Dr. Aminul Islam

Published:
2022-06-11 22:12:51 BdST

রেড জোন


 

ডা. সুকুমার সুর রায়

________________

চিকিৎসকেরা অনেক ধরনের সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ফিটনেস সার্টিফিকেট একটি।
এখানে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা পরীক্ষা নীরিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে এটাও দেখতে হয় যে প্রার্থীর কালার ব্লাইন্ডনেস আছে কিনা?
যারা কালার ব্লাইন্ড তারা লাল সবুজ রঙ চিনতে পারেন না।
একজন ড্রাইভার যদি লাল সবুজ রঙ চিনতে না পারেন, তাহলে তার পক্ষে ট্রাফিক আইন মেনে চলা কঠিন হয়ে যাবে। তাতে রোড ট্রাফিক একসিডেন্টের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।

ইদানিংকালে মহামারী নিয়ন্ত্রণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে লাল, হলুদ, সবুজ জোনে ভাগ করা হচ্ছে। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। এতে লাল এলাকা থেকে সবুজ এলাকা যদি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়,দুই এলাকার মাঝে লোকজনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া যায় তাহলে মহামারী রেড জোন থেকে সবুজ জোনে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। সহজেই মহামারী নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। এমতাবস্থায় কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যদি সিদ্ধান্ত দেন যে 'রেড জোনে বসবাসকারী একজন চাকরিজীবী তার নিজের আইডি কার্ড প্রদর্শন করে রেড জোন থেকে সবুজ জোনের কর্মস্থলে যেতে পারবেন' তাহলে কিঞ্চিৎ হাস্যরসের উদ্রেক হতেই পারে।
একইভাবে সবুজ জোনে বসবাসকারী চাকরিজীবী যখন পরিচয় পত্র দেখিয়ে রেডজোনে যেতে পারবে তখন বিভিন্ন অঞ্চলকে লাল সবুজ হলুদ ইত্যাদি জোনে ভাগ করার উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে। কারণ ভাইরাসের আইডি কার্ড লাগে না।

শহরের পতিতালয়কে অনেক সময় প্রশাসন থেকে 'আউট অফ বাউন্ড' কিংবা 'রেড জোন' হিসেবে ঘোষণা করে লাল চিহ্নিত করা থাকে একই উদ্দেশ্য সামনে রেখে।
রাস্তার ট্রাফিক সিগনালে লাল আলো জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সবুজ আলো জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করা হয়। গাড়ির ব্রেক চাপলেই পিছনে লাল আলো জ্বলে ওঠে। বিপদের সম্ভাবনা থাকলে লাইফ সাপোর্ট মেশিনের লাল আলো জ্বলে ওঠে এবং সঙ্কেতসূচক বিপ বিপ শব্দ করতে থাকে।
যেখানেই বিপদের সম্ভাবনা সেখানেই লাল চিহ্ন দেখে আমরা অভ্যস্ত।

আসলে লাল রঙ দেখে আমরা ভয় পাই কারন আমাদের রক্তের রঙ লাল।
সবুজ রঙ দেখে আমরা আনন্দে আহ্লাদিত হই, কারন গাছপালার রঙ সবুজ যেখান থেকে আমরা আমাদের খাদ্যের জোগান পাই। এছাড়া সবুজ আলোই সবচাইতে উজ্জ্বল আলো।
রেড জোন ' কমলা জোনের জটিল প্রশাসনিক বিষয়ে না গিয়ে আমরা বরং লাল সবুজ ইত্যাদি রঙ ও আলোর ভেল্কিবাজি জানার চেষ্টা করে দেখি।

যে বিষয়ে জানতে চাই তাহলো - আমরা যে জগতটিকে দেখি, সেই জগতটি সত্যিকারের কোন জগত; নাকি ছায়ার মতো ভ্রান্ত কোন মায়ার জগত?

আমরা চক্ষু দিয়ে দর্শন করি।
এই দেখাটা আসলে সত্যিকারের দেখা নাকি আলোর একধরনের কারসাজি?
আমরা যেমন কালি কলম দিয়ে লেখা বই পড়ি, তেমনি আলো দিয়ে আঁকানো জগতটি দেখি। সত্যিকারের জগত দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

বিষয়টি নিয়ে আমরা কখনো ভাবি না। কারন বাতাসের মধ্যে বসবাস করে বাতাসের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায় না ।

