ডা শাহাদাত হোসেন

Published:
2023-01-17 05:39:33 BdST

প্রিয় চিকিৎসক শিক্ষার্থীর অতুল কীর্তিতে আপ্লুত যখন গুরু



ডেস্ক
_____________________


চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
ডা ইবরাহীম ইকবালের অতুল কীর্তিতে গৌরব বোধ করলেন তাঁরই সুযোগ্য শিক্ষক ও উৎসাহদাতা অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। প্রখ্যাত লেখক ও সিএমসির প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক
ডা. শুভাগত স্বয়ং এক দীর্ঘ লেখায় অভিনন্দন জানিয়েছেন ডা ইবরাহীমকে । তিনি লিখেছেন , "
আমার গর্বের শেষ নাই।
এইমাত্র পৌছালো আমার ছাত্র ডা ইবরাহীম ইকবালের পাঠানো এক অমূল্য উপহার।"আমার হাসপাতাল "

 


তার এক অসাধারণ শৈল্পিক সৃষ্টি।
একজন বিদগ্ধ সমালোচক বলেছেন হাসপাতাল মহাকান্ডের কাব্যিক উপাখ্যান।
এই আলোক চিত্র তোলার জন্য সব সময় ওত পেতে থাকা নয় বরং দেখার চোখ চাই , সংবেদনশীল মন চাই আর অন্তরে কবি আর শিল্পী হওয়া চাই।
ইব্রাহিম চিকিৎসক আর কেমিক্যাল প্যাথলজিস্ট হলেও সে একজন শিল্পি কবি আর বাড়িয়ে বলি দার্শনিক ।
আমি একে তার অমর সৃষ্টি বললে অত্যুক্তি হবেনা , একে অসামান্য কীর্তি বলাও যাবে, একে তার মানুষের জন্য রেখে যাওয়া এক উপহার বলাযতে পারে , হতে পারে তা অনুপ্রেরনার উৎস অনেক সৃজন শীল মানুষের জন্য ।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অনেক চিত্র স্থান পেয়েছে এতে । যে হাসপাতালে সে কাজ করেছে যে মেডিকাল কলেজে সে চিকিৎসা বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছে। এর অনেক হৃদয় ছোঁয়া চিত্র ।
তবে এই চিত্র গুলো দেখে আর শাদুযজামানের কথা পড়ে বাংলাদেশের এক তৃতীয় মাত্রা হাসপাতালের অবস্থা বুঝতে পারা যাবে আর তা কেবল বোদ্ধা পাঠকই নন নীতি নির্ধারকদের জন্য হবে এক অমুল্য দলিল যা অনুধাবন করে দেশের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন করার জন্য তা এক চিন্তার খোরাক হতেই পারে।
ইব্রাহিমের সঙ্গে আমার দেখা কাল পরশু দুদিনই বাংলাদশ মেডিক্যাল বায়োকেমিস্ট সোসাইটির তেরো তম সম্মেলনে রেডিসন হোটেলে আর তখন সে আমার কাছে ঠিকানা চাইল বইটি পাঠাবার জন্য আর আজ পেলাম।
ইব্রাহিম ইকবাল আমার ছাত্র চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে । অনেকের মত সেও আমার কাছে পেয়েছে এই বিদ্যার প্রবেশের পর্যায়ে হাতে খড়ি কিন্তু আমি কি জানতাম তার ভেতরে আছে এক সুপ্ত আগ্নেয়গিরি যা একদিন বিস্ফোরিত হয়ে জগতকে চমকে দেবে !
তার এই অপূর্ব সৃষ্টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন অনেকে এই গ্রন্থেই , নেদারল্যান্ডসের লেন্সেকুলতুরে , বলেছেন
এতে আছে এক চমৎকার গল্প । এই চিত্র গুলো প্রকাশ পেয়েছে সংবেদনশিল ভাবে , এর কম্পজিশনের অকুণ্ঠ প্রশন্সা করেছেন, আর শৈল্পিক ভাবে প্রতিফলন ঘটেছে বিষয় বস্তুর , চিত্রগুলো দেখে মনে হবে চাক্ষুস পরিদর্শন করছি এক হাসপাতাল আর সেখান কার রোগী সহ সব কিছুর ।
