাজার মহিলা জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং ১০ হাজার মহিলা মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশী হতে পারে। আমাদের নিজস্ব ক্যানসার রেজিস্টিরি হলে আসল সংখ্যা জানা যাবে। সারা পৃথিবীতে জরায়ুমুখের ক্যানসারে প্রতিবছর আক্রান্ত মহিলার সংখ্যা প্রায় ৬০০ হাজার। ৯৫% জরায়ুমুখের ক্যানসার হয়ে থাকে একটি ভাইরাসের কারণে। এই ভাইরাসের নাম হচ্ছে Human Pappiloma Virus (HPV)। এই ভাইরাস মহিলাদের প্রজণনতন্ত্রকে সংক্রমণ করে এবং ৯০% ক্ষেত্রে বিনাচিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ঐচঠ সংক্রমণের ফলে ১৫-২০ বছর পর কিছুসংখ্যক মহিলার জরায়ুমুখের ক্যানসার ধরা পড়ে।
আমরা জানি জরায়ুমুখের ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। কিন্তু ঐচঠ টিকার মাধ্যমে এই ক্যানসারকে জয় করা সম্ভব। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সরকারী পর্যায়ে এই টিকার কোন ব্যবস্থা নাই। Global Alliance for Vaccines & Immunization (GAVI) বাংলাদেশকে এই টিকা ৪.৫ ডলারে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে শুনেছিলাম এবং ২০১৬ সালে ঢাকার গাজীপুরে পাইলট প্রজেক্টও করেছে। এই ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিভাগ কতটুকু এগিয়েছে জানিনা। জরায়ুমুখ এর ক্যানসার থেকে রক্ষা পেতে হলে আপনার কন্যাসন্তানকে ঐচঠ টিকা দেওয়াটা জরুরী। কন্যাসন্তানের বয়স ৯ থেকে ১৪ হলে ২ ডোজ টিকা দিতে পারবেন। টিকার দাম প্রতিটি ডোজ ৬-৭ হাজার টাকা হতে পারে। অনেক পরিবারের পক্ষে এত টাকা ব্যায় করে টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এই ব্যাপারে আমাদের সবাইকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, যাতে সকল মেয়েশিশু অচিরেই HPV টিকা স্বল্পমূল্যে পায়। এই ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত নিজের টাকায় বেশী দামে ঐচঠ টিকা দেওয়ার কোন বিকল্প নাই। এছাড়াও প্রতিটি মহিলার স্ক্রিনিং টেস্ট এর ব্যবস্থা করা জরুরী। বাংলাদেশে এখন দেশব্যাপী সরকারী পর্যায়ে VIA (Visual Inspection with Acetic Acid) টেস্ট করা হয়। এই ব্যাপারে উপজিলা হাসপাতাল এবং সরকারী হাসপাতাল এর গাইনী বিভাগে তথ্য পাওয়া যাবে। ভায়া টেস্ট বিনামূল্য করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে কমপক্ষে ৪ মিলিয়ন মহিলা গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করেন। এই ৪ মিলিয়ন মহিলাকে যদি ভায়া টেস্ট এর আওতায় আনা যায় তাহলে জরায়ুমুখ এর ক্যানসার এর আক্রান্তের হার অনেক কমবে। এছাড়াও স্কুলশিক্ষিকা, সরকারী ও বেসরকারী সকল মহিলা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ভায়া টেস্ট এর আওতায় আনার পদক্ষেপ নিতে পারলে আরো ভালো হয়। আমাদের দেশের সরকারী ও বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠান যদি প্রতিটি নারী কর্মচারীর জন্য পেপ/VIA টেস্ট বোনাস চালু করেন তাহলে জরায়ুমুখের ক্যানসার এর বাৎসরিক আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমে আসবে বলে আমার ধারণা। এছাড়াও প্রাথমিক অবস্থায় জরায়ুমুখের ক্যানসার সনাক্ত করার জন্য পেপ টেস্ট করাটা জরুরী। পেপ টেস্ট ২০ থেকে ২১ বছর বয়স থেকে শুরু করতে হয়। এবং প্রতি ৩-৫ বছর পর পর করা উচিত। এই টেস্ট করতে ১৫০০ থেকে২০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
জরায়ু ক্যানসার হয়ে গেলে এর চিকিৎসায় সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দিতে হয়। এতে খরচ ৫ থেকে ১০ লক্ষ্য টাকা খরচ হতে পারে। সুতরাং ক্যানসার প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অতিসত্তর আপনার কন্যাসন্তানকে ঐচঠ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। নিজে পেপ টেস্ট করুন এবং আপনার অস্বচ্ছল আত্মীয় অথবা বাসায় সাহায্যকারী মহিলাকেও পেপ টেস্ট করার জন্য সাথে নিয়ে যান। আমরা সবাই সচেতন হলে সকলের সহযোগিতায় ‘জরায়ুমুখ ক্যানসার মুক্ত বাংলাদেশ’ আমরাও করতে পারবো

ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন
রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট;
এসিস্টেন্ট প্রফেসর, ডালহাউসী ইউনিভার্সিটি, হ্যালিফ্যাক্স, কানাডা।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়