আমরা আসলে আলো দেখতে পাই না।
আলো কোন বস্তুর উপরে পতিত হলে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের রেটিনাতে এসে পৌছালে সেখানে সেই বস্তুর একটি নেগেটিভ ছবি তৈরি হয়।
এই নেগেটিভ ছবিটি অপটিক নার্ভ দিয়ে অপ্টিক কায়াজমা হয়ে আমাদের মস্তিষ্কের পেছনে 'ভিস্যুয়াল কর্টেক্সে' পৌছালে সেখানে ছবিটির একটি পজিটিভ অবয়ব আমরা উপলব্ধি করতে পারি।
এখন যে বস্তুটির অবয়ব আমরা দেখলাম সেই বস্তুটি যে আসলেই সেই রকম তা কিন্তু বলা মুশকিল!
ধরা যাক আমরা বাগানের একটি লাল জবা ফুল দেখতে পেলাম।
এই লাল জবা ফুলটিকে লাল দেখা যাচ্ছে এই কারনে যে, এই ফুলটির মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা সাদা আলোর সাতটি রঙের ছয়টি রঙ শোষণ করে নিলেও শুধুমাত্র লাল রঙটিকে শোষণ করতে পারে না। ফলে তা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের রেটিনাতে এসে পড়ে ফলে আমরা ফুলটিকে লাল ফুল হিসেবে দেখি।
অতএব আমরা যা কিছু দেখি তা আসলে আলোর কারসাজি ছাড়া কিছুই না।

সব আলোতে দেখার ক্ষমতা আমাদের চোখের নেই।

আমরা জানি আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য আছে।
কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোতে আমরা দেখতে পাইনা আবার বেশি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোতেও আমরা দেখতে পাইনা।
আমাদের চোখের দেখার সীমা নির্দিষ্ট করা আছে।
৩৮০ থেকে ৭৫০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোতে আমরা দেখতে পাই।
এর নিচেও দেখতে পাইনা এর উপরেও দেখতে পাইনা
উদাহরণ - রঙধনুতে ৭টি রঙ আছে - যেমন ; (বেনীআসহকলা)
১) বেগুনি, ২) নীল, ৩) আসমানী, ৪) সবুজ ৫) হলুদ, ৬) কমলা ও ৭) লাল।

বেগুনির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম -৩৮০ ন্যানোমিটার।
লালের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি - ৭০০ ন্যানোমিটার।
অন্যান্য রঙের আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এই দুইয়ের মাঝামাঝি।
এখানে বিস্তারিত দেওয়া হল :

রঙ -------------- তরঙ্গ দৈর্ঘ্য
------------------ - - - - - ----------------
১।বেগুনি ----৩৮০ থেকে ৪২৫ ন্যানোমিটার।
২। নীল ------- ৪২৫ থেকে ৪৫০ ন্যামি।
৩।আসমানী ---৪৫০ থেকে ৫০০ ন্যামি।
৪।সবুজ -------৫০০ থেকে ৫৭০ ন্যামি।
৫।হলুদ -------- ৫৭০ থেকে ৫৯০ ন্যামি।
৬।কমলা ------- ৫৯০ থেকে ৬১০ ন্যামি।
৭। লাল --------৬১০ থেকে ৭৫০ ন্যামি।

এই সাত ধরনের আলোর যেটি যখন আমাদের চোখে প্রতিসরিত হয় তখন আমরা সেই রঙের বস্তু দেখতে পাই। অন্যভাবে বললে বলা যায় কোন বস্তু থেকে যে রকম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে সেই তরঙ্গ দৈর্ঘের জন্য যে রঙ নির্দিষ্ট করা আছে আমরা বস্তুটিকে সেই নির্দিষ্ট রঙে রঞ্জিত দেখতে পাই। আদৌ বস্তুটির কোন রঙ আছে কিনা তা আমরা বলতে পারবো না।

আমরা দেখলাম যে, সবচেয়ে বেশি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের লাল আলোতে আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এরচেয়েও বেশি তরঙ্গ দৈর্ঘের আলো যেমন 'অবলোহিত লালে'( Infra red)
আমরা দেখতে পাইনা।
আমরা দেখতে না পেলেও সাপ কিন্তু ঠিকই
এই অবলোহিত লাল আলোতে আমাদের লাল লাল অবয়ব ঠিকই দেখতে পায়! অতএব সাবধান!

আবার বেগুনি আলোর চেয়ে কম তরঙ্গ দৈর্ঘের 'অতি বেগুনি রশ্মির' ( ultra violet ray ) আলোতে আমরা দেখতে পাই না।
আমরা দেখতে না পেলে কি হবে, পোকামাকড় কিন্তু ঠিকই এই অতি বেগুনি আলোতে দেখতে পায়!
এই কারনে আমরা যখন থাপ্পড় দিয়ে একটি মশা মারতে চাই তখন একদম ব্যর্থ হই, কারণ আমাদের হাতের নড়াচড়ার আগেই মশা অতি বেগুনি আলোতে তা দেখে ফেলে!

