SAHA ANTAR

Published:
2021-12-21 21:58:23 BdST

পূর্বজ-পূর্বজাদের সুধাপান, ভাল্লুকের মহুয়া পান, প্রকৃত অর্থে প্রকৃতিই আমাদের শিক্ষক অধ্যাপক


লেখক

 

ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

______________________

আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের মোটামুটি দু ভাগ করা যায়। ম্যাক্রোনিউট্রেন্টস, যথাক্রমে ১। কার্বোহাইড্রেট, ২। প্রোটিন, ৩। ফ্যাট বা স্নেহপদার্থ। আর মাইক্রোনিউট্রয়েন্টস হলো বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল বা ধাতব যৌগ।
আশ্চর্য হবেন শুনলে যে সুষম আহার ( পিত্জা বা বার্গার, বা তন্দুরি বা বিরিয়ানি নয়) যাতে নিদেন পক্ষে মরসুমী ফল আছে অন্তত দু প্রকার, আমন্ড বাদাম বা খেজুর আছে, তাদের এইগুলির অভাব হবার কথাই নয়, যদি না পরিপাক পদ্ধতিতে কোন বিষম গোলমাল থাকে ।
এইবারে মূল খাদ্যের কথায় আসি। আমরা এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড, বা এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিডের নাম জানি, কিন্তু এসেনশিয়াল কার্বোহাইড্রেট বলে কভু শুনেছেন কি কিছু? আমি শুনি নি, অধিকাংশ চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষ ও একমত হবেন যে তাঁরাও শোনেন নি।
অস্যার্থ -- কার্বোহাইড্রেট চটপট শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় হলেও, যোগান না থাকলে আমাদের শরীর ফ্যাট থেকে কার্বোহাইড্রেট তৈরী করতে সক্ষম ৷ সবসময়ে না কিন্তু। এইখানে অনেকগুলি হরমোন বা অন্তক্ষরী গ্রন্থির কাজ আছে।
শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কম থাকলে, তবেই এই হেপাটিক লিপোলিসিস বা অন্যত্র চর্বির ভাণ্ডার কে ভেঙে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া সম্ভব ।
ইনসুলিন ক্ষরিত হয় রিফাইন্ড কার্ব খেলে হু হু করে। এতে যেমন শরীরের কোষে কোষে গ্লুকোজ পৌঁছয়, তেমনি আবার লিভার ও মাংসপেশি তে গ্লাইকোজেন জমা হয়, কখনো যদি কার্ব এর অভাব হয় খাদ্যে, সেই সময়ের কথা ভেবে। আরো আছে৷ এরপরেও রিফাইন্ড কার্ব বা ময়দা, চাউমিন বা কোল্ড ড্রিংস, খুব দামী চালের লম্বা দানার ভাত, রসযুক্ত মিষ্টি যেমন রসগোল্লা বা গুলাবজামুন খেলে হৈ হৈ করে ইনসুলিনের প্লাবন বইবে রক্তে।
তাই এইসব লোভনীয় খাদ্য একবারেই খেয়ে নেওয়া উচিত। ধরুণ ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে।
এরপরে অন্ততঃ ৬ ঘন্টা পরে কিন্তু ইনসুলিনের রক্তের পরিমাণ কমতে কমতে ক্রমে ন্যূনতম হয়ে যাবে।
তখন, শক্তির প্রয়োজন হলে বা রক্তে গ্লুকোজের মান কমে গেলে, কাউন্টার রেগুলেটরি হরমোন, যেমন গ্রোথ হরমোন ,গ্লুকাগন ও নর অ্যাডরেনালিন ক্ষরিত হয় হাইপোগ্লিসিমিয়া রোধ করার জন্যে। এই গ্রোথ হরমোন ই আমাদের শরীরের মাসল বা প্রোটিন ব্রেকডাউন বন্ধ করে, বরং নতুন করে অস্টিওক্লাস্ট কোষের কাজ কমিয়ে বাড়ায় অস্টিওব্লাস্ট কোষের কাজ। আমাদের লোহিত রক্তকণিকার ও নব জন্ম ঘটে৷
আর প্রথমে লিভারের গ্লাইকোজেন ও মাসলের গ্লাইকোজেন নিঃশেষ হয়ে গ্লুকোজে পরিবর্তিত হতে থাকে। এই ভাণ্ডার ও ফুরোলে লিভারের de novo lipogenesis এ প্রস্তুত লিভারের ফ্যাট ক্রমে শর্করায় পরিণত হয়। এর পরের প্যানক্রিয়াসের ফ্যাট ড্রপলেট ও একই ভাবে শর্করায় পরিণত হয়। এরপরে পালা ভিসেরাল ফ্যাট শেষ হয়ে সাবকিউটেনিয়াস ফ্যাটের। তাও বাধ্য হয় গলে কার্বে পরিণত হতে।

