ডা কামরুন লুনা

Published:
2022-05-17 21:15:44 BdST

 প্রাক্তনী পুনর্মিলনী ২০২২: বেলা শেষের মীঢ় গমক মূর্ছনা


অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুস, ইন্টারনিষ্ট ও নেফ্রোলজীষ্ট, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধান নেফ্রোলজী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

 

অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুস, ইন্টারনিষ্ট ও নেফ্রোলজীষ্ট, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধান নেফ্রোলজী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, ও, জিসিপি এলুমনাই ও বৈজ্ঞানিক কন্সালটেন্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খন্ডকালীন অধ্যাপক পাবলিক হেলথ চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি
_____________________________

জীবনটাকে রিউন্ড করে পিছনে নেয়ার অনুক্ষন কিছুক্ষন সাঙ্গ হলো। শুরু হলে শেষ হবেই। তবে তার আবেশ বিহব্বলতা অনুরনন তরঙ্গায়িত হতে থাকবে অনেকক্ষন। চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তনী পূনর্মিলনী ২০২২ এর রেশ। অনেক ঘটনা রটনা স্তব্ধতার প্রায় যুগ পার হওযার ক্রান্তিকালে এক অসম্ভব কে সম্ভব করার উপাখ্যান। যারা এই মহামিলনকে সম্ভব করেছেন তাদেরকে জানাতে হয় হৃদয়ের অতল তল থেকে উৎসারিত কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধাঞ্জলী।
তবে এই পূনর্মিলনীতে কিছু কিছু অসঙ্গতি ও অসম্পুর্নতা এবং অতিরিক্কতা দৃষ্টিকটু ও হৃদয় গুমরানো কস্টকর ছিল। একজন বৈজ্ঞানিক গবেষণা কর্মীর পর্যবেক্ষন আর নিরীক্ষায় নৈব্যক্তিক ভাবে কিছু বিশ্লেষন করা যায় আগামীর জন্য।
শুরুর আনুষ্টানিকতা জাতীয় সঙ্গীত ও ধর্মীয় গ্রন্হ পাঠ, এবং কলেজের থীম সংগটা দেয়ায় পর পুনর্মিলনীর সবচেয়ে আনন্দের আর আবেগের কাজটা করা যেত। যা হল চেনা ও জানা। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে দল বদ্ধভাবে দাড়ানোর আহ্ববান জানিয়ে পরিচয় করানো যেত। এর ফলে সতীর্থতা আরো বিকশিত ও সবার স্বীকৃতি হতো এবং মনের মধ্য থেকে উপেক্ষার কুন্ঠা বিলীন হয়ে যেত। স্বতঃস্ফূর্ততা দৃঢ় হতো।
আমার কাছে পূনর্মিলনীর ও তৎপরবর্তী প্রায় সব অনুক্রম সমুহ একটা প্রশাসনিক বা জনমতপ্রভাকদের সভা মনে হয়েছে। পুরো সময়টাই ছিল আমলাদের আমলায়নের অনুরনন। জনমতপ্রভাকদের সভা। তাদেরকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত। পদ পদবী আর ক্ষমতার বিচ্ছুরন। পুূনর্মিলীতে একটাই পরিচয় তা হল প্রাক্তনী আর অবস্থান নির্নীত হবে অগ্রজ, সহপাঠী ও অনুজ ক্রমে। এই সমাবেশে তা খুবই উপেক্ষিত হয়েছে। শুরুতে যদি কালেক্টিভ পরিচয় পর্ব হতো তাহলে এই অবস্থা হতো না।
পূনর্মিলনীর সবচেয়ে বড় আকর্ষন হলো স্মৃতিচারন। যা হবে দলবদ্ধ কালেক্টিভ প্রজন্ম অনুযায়ী। সময় বাচতো এবং দারুন উপভোগ্য হতো। এখানে আয়োজকদের নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী স্মৃতিচারনে অনেকটা ফরমায়েসী প্রভাব ছিল। প্রায়শ ছিল মেপে মেপে তুষ্টি পুরনের শব্দচয়ন যার সাথে ছিল না হৃদয়ের স্পন্দন। সময়ের সতর্কতা জানাতে যে সময় ব্যয় হযেছে আমার তো মনে হয় তাতেই অনেক মুল্যবান সময় অপচয় হয়েছে এবং যা বিরক্তিকর ও সৌজন্যের বেত্যয়ও। শুরুতে বলে দিলেই হতো আর সময় শেষের ঘন্টা দেয়া যেতো। তবে সবচেয়ে প্রনিধানযোগ্য ছিল খুব কম বক্তব্যেই স্মৃতিচারন ছিল।
স্মারক বক্তৃতা কিন্তু জীবন আলেখ্য বর্ননা করা নয়। কোন সম্মানিত বিদগ্ধ ব্যক্তির কাজকে উৎসর্গ করে মৌলিক কোন গবেষণা বা সমীক্ষা বা দিকনির্দেশনা বা দর্শন বা নান্দনিক বক্তব্য উপস্থাপন। যেমন অধ্যাপক খালেক স্মারক বক্তৃতার বিষয় হতে পারতো ‘জ্ঞানের স্ফুরনে চট্টগ্রাম কলেজের সীমানা ডিঙানো অভিযান’। পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তত্বভিত্তিক উপস্থাপনা করা যেত, সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনতেন আর কিছু অভিজ্ঞান নিয়ে বাড়ী ফিরতেন, মনে রাখতেন।
আমার কাছে সব চেয়ে আনন্দের উপভোগের ছিল লাইনে দাড়ানো। বহু বছর লাইনে দাড়াইনি, প্রিভিলেজ ব্যক্তি হওযায়। লাইনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলাম অনেক কিছু সাথে ছবি তোলা। তবে সব সময় শেষ পর্যন্ত দাড়াতে পারিনি। কেউ না কেউ লাইন থেকে টেনে বের করে নিয়ে গেছে, বিশেষ করে লাইনে যারা আছে তাদের আপত্তির কারনে।
আগের দিনের দারুন উপভোগ্য রেলী, অনেক অনেকদিন পর হাঠা , গীতিময় আর নৃত্যের ঝংকারের সন্ধ্যা, ঠিক সময়ে স্ন্যাক আর তৃষ্নায় পানি, লিচুতলার আলো আধারীকে বাঙময় করে তুলেছিল। পরের দিন সকালে রঙ বেরঙের মাঝে ডুবে যাওয়া মনটানা কেমন করা সকাল। ছড়িয়ে ছিটে থাকা সব সতীর্থগন, কত কথা, কত ছবি, কত সেলফি।
সুশৃংখল, হাক ডাক ছাড়া, এত বড় এক মিলন সম্মেলন হলো। খাবার। রুচি সম্মত পরিবেশনা। দেদার কফি খাওয়া। ছবি তোলার কত কত মোমেন্ট, ইভেন্ট, সুযোগ আর সংযোগ। আমার ব্যাচ ১৯৬৯ এর মাত্র পাচজনকে পেয়েছিলাম। মোহীত, জাফর, রফিক, ফরিদ আর আতাউল। প্রাক্তনী শিল্পীদের অসাধারন পারফরমেন্স কখনও ভুলবার নয় যাতে হৃদয় নিংরানো টান ছিল। তবে বরেন্য আমন্ত্রিত শিল্পীদের উপস্থিতি আয়োজকদের চূড়ান্ত ডেডিকেশনের এক বড় ইনডিকেটর।
হরিষে বিষাদ ,আমাদের পিছু ছাড়লো না। একজন প্রাক্তনী, ওসমান, যিনি পুনর্মিলনীর সংগঠক ছিলেন অনুষ্টানের একাত্মতায় আত্মাহুতি দিলেন।কালের কপোল তলে হারিয়ে গেলেন চিরতরে। ইন্টারেষ্টিংলি এই সেই যে আমাকে লাইন থেকে বের করে নিয়ে ছিল খাবারের সময়। বিধাতা তাকে সবচেয়ে সম্মানের স্থানে অধিস্থিত করেন, যা আমাদের দীর্ঘশ্বাসে বারে নীরবে উচ্চারিত হচ্ছে।
এ ধরনের একটা মিলনমেলার পর একটা সম্মিলিত ঘোষণা থাকা বাঞ্চনীয ছিল যাতে থাকবে আগামীর আগমনী গন্ডির বাইরে কল্যানকামী অঙ্গীকার, কালের স্রোতে এটাই টিকে থেকে আমাদের ও আগামী প্রজন্মের জন্য দিশারী হত, হত আকাশ প্রদীপ। আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যারের কথায়, ‘অঙ্গীকার ছাড়া আনন্দ হলো বিভীষিকা’। আমরা আনন্দ করলাম কোন অঙ্গীকার ছাড়া।
দশম পূনর্মিলীর সব দৃশ্য, শব্ধ, মুখরতা, কলতান, ঐকতান সাঙ্গ হলো। আমরা চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তনী, আমাদের পার্ট বা ডাট, সেটাই হলো আমাদের মীঢ় গমক মূর্ছনা। কলেজের প্রথম দিনে দেখা দেয়ালের লিখনের প্রতিসুর। ’যাত্রা তব শুরু কর হে যাত্রিক কর হানি দ্বারে নবযুগ ডাকিছে তোমারে’।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়