SAHA ANTAR

Published:
2022-05-30 22:19:54 BdST

প্রচলিত কিছু ডাহা মিথ্যা


রাজিক হাসান

 

রাজিক হাসান
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
_______________

"জাহাঙ্গীর ও শাহজাহান ছিলেন প্রেমিক পুরুষ। মিথ্যা -- আসলে দুজনেই ছিল ঘৃণিত হত্যাকারী। জাহাঙ্গীরের প্রেমিকা নূরজাহান ছিল তার ২৩ নম্বর স্ত্রী। জাহাঙ্গীর মিথ্যা সন্দেহে নিজের ১৮ বছর বয়সী পুত্রের দুচোখ অন্ধ করে দিয়েছিল। তার আর এক পুত্র প্রেমিক শাহজাহান সেই অন্ধ বড় ভাইকে পরবর্তীকালে হত্যা করে।"
"ভারত লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। মিথ্যা -- আসলে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেই মন্ত্রীসভা গঠন করে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে নিজের সময় ও সুযোগ মত পাততাড়ি গুটিয়েছেন। পাকিস্তানের (বাংলাদেশ সহ) দশা তো আরও করুণ ছিল। সেখানে ১৯৫৬ পর্যন্ত কনস্টিটিউশনাল মনার্কি চালু ছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত পাকিস্তানে রাজা ছিলেন ষষ্ঠ জর্জ, ১৯৫২ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত রাণী ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।"
"নেতাজীর মৃত্যু ১৯৪৫ সালে হেলিকাপ্টার দুর্ঘটনায় হয়েছে। তাঁর চিতাভষ্ম রয়েছে জাপানের রেনকোজি মন্দিরে। মিথ্যা -- আসলে ............ দুঃখিত, তথ্য এমনভাবেই গুপ্ত বা লুপ্ত করা হয়েছে যে প্রকৃত ঘটনা অনুমান করা অত্যন্ত কঠিন। তবে নেতাজীর পরিবারের লোকেরা, যারা পুরুষানুক্রমে এম পি হয়ে চলেছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন।"
"নেতাজীর কন্যা হলেন অনীতা বসু। মিথ্যা -- এখন ডি এন এ টেস্টের ভয়ে ভারতে আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন।"
"ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও ভারতের প্রথম শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর (১৯০১ - ১৯৫৩) মৃত্যু হয় অসুস্থতার কারণে। মিথ্যা -- আসলে তিনি পুলিশের অত্যাচারে মারা গেছেন।"
কিছু কথাঃ-
১৯৫৬ সনের ২৩ মার্চ সংবিধান চালু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তান ছিল যুক্তরাজ্যের অধীনস্থ একটি ডোমিনিয়ন। এর প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, দ্বিতীয় গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন, তৃতীয় গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ এবং চতুর্থ গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা ছিলেন। ব্রিটেনের রাজা/রানীর অধীনস্থ। ১৯৫৬ সনের সংবিধান মোতাবেক ইস্কান্দার মির্জা প্রেসিডেন্ট হন এবং দেশটি ব্রিটেনের সংশ্রবমুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়।
ভারতীয়রা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেই বীর স্বাধীনতা যোদ্ধাদের নাম উল্লেখ করতে গেলে কমেন্ট দীর্ঘ হয়ে যাবে। কিন্তু উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব ছিল। তাই তো মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালে গভর্নর জেনারেল হয়ে মন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান। মন্ত্রীরা কেউ বলেনি তুমি কে হে শপথ বাক্য পাঠ করানোর? বরং তারা শপথ করেছে ব্রিটিশদের আদর্শ অনুসরণ করে ব্রিটিশদের সংবিধানের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য বজায় রেখে তারা দেশ শাসন করবে। সেই জন্যই হেমাঙ্গ বিশ্বাস গান লিখেছিলেন "মাউন্ট ব্যাটন সাহেব অ, তোমারে সাধের ব্যাটন কার হাতে থুইয়া গ্যালা গ" দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা বিপুল সংখ্যক ভারতীয় যুবককে সৈন্যবাহিনীতে নিয়োগ করেছিল। কোন নেতা তার প্রতিবাদ করেন নি। এমন কি মহাত্মা গান্ধী, যিনি তাঁর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের জন্য বিখ্যাত, তিনিও প্রতিবাদ করেন নি। তিনিও যুবকদের ডাক দিয়ে বলেন নি, ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিও না। তোমাদের লড়াই ইংরেজদের সঙ্গে। প্রকৃত পক্ষে সেই সময় থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলন থমকে গিয়েছিল। বিশেষ করে ১৯৪২ (ভারত ছাড়োই শেষ) থেকে ১৯৪৭ এর মধ্যে কোন স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছে বলে জানা নেই। তবে কিছু কি হয় নি?
হ্যাঁ হয়েছে। ১৯৪৬ এর দাঙ্গা।
শেষ কথাঃ-
১৯৪৭ এ স্বাধীনতার দলিলে স‌ই ছিল ক্লিমেন্ট এটলীর। তখন তিনিই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তারপর যথারীতি নেহেরু গদিতে, গান্ধীজী জাতির জনক।
গোটা বিশ্ব জেনে গেল চরকা কেটে, অহিংসাবাদে ভারত স্বাধীনতা পেল।
এর প্রায় নয় বছর পর, ১৯৫৬ এ ক্লিমেন্ট এটলী আবার একবার আসেন ভারতে। রাত্রিবাস করেন কোলকাতাতে, গেস্ট হাউসে, তৎকালীন গভর্নর স্যার পি. বি. চক্রবর্তীর আতিথেয়তায়।
পি.বি.চক্রবর্তী জিজ্ঞেস করেছিলেন, প্রায় দুশো বছর শাসন করার পর, এত চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতকে স্বাধীনতা দিল কেন তাঁর দেশ?
এটলী উত্তর দিয়েছিলেন : সুভাষচন্দ্র। আজাদ হিন্দ বাহিনীর ঘটনার পর, ভারতের তৎকালীন স্থলবাহিনী, জলবাহিনীর সৈনিকেরা ততদিনে নব্ব‌ই শতাংশই বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল মনে প্রাণে। এদের দিয়ে আর ভারতবর্ষ শাসন করা যেত না! যেকোন মুহূর্তে শুরু হত বিদ্রোহ জানিয়েছিল ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগ। আর যুদ্ধক্লান্ত ব্রিটিশদের সেটা সামাল দেওয়ার মত ক্ষমতা ছিল না।
পি.বি.চক্রবর্তী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন : তাহলে গান্ধীজী? অহিংস আন্দোলনের প্রভাব?
ঘুম জড়ানো চোখে এটলী উত্তর দিয়েছিলেন : মি-নি-মা-ল। অতি সামান্য প্রভাব ছিল ওসবের।।
-------------------------------------------------------------------------
ইতিহাস জানার কোন শর্টকার্ট রাস্তা নেই। সত্যের পক্ষে রেফারেন্স একটি থাকলে, মিথ্যার পক্ষে রেফারেন্স হাজার হাজার। তাই আমার কোন রেফারেন্সও নেই। কারণ পড়ার কোন বিকল্প নেই। নিজে খুঁজে ইতিহাস নিজে বোঝাই সর্বোত্তম।#

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়