তবে ইনসুলিনের উপস্থিতি তে এই লিপোলিসিস আদৌ হবে না। কেন জানিনে ইনসুলিনের ভারি পছন্দ ফ্যাট কোষেদের। প্রেম বা প্যায়ার ভি তারো বোলা জায়।

জল আদৌ ইনসুলিনের ক্ষরণ করায় না। ফ্যাট বা মাখন বা ঘি বা বিদেশীদের ভার্জিন অলিভ অয়েল বা মালয়ালী দের নারকেল তেল ও না। চিজ, পর্ক ফ্যাট বা কাজুবাদাম ও নয়৷

প্রোটিন, ইনসুলিনের ক্ষরণ ঘটায় তবে তা কার্বের অর্ধেক।
আর গ্লুকোজ, সুক্রোজ বা কর্ন সিরাপ হৈ হৈ করে ইনসুলিনের ক্ষরণ ঘটায়।

আবার আমাদের পাকস্থলী বা স্টম্যাক পূর্ণ হলে পাকস্থলী র Y Y পেপ্টাইড, স্ট্রেচ রিসেপ্টর রা মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়, ক্ষরিত হয় লেপ্টিন যা আবার খিদেবোধ বন্ধ করে দেয়, আমরাও খাওয়া বন্ধ করি।

সুখাদ্যের গন্ধ নাকে এলে আমাদের খিদেবোধ হয় কারণ ঘ্রাণ হরমোন বা ঘ্রেলিন ( সামঞ্জস্য লক্ষ করবেন, প্রিয় পাঠক পাঠিকা) ক্ষরিত হয় মস্তিষ্কে।

আমাদের শরীরের খাদ্যের ক্যালরি মাপ করার কোন ক্ষমতা নেই, কখনো ছিলনা। অন্য কোন প্রাণীর ও তা নেই। দিনে ৬-৭-৮ বার খাওয়া মানেই সর্বনাশের মাথায় বাড়ি। ( অবিশ্যি এখনো অনেক নামী চিকিৎসক এমন পরামর্শ দেন বই কি) ।

আমাদের ১০,০০০ বছর আগের পূর্বজ বা পূর্বজা দের জীন ই রয়ে গেছে অন্তরঙ্গে, বহিরঙ্গে যতো পরিবর্তন ই হোক, এটি ভুলবেন না। আমাদের শরীরে অ্যালকোহল ডি হাইড্রোজিনেজ নামক একটি হরমোন প্রয়োজনে ক্ষরিত হয়, তার অর্থ আমাদের পূর্বজ - পূর্বজা রা মাঝে মাঝে সুধাপান করতেন বৈকি। আমরা শুনেছি ভাল্লুক বা হনুমানেও মহুয়ার রস খেয়ে বেসামাল হয়ে পড়ে কখনো কখনো। প্রকৃত অর্থে প্রকৃতিই আমাদের শিক্ষক অধ্যাপক ই বটে।।

** এই তুচ্ছ রচনাটি আমার সংকলিত, The obesity epidemic নিয়ে আমিও, নেহাত সামান্য, ক্ষুদ্র হলেও চিন্তিত বৈকি।

*

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়