কিন্তু প্রকাশ আর এর প্রতিফলন খুব কাব্যিক ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফটোজরনালিস্ট রেযা দেঘাটি তার এই কাজের করেছেন অকুন্ঠ প্রশংসা
বাংলাদেশের ফটোগ্রাফার রশিদ উন নবি বলেছেন ,
সারি সারি এই আলোকচিত্র গুলো হাস পাতালের অনেক গভীরে কোন্দরে অন্দরে বাহিরে প্রবেশ করেছে ।
দেখিয়েছে মানুষের রোগ ভোগের যন্ত্রণা , আর পরিবারের সদস্যদের কান্না কিন্তু এর মধ্যেও ফুটে উঠেছে লড়াই করার একান্ত ইচ্ছাশক্তি আর একে ত্যাগ না করে ধরে থাকা।
অনেকে তীব্র ব্যথায় কাতর কিন্তু তারা জানে পরিবার আছে তাদের পাশে।
পরিবার তাদের যোগায় শক্তি আর সাহস আর তারা তাদের কখনো ছেড়ে যায়না।
এই আলোকচিত্রে ফুটে উঠেছে অন্ধকার বিষণ্ণ ক্লিষ্ট অনেক মুখ তবু এর আছে আরেক দিক, দেখিয়েছে যোদ্ধাদের মুখ আর পরিবারের সদস্যদের তারা যে কোন অবস্থাতেই রয়েছে তাদের পাশে।
ছায়ান্ধকার আশার মধ্য দিয়ে ভেসে উঠে যোদ্ধাদের মুখ যারা আগামি দিনের আশার আলোতে হবে স্নাত।
জার্মানির ফটো আর্টিস্ট বারবারা স্নিথ বলেন,
ইব্রাহিম তার সাদা কালো আলোকচিত্র দিয়ে ভারাসাম্য আনার এক দুরূহ কাজ করেছেন। স্বচ্ছ স্পষ্ট সহানুভুত , সমবেদনা আর যথেষ্ট দূরত্বেও তিনি অসহ্য যন্ত্রণা , আহত হওয়া, অক্ষমতা নিয়ে জীবনের জন্য বিশাল প্রয়োজনে থাকা মানুষদের দেখিয়েছেন এসব আলোক চিত্র দেখলে সমমর্মী, সম ব্যথী হবার তাগিদ জাগে মনে
আর কোন প্রশ্ন না করে কারণ না জেনে
এদের দুর্ভোগে সাহায্যের হাত বাড়াবার আবেদন জানায়।
১৯৭০ সালে চট্টগ্রামে জন্ম ইব্রাহিম ইকবাল চট্টগ্রাম মেডিক্যালে করেছেন মেডিক্যালে গ্রাজুএশন এরপর কিনিকেল বায়ো কেমেস্ট্রিতে এম ডি ।
এই কেমিকেল প্যাথলজিস্ট নিজেকে বলেন সব শিক্ষিত আলোক চিত্র শিল্পী ।
অনেক অনেক ফটো কন্টেস্টে অংশ গ্রহন করে পেয়েছে সে ৩০০ এর বেশি দেশীয় আর আন্তর্জাতিক পুরস্কার আর অনেক গুলো স্বর্ণ পদক । আর জুরি হয়েছে অনেক আন্তর্জাতিক ফটো কন্টেস্টে ।
আছে সে চট্টগ্রামে ইম্পেরিয়েল হাস পাতালে ল্যাব মেডিসিন কন্সাল্টেন্ট হিসাবে।
ইকবাল একজন অন্তর্মুখী মানুষ মনে হলেও সে হৃদয়ে ধারন করে অনেক ভাব আর অন্তরে অনেক দর্শন । এক শিল্পী মন তার মধ্যে বিরাজে । আত্ম দর্শনের অদ্ভুত ক্ষমতা আছে তার তাই সে অনেকের চেয়ে আলাদা আর তাকে মূল্যায়ন করা , বোঝা সাধারনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
আমার ছাত্র ছাত্রি অনেকেই আজ বিখ্যাত দেশে বিদেশে নানা ক্ষেত্রে কেবল চিকিৎসক হিসাবেই নয় শিক্ষক , গবেষক , বিজ্ঞানি , চিত্র শিল্পী , সমাজ সংঘটক , শিল্পি কবি সাহিত্যিক সংস্কৃতি কর্মী এরা বহু মুখি প্রতিভার অধিকারি। এরা আমার সন্তান তুল্য । আমার তিনটি সন্তানের সঙ্গে এক মোহনায় এরাও এসে পৌঁছেছে আর এরা আমার গর্ব আর গৌরবের, আস্থার আর বিপদের বন্ধুর মত হয়ে উঠেছে আর কার্যত তাই ঘটেছে /
আমি এখন বেলা শেষের গান শুনি দিক চক্রবালে দেখি আকাশ আর মাটি এক হয়ে আছে আর এর দূরত্ব ক্রমে কমছে।
বেলা যে যায় সাঁঝবেলাতে।
এখন শরীর যে ভাল এমন নয় তবে এদের দেখে মনে অসম্ভব জোর পাই আর সেই জোরেই চলি যতদিন বাঁচব ।"

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়