Dr.Liakat Ali

Published:
2022-02-07 06:13:43 BdST

পেপ টেস্ট ও টিকা রুখতে পারে জরায়ু মুখ ক্যান্সার


লেখক

 

ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন
রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, কানাডা
প্রাক্তন সিএমসি
______________

 

১৯১৩ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমান গ্রিসের চিকিৎসক ডা. জর্জ পাপানিকোলাও। আর সেখানের একটি হাসপাতালে প্যাথলজিতে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯২০ সালে তিনি আবিষ্কার করেন নারীদের ভ্যাজাইনাল ফ্লুইডে জরায়ু ক্যান্সারের কোষ। কিন্তু তার সেই আবিষ্কার অনেকেই তখন আমলেই নেননি। যদিও ঠিক একই সময়ে রুমানিয়ার একজন প্যাথলজিস্ট ডা. অরেল বেবস্ ও ভ্যাজাইনাল ফ্লুইডে ক্যান্সারের কোষের অস্তিত্ব পান।
১৯৫০ সালে কানাডিয়ান গাইনিকালজিস্ট ডা. হিলিয়ারড পেপ টেস্টকে সহজভাবে ব্যবহার করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যদিও ডা. অরেলও একই সময়ে এই টেস্ট আবিষ্কার করেন, কিন্তু দুনিয়াব্যাপী ডা. পাপানিকোলাওর নামেই পেপ টেস্ট নামে পরিচিতি পায়। রুমানিয়াতে এই টেস্টকে ডা. বেবস্-এর সম্মানে ‘Méthode Babeș Papanicolaou’ টেস্ট হিসাবে অভিহিত করা হয়। এর হিসাবে আমাদের দেশে জরায়ু মুখের ক্যান্সারে প্রতি বছর আট হাজার থেকে ১০ হাজার মহিলা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ হাজারের বেশি হতে পারে। তবে আমাদের নিজস্ব ক্যান্সার নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকলে আসল সংখ্যা জানা যাবে। সারা পৃথিবীতে জরায়ু মুখের ক্যান্সারে প্রতি বছর আক্রান্ত মহিলার সংখ্যা প্রায় ৬০০ হাজার। ৯৫% জরায়ু মুখের ক্যান্সার হয়ে থাকে একটি ভাইরাসের কারণে। এই ভাইরাসের নাম হচ্ছে Human Pappiloma Virus (HPV)। এই ভাইরাস মহিলাদের প্রজনন্তরে সংক্রমণ করে এবং ৯০% ক্ষেত্রে বিনা চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। কিন্তু এইচপিভি সংক্রমণের ফলে ১৫-২০ বছর পর কিছু সংখ্যক মহিলার জরায়ু মুখের ক্যান্সার ধরা পড়ে।
কিভাবে জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়?
১। এইচপিভি টিকা : টিকার মাধ্যমে এই ক্যান্সারকে জয় করা সম্ভব। আপনার কন্যা সন্তানকে এইচপিভি টিকা দেওয়াটা জরুরি। কন্যা সন্তানের বয়স ৯ থেকে ১৪ হলে ২ ডোজ টিকা দিতে পারবেন। টিকার দাম প্রতিটি ডোজ ৬-৭ হাজার টাকা হতে পারে। অনেক পরিবারের পক্ষে এত টাকা ব্যয় করে টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। Global Alliance for Vaccines & Immunization (GAVI) বাংলাদেশকে এই টিকা ৪ দশমিক ৫ ডলারে দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে এবং ঢাকার গাজীপুরে পাইলট প্রজেক্টও করেছে। এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ কতটুকু এগিয়েছে জানি না। তবে আমাদের সবাইকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। যাতে সকল মেয়ে শিশু অচিরেই এইচপিভি টিকা স্বল্প মূল্যে পায়। এই ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত নিজের টাকায় বেশি দামে এইচপিভি টিকা দেওয়ার কোন বিকল্প নেই।
২। স্ক্রিনিং টেস্ট : পেপ টেস্ট ২০ থেকে ২১ বছরে বয়স থেকে শুরু করতে হয় এবং প্রতি ৩-৫ বছর পর পর করা উচিত। এই টেস্ট করতে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হয়। বাংলাদেশে এখন দেশব্যাপী সরকারি পর্যায়ে Visual Inspection with Acetic Acid (VIA) টেস্ট করা হয়। এ ব্যাপারে সরকারি হাসপাতালে গাইনি বিভাগে তথ্য পাওয়া যাবে।
জরায়ু ক্যান্সার হয়ে গেলে এর চিকিৎসাায় সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি দিতে হয়। এতে খরচ ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। সুতরাং ক্যান্সার প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
অতি সত্বর কন্যা সন্তানকে এইচপিভি টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। নিজে পেপ টেস্ট করুন এবং আপনার অস্বচ্ছল আত্মীয় অথবা বাসায় সাহায্যকারী মহিলাকে ও পেপ টেস্ট করার জন্য সাথে নিয়ে যান।
আর একটি কথা না বললেই নয়। আমাদের পোশাক শিল্পের ৮০ ভাগ নারী কর্মী। মালিক পক্ষ যদি প্রতিটি নারীকর্মীদের জন্য পেপ/ ভিআইএ টেস্ট বোনাস চালু করেন, তাহলে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের বাৎসরিক আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমে আসবে। সকলের সহযোগিতায় জরায়ু ক্যান্সার পরাজিত হবে, এটাই প্রত্যাশা।



লেখক : রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট, কানাডা

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়