Dr.Liakat Ali
Published:2022-01-20 23:27:17 BdST
জবাবদিহি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সংক্রান্ত ড. শিবেন্দ্র কর্মকারের ভিন্নমতের জবাব দিলেন ডা. আজাদ হাসান
লেখক
ডা. আজাদ হাসান
__________________
গত ১০ অক্টোবর ২০২১-এ ডাক্তার প্রতিদিন.কম-এ প্রকাশিত আমাকে উদ্দেশ্য করে ড. শিবেন্দ্র কর্মকারের একটি লেখার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
-------------
উক্ত লেখাটি ইতিপূর্বে আমার লেখা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্টিকেল এর পরিপ্রেক্ষিতে উনি ওনার মতামত ব্যক্ত করেছেন।
সম্মানিত লেখক এর মতামত- এর প্রতি সম্মান রেখে এ প্রসংগে আমি আমার বক্তব্য তুলে ধরছি। আশা করি তা হলে ইতিপূর্ব আমার উপস্থাপিত বক্তব্য পাঠকের কাছে আরো পরিষ্কার হবে।
প্রথমেই বলে নেই যে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে সব উৎস বা সোর্স হতে ঔষধ উৎপাদনের মৌলিক উপাদান সংগ্রহ করা হয় তা হলোঃ
১) হার্ব বা লতা-গুল্ম।
২) এনিমেল এক্সট্রাক্ট।
৩) ক্যামিকেল।
৪) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি।
সুতরাং আধুনিক মেডিসিন মানেই সিন্থেটিক প্রডাক্ট কথাটি সঠিক নয়।
তাছাড়া আধুনিক মেডিসিন সম্পর্কে আরো যে বিষয় গুলো গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, আধুনিক মেডিসিন মাইক্রো লেভেলে বা মলিকুলার লেভেলে কাজ করে থাকে। তাই আধুনিক মেডিসিনের কার্যকরিতা বুঝতে হলে, উক্ত মেডিসিন এর "মুড অফ একশন" বুঝতে হবে। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় এন্টি-ম্যালেরিয়াল ড্রাগ, টিউবারকিউলসিস বা যক্ষার চিকিৎসায় এন্টি-টিবি ড্রাগ এগুলো স্পেসিফিক জীবানুর বিরুদ্ধে কার্যকর। আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে ১৯৪১ সনে পেনিসিলিন আবিষ্কার একটি নতুন যুগের সূচনা করে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত ঔষধ কখনো ব্যাকটিরিয়ার "সেল-ওয়াল"-এর বিরুদ্ধে, কখনো বা "ব্যাকটেরিয়ার সেলের অভ্যন্তরের" বিভিন্ন উপাদান যেমন "রাইবোজম" - এর বিরুদ্ধে কাজ করে, আবার কিছু এন্টিবায়োটিক আছে যা ব্যাকটেরিয়ার নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরস্থ ডিএনএ-র বিরুদ্ধে কার্যকর। এভাবে আধুনিক মেডিসিন মলিকুলার লেভেলে কাজ করে।
তাছাড়া ইনসুলিন-এর আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার ডায়বেটিস রোগীর চিকিৎসার মাধ্যমে তাদেরকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত হতে রক্ষা করে তাদের জীবনকে প্রলম্বিত করা সম্ভব হয়েছে। ইনসুলিন আমাদের শরীরে নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সাহায্যে কাজ করে থাকে। আবার এখন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে হিউম্যান ইনসুলিন এর মতো কার্যকর ইনসুলিন উৎপাদন করা হচ্ছে এবং এখনো এটা নিয়ে গবেষণা চলমান আছে। বর্তমানে ইনসুলিন ইনজেকশনের পাশাপাশি "নাজাল স্প্রে" এবং সাবকিউটেনিয়াস "ইনসুলিন ইম্প্ল্যান্ট" ব্যবহার করা যায় কিনা সেটার উপর ব্যাপক গবেষণা চলছে এবং এক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছে।
তাছাড়া যে কোনো রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর কি কি সিম্পটম বা লক্ষণ আছে, সেগুলো প্রশমনের জন্য "সিম্পটমেটিক" চিকিৎসা এবং মূল সমস্যার সমাধানের জন্য অন্যান্য ঔষধ ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, পেপটিক আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত "হায়সিন এন-ব্রোমাইড" পরিপাক তন্ত্রের স্মুথ মাসলের কন্ট্রাকশন কমিয়ে রোগীর পেটের ব্যথা কমাবে, আর প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর পরবর্তীতে (ফারদার) গ্যাস্ট্রিক জুস-এর এসিডিটি বা হাইড্রোজেন সিকরেশন (নিঃসরণ) কমাবে এবং এন্টাসিড জাতীয় ঔষধ অলরেডি সিকরেটেড্ গ্যাস্ট্রিক জুসের এসিডিটি কমাতে সাহায্য করবে। এভাবে এক একটি রোগের চিকিৎসায় রোগের ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয়া হয়। বলাবাহুল্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা রোগীর মলিকুলার লেভেল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত।
প্রসংগত উল্লেখ্য আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ঔষধ সমূহ ব্যবহারের জন্য মার্কেটে আসার আগে বিভিন্ন ধাপে এক্সপেরিমেন্টে যেমন এনিম্যাল স্ট্যাডি, গ্রুপ অফ পিপলস বা কমিউনিটির উপর স্ট্যাডি শেষে সন্তোষজনক ফলাফলের ভিত্তিতে মার্কেটিং - এর অনুমোদন পেয়ে থাকে।
আর একটি মেডিসিন মার্কেটিং এর অনুমোদন পেলেই তার উপর মনিটরিং শেষ হয়ে যায় না। বরং রোগীর উপর কোনো সাইড ইফেক্ট করছে কিনা সেটাও স্টাডি করা হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলবো, বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এভিডেন্স বেইজড্ এবং রিসার্চের উপর নির্ভরশীল। তাই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রদত্ত চিকিৎসা অনেক বেশী কার্যকর মেডিসিন বলে আমার ধারণা।।
প্রসংগত উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন কি আমাদের দেশেও বড় বড় হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী এন্ড অবস্ এসব বিষয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। অল্টারনেটিভ মেডিসিন এর ভিত্তি যদি এতটাই মজবুত হয়ে থাকে তা হলে তারাও ইনডিপেনডেন্ট হাসপাতাল চালু করে সেখানে মেডিসিন, সার্জারী এবং গাইনী রোগীর চিকিৎসা দিয়ে তাদের চিকিৎসা শাস্ত্রের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারেন।
আপনার মতামত দিন: