SAHA ANTAR, Kolkata

Published:
2022-06-16 18:47:11 BdST

ধর্ম:দ্বিধারা,ভয় ও বিস্ময়:সমন্বয় প্রচেষ্টা এবং......


ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট
______________________________

ঋগ্বেদের যুগ থেকেই উল্লেখ্য যে ধর্ম প্রবাহিত হতে শুরু করেছিলো দ্বিধারায়। একটি পথের প্রতীকচিহ্ন :? । জ্ঞানপিপাসা চরিতার্থ করা। আদিমতম ধর্মীয় প্রেরণা --- সারা পৃথিবীতেই --- ভয় ও বিস্ময়। আকাশের সূর্য চন্দ্র, বাতাসের প্রভঞ্জন বেগ, সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস, অগ্নির দাহিকাশক্তি। এলেন বৈদিক দেবতাদের দল। সূর্য, চন্দ্র, পবন, বরুণ, অগ্নি। অত:পর প্রয়োজন হল একটি সমন্বয় প্রচেষ্টার। বিভিন্ন দেবতাকে পরিচালিত করতে অলক্ষ্যে আরেকটি স্বত্বা র কল্পনা করতে হলো। তিনি সূর্যের মতো স্বয়ং প্রকাশ নন, চন্দ্রের মতো স্নিগ্ধতার স্বাক্ষর রাখেন না, অগ্নি বা বায়ুর মতো স্পর্শেন্দ্রিয়ের দ্বারাও তাঁকে অনুভব করা যায় না। সেই অবাঙমানসগোচর হলেন নির্গুণ, কিন্তু অদৃশ্য। তবু তিনি আছেন। নইলে অঙ্কটা যে ঠিক মেলে না।
অনেকটা যেমন আলোকতরঙ্গের সমস্যার সমাধানে বৈজ্ঞানিকেরা নির্গুণ ইথার তরঙ্গের কল্পনা করতে বাধ্য করেছিলেন, সেভাবেই ঋষিদের কল্পনায় সৃষ্ট হলেন ---ব্রহ্মা। এই রুট ওভার মাইনাস ওয়ান বিনে সৃষ্টিতত্বের ব্যাখ্যা টি অঙ্ক কষে বোঝানো যাচ্ছিল না।
ধর্মের দ্বিতীয় ধারাটি হলো--- মানুষের ঐহিক প্রয়োজন মেটানো।
একান্ত ব্যবহারিক প্রয়োজনেই ঈশ্বর কে প্রীত করার একটা প্রয়োজন দেখা দিল। ধরে নেওয়া হলো --- তিনি শুধু সৃষ্টির আদি কারণ ও নিয়ন্তাই শুধু নন, তিনি বিপত্তারণ, তস্মিন তুষ্টে জগৎ তুষ্ট ( তাঁকে তুষ্ট করলেই জগৎ তুষ্ট), তাঁকে তুষ্ট করতে পারলেই জাগতিক আধি ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা।
ঠিক তার পরের ধাপেই ভারতীয় দর্শন ব্যবহারিক প্রয়োজনের উর্ধ্বে উঠে গেল ---- উপনিষদের যুগে। তখন জ্ঞানপিপাসা ই ছিল মুনিঋষি দের একমাত্র প্রেরণা। উপনিষদের মুনিঋষি বিপদ থেকে উত্তরণের কথা ভাবেননি, বৈষয়িক উন্নতি র জন্য মন্ত্ররচনা করেননি। তাঁদের লক্ষ্য তখন অন্ধকার থেকে আলোকে পদার্পণ, মৃত্যু থেকে অমৃতে উত্তরণ। বিশুদ্ধ জ্ঞানপিপাসা তৃপ্তির জন্যই তখন তাঁরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। তখনি তিনি উপলব্ধি করলেন --- কি উদ্দেশ্যে সেই ' একবর্ধা বহুধা হয়েছেন, ইন্দ্রিয়গোচর দ্যাবাপৃথিবী সৃজন করেছেন। এ এক অহেতুকী আনন্দের উচ্ছাস। ব্রহ্মের উদ্দেশ্য -- কারধত্ব হল : --- রসের আস্বাদন। ' রসো বৈ স:। রসস্য হোবায়াং লব্ধনন্দী ভবতি চ। '
সেই আনন্দ -- স্বরুপ -- ব্রহ্মের উপলব্ধি হওয়ার পরেই পরমতৃপ্ত ঋষি সারা পৃথিবীকে সানন্দে জানালেন : ---
হে অমৃতের পুত্রপুত্রী গণ --- তোমরা শোন। আমি জেনেছি সেই অজ্ঞেয় কে।
কিন্তু পরম পরিতাপের বিষয়, ভারতীয় দর্শনের এই স্বর্ণ যুগের ব্যপ্তি বড়ই অকিঞ্চিৎকর। ফুলটি শুকিয়ে গেল।
উপনিষদ উত্তর যুগের ষড়দর্শনে এসে উপস্থিত হলো --- কর্ম ফলবাদ আর পরজন্মবাদ।
উপনিষদের আনন্দঘন দৃষ্টিভঙ্গিটি পরিবর্তিত হল এক বিষাদময়তায়।।
_____________________________
ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় ভারতবর্ষের একজন শীর্ষ
ডায়াবেটিস এনডোক্রাইনোলজি কনসালটেন্ট ;তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। এমডি করেছেন। কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
তিনি বাংলা, ফরাসী , ইংরাজী সহ বহুভাষায় পারদর্শী।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়