এগুলি ছাড়াও আরো ভয়ঙ্কর রকমের আলো আছে। এক্সরে, শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ছবি তোলা যায়। সবচাইতে বেশি ফ্রিকোয়েন্সির রশ্মি হচ্ছে ' গামা রে'। সবচাইতে কম ফ্রিকোয়েন্সির রশ্মি হল রেডিও ওয়েভ।

এইভাবে উপলব্ধি করতে পারবো, আমরা যে জগতটাকে দেখি তা আসলে সত্যিকারের কোন বাস্তব জগত নয়!
এক ভূতুরে মায়ার জগতে আমরা বসবাস করছি।
আমরা যে আলোর কথা আলোচনা করছি সেটি আসলে কী ?
আলো আসলে ভরহীন সুক্ষ্ম কণার স্রোত।
এই সুক্ষ্ম কণিকার নাম দেওয়া হয়েছে 'ফোটন'। এই সুক্ষ্ম কণাগুলি যেমন কণার মত আচরণ করে আবার তরঙ্গের মত আচরণ করে।
এই ফোটন কণাগুলি প্রতি সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে থাকে।
জগতে যত গতিশীল বস্তু আছে তার মধ্যে এই ফোটন কণাগুলির গতি ( আলোর গতি)
সর্বোচ্চ। জগতে এরচেয়ে বেশি কোন গতি নেই। আরো আশ্চর্যের বিষয় হল যে আলোর এই গতি সকল ক্ষেত্রে সকল অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে। গনিতের ভাষায় এটাকে বলে ধ্রুবক। অর্থাৎ সময়ের হেরফের হতে পারে কিন্তু আলোর গতির কোন হেরফের হবে না।
এইখান থেকেই আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্বের সূচনা।
বিষয়টি কিছুটা এইরকম আলোর গতি সাপেক্ষে সময় প্রভাবিত হয়।
যদি দুইজন ব্যক্তির একজন পৃথিবীতে স্থির অবস্থায় থাকে এবং দ্বিতীয়জন দ্রুত গতিতে মহাশূন্যে ছুটতে থাকে তবে প্রথম ব্যক্তির তুলনায় দ্বিতীয় ব্যক্তির ঘড়ির সময় স্লো হয়ে যাবে। এইভাবে দ্বিতীয় ব্যক্তি যদি কোনভাবে আলোর গতির সমান গতিতে চলতে পারেন তবে তার বয়স আর বাড়বে না! তার ঘড়ি থেমে যাবে। তিনি চির তরুন থাকবেন! সেই সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে অবস্থানকারী ব্যক্তি বুড়ো হয়ে মারা যাবেন।
কথা হচ্ছিল আমাদের নানা রঙের বস্তুকে দেখা নিয়ে।
আমরা দেখলাম যে,আলো বা ফোটন কণাগুলি কোন বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখের রেটিনাতে এসে পড়লে তখন আমরা বস্তুটিকে দেখতে পাই।
আমরা এও দেখেছি যে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ফোটন কণাগুলি যখন আমাদের চোখে এসে পড়ে আমরা তখন সেই নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের জন্য নির্দিষ্ট রঙ দেখতে পাই।
আবার নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বা ফ্রিকোয়েন্সি নির্ভর করে ফোটন কণাগুলির নির্দিষ্ট শক্তির উপরে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আমরা যে বর্ণিল জগত দেখি তা আসলে বর্ণিল নয়।
বিভিন্ন শক্তি সম্পন্ন ফোটন কণা বা আলোক তরঙ্গের অপরুপ এক খেলা।
যাকে আলোর ভেল্কিবাজি বা আলোর কারসাজি বলা যেতে পারে।

কথা হচ্ছিল রেড জোন বা লাল আলো নিয়ে।
লাল আলো যে সব সময় খারাপ বা ভয়ের কিছু তা নয়।
খেয়াল করলে দেখা যাবে যে সকল রকমের
সামরিক যানবাহনে লাল আলো ব্যবহার করা হয়। এটা যে শুধু ভয়ের উদ্রেক সৃষ্টি করার জন্য তা নয়। নাইটভিশন বা রাতে দেখার জন্য লাল আলো খুবই কার্যকরী।
রাতের বেলায় সামরিক বিমান, সমূদ্রের জলের নিচে সাবমেরিন, রাতের যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের মাথার হেডলাইট ইত্যাদিতে লো ফ্রিকোয়েন্সির লাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কারণ দীর্ঘক্ষন অন্ধকারে দেখতে হলে আমাদের চোখ লাল আলোতে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নেয়। অপরপক্ষে সাদা ফ্ল্যাশলাইট যেমন চোখ ধাঁধিয়ে দেয় আবার নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু অন্ধকারে হারিয়ে যায়। তাই লো ফ্রিকোয়েন্সির লাল আলো রাতে চলাচলের জন্য বেশি উপযোগী।

