Dr.Liakat Ali

Published:
2021-12-16 21:07:40 BdST

এলমা ' হত্যা': স্ত্রী সন্তান গোপন করেছিল ইফতেখার, হুটহাট যে কারণে প্রবাসীকে বিয়ে ও অন্যান্য


 

ডেস্ক
______________

বিয়ের পর থেকেই এলমার ওপর শুরু হয় নির্যাতন।

 

ফ্রান্সে এক স্ত্রী ও সন্তান থাকার বিষয়টি গোপন রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এলমা চৌধুরীকে (মেঘলা) বিয়ে করেছিলেন ইফতেখার আবেদীন। অর্থবিত্তে এগিয়ে থাকা ইফতেখারের ব্যাপারে শুরু থেকেই এলমার পরিবারের খটকা ছিল। তবু মেয়ের ইচ্ছার কাছে হার মানতে হয়েছিল তাঁদের।মেয়েও চিন্তিত ছিল তাঁর বিয়ে নয়।
এজন্য কাউন্সেলিং নেন এক কাউন্সেলরের কাছে। কাউন্সেলর তাকে বলেছিলেন, আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্য করেন। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাঁর জন্য সুসংবাদ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। নিশ্চয়ই তিনি সেরা স্বামী পাবেন।
এলমা চৌধুরী বিশ্বাস করেছিলেন সেই কাউন্সেলিং তদবির। তাই প্রবাসী পাত্র বিয়েতে বেশ আগ্রহী ছিলেন।
হুটহাট করে বিয়ে হয়ে যায়।

এলমার নিকট জনেরা এ দাবি করেছে।

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে গতকাল মেয়ের লাশ বুঝে নিতে এসেছিলেন বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, মাসখানেকের পরিচয়ে চলতি বছরের এপ্রিলে ইফতেখারকে বিয়ে করেন এলমা। ইফতেখারের মা-বাবাই বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিলেন। বিয়ের পরদিন থেকেই নির্যাতন শুরু। এমনকি ধামরাইয়ে এলমাদের বাড়িতে গিয়েও থেমে থাকেননি ইফতেখার। তাঁরা এলমাকে আর ইফতেখারