ডা কামরুন লুনা

Published:
2022-06-10 21:30:51 BdST

ইউনিভার্সিটি ওয়ার্ল্ড ranking : এবং বাংলাদেশের "অক্স-ব্রিজ " বিশ্ববিদ্যালয়সমুহ


 

ডা. আনিকা তাবাসসুম
___________________________

টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কেনা যায় । খোলা যায়। টাকায় বিভিন্ন পদক পদবী পুরস্কার কেনা যায় ; হাতিয়ে নেওয়া যায়। খুনের মামলার আসামীও পদকবীর হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখায়। টাকায় পত্রিকায় মহাকবি সাহিত্যিক হিসেবে স্তুতি লেখানো যায়।টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে ১০ টাকার সিঙারা কিনে খেয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করা যায়। কিন্তু টাকায় বিশ্বমান কেনা যায় না । এইবার QS ওয়ার্ল্ড ranking ২০২৩ প্রকাশিত হলো। ভারতের ৯টি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সেরা ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এসেছে। আর নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশের শত শত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিও সে তালিকায় সম্মানজনক কোন অবস্থায় নেই। তলানিতে ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের ২টি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও বাংলাদেশের নাম নেই।

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন এ বিষয়ে একটি অনন্য পর্যালোচনা লিখেছেন। সে লেখাটি পাঠকদের পাঠে দেওয়া হল। অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন লিখেছেন,
"এইবার QS ওয়ার্ল্ড ranking ২০২৩ প্রকাশিত হলো। এইবার ভারতের ৯টি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সেরা ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এসেছে। এরমধ্যে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সের অবস্থান হলো ১৫৫! গতবার ছিল ১৮৬! এটাকে বলে উন্নয়ন। এই ইনস্টিটিউটের প্রথম ডিরেক্টর ছিলেন নোবেল জয়ী সি ভি রামান। দ্বিতীয় ডিরেক্টর ছিলেন যিনি তিনি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে কমপক্ষে ২০ বছর শিক্ষকতা করেছিলেন। সেই ইনস্টিটিউটের বর্তমান ডিরেক্টর হলো Govindan Rangarajan যিনি গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের ইন্টারফেসে গবেষণা করেন এবং খুবই ভালো গবেষক। শুধু গবেষণার স্কোর বিবেচনা করলে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সের অবস্থান এমআইটি, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন থেকেও ভালো করছে।
এছাড়া আইআইটি বোম্বের অবস্থান ১৭২, আইআইটি দিল্লির অবস্থান ১৭৪, আইআইটি মাদ্রাজ ২৫০, আইআইটি কানপুর ২৬৪, আইআইটি খরগপুর ২৭০! এছাড়া আইআইটি রুর্কি, গোহাটি, ইনডোরের অবস্থান যথাক্রমে ৩৬৯, ৩৮৪, ৩৯৬! আর দিল্লী ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৫২১-৫৩০! এইরম ভারতের ২৭টি প্রতিষ্ঠান রেঙ্কিং এ আছে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের ৩টি প্রতিষ্ঠান আছে ওয়ার্ল্ডের সেরা ৪০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। এছাড়া ৬০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে আছে আরো ৪টি
প্রতিষ্ঠান।
আমরা নাকি পাকিস্তান থেকে উন্নয়নে এগিয়ে আছি। আমাদের ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ ১ থেকে ৮০০র মধ্যে কোন প্রতিষ্ঠান নেই। ৮০১ থেকে ১০০০ এর মধ্যে আছে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে QS ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ বুয়েট আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে। ভারতের আইআইটি গুলো কত ভালো করতেছে। আর আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দাঁড়াতেই পারছে না। নামেই এইগুলো বিশ্ববিদ্যালয়। একটি কলেজে যেই পরিমান বরাদ্দ দেওয়া উচিত একেকটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে তার চেয়েও কম বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার উপর দলান্ধ প্রশাসন, অসুস্থ ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি আমাদের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।
নামে বেনামে, এখানে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ভবন বানিয়ে কিছু দলান্ধ মানুষকে শিক্ষক বানালেই কি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যায়? আমাদেরতো সংখ্যার সমস্যা না। সমস্যা হলো মানে। শুধুই কি বিশ্ববিদ্যালয়? যেখানে সেখানে মেডিক্যাল কলেজও খোলা হচ্ছে। কেবল ব্যবসা আর সংখ্যা বাড়িয়ে মানুষকে ভোলানোর হীন রাজনীতি। দেশকে সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ নেই দেশে। না হলে যেখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ হওয়া উচিত ১০ হাজার কোটি টাকা সেখানে ৫১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০ হাজার কোটি টাকা। যার ফলে সর্বত্র বেকারের হাহাকার। এই হাহাকারকে পুঁজি করে বিসিএস ক্যাডারকে মহিমান্বিত করে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মত লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েদের এই বিসিএসের পেছনে ছুটাচ্ছে। মেধার কি অপচয়। অথচ এদের স্বপ্ন হওয়ার কথা ছিল বড় বিজ্ঞানী, বড় প্রকৌশলী, বড় ডাক্তার, বড় দার্শনিক, বড় কবি, সাহিত্যিক হওয়ার স্বপ্ন দেখার। উন্নয়ন আসলে কাকে বলে এইটা না জেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করলে যা হয় দেশে এখন সেটাই হচ্ছে।"

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়