আমাদের সবার ধারনা আছে যে, রাস্তায় নির্ধারিত গতিবেগের বেশি গতিতে গাড়ি চালালে ট্রাফিক পুলিশ তাড়া করে ধরে ফেলবে এবং জরিমানা করবে।
এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ চলন্ত গাড়ির গতি মাপার জন্য একটি ছোট যন্ত্র ব্যবহার করে থাকে। গাড়ি যখন কাছে আসতে থাকে তখন এই যন্ত্রটিতে এক ধরনের শব্দ হয় আর গাড়ি যখন দূরে চলে যেতে থাকে তখন আরেক ধরনের শব্দ হয়। এই শব্দের ধরন বিশ্লেষণ করে যন্ত্রটি গাড়ির গতিবেগ বলে দেয়। এটাকে বলে 'ডপলার ইফেক্ট'।
এই ডপলার ইফেক্ট কাজে লাগিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডুইন হাবল ১৯২৯ সালে প্রমান করেন যে, আমাদের বিশ্বজগত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। গ্যালাক্সিগুলি পরস্পরের কাছ থেকে দ্রুত দূরে সড়ে যাচ্ছে।
যতই দূরে সড়ে যায় ততই দূরের নক্ষত্র গুলির লাল আলোর বিচ্যুতি হয় ( Red shift)। এই রেড শিফট পর্যবেক্ষণ করেই দূরের নক্ষত্রগুলির আরো দূরে চলে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে।

পুরুষদের জন্য একটি সতর্ক কথা।
প্রথমত মহিলারা পুরুষের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল দেখে!
দ্বিতীয়ত মহিলাদের দেখার ক্ষেত্র ( Visual field) পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি!
সেইজন্য একজন মহিলা পিছনে না তাকিয়েও আড়চোখে পিছনের বখাটে পুরুষের সব কার্যকলাপ দেখে নিতে পারে!
অতএব সাধু সাবধান!

আরো একটি কথা - আমাদের এই বিশ্ব ব্রম্মাণ্ড ফোটন কণায় ভরপুর এবং তার নির্দিষ্ট ধ্রুব গতিতে ছুটে চলেছে । তারপরেও আমরা যা জানি আলো সরল পথে চলে তা পুরোপুরি সত্যি নয়। কাঁচের গ্লাশ ভর্তি জলে আঙ্গুল ডুবিয়ে দেখবেন আঙ্গুল অন্যরকম কিছুটা খাটো দেখা যায়। এটা হয় আলোর বাতাস থেকে জলে এবং জল থেকে বাতাসের মধ্যে যাতায়াতের কারনে!

বহুদূরের কোনো নক্ষত্রের আলো আমাদের সূর্যের কাছ দিয়ে আসার সময় সূর্যের মাধ্যাকর্ষণের টানে আলো বেঁকে যায়।
ফলে আমরা নক্ষত্রটিকে যে জায়গায় দেখি বাস্তবে নক্ষত্রটি সেই জায়গায় নেই !
ফলে আমরা যে জগতটাকে দেখি তাও আসলে সত্যিকারের বাস্তব কোন জগত নয়।
আমরা এক অবাস্তব ভূতুড়ে মায়ার জগতে আছি!

এই জগতের জাগতিক আলোর বাইরেও এক মহাজাগতিক কিংবা স্বর্গীয় আলো থাকতে পারে।
প্রাচীণ ইহুদি পুস্তক জেনেসিসে বলা আছে -- " ঈশ্বর স্বর্গ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন ; তারপর বললেন, 'আলোকিত হও' (Let there be light!)
'আর অমনি সব আলোকিত হয়ে গেল!''

মহামতি বুদ্ধ বলেছেন -"নির্বাণের আলোকে আলোকিত হও!"

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন -" আলো, আলো, আলো আমার, আলোয় ভূবণ ভরা... "

আমাদের বলা উচিৎ -লাল,সবুজ, হলুদ, নয় ;
'সত্যিকারের জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত হও।'।

Copyright সুকুমার সুর রায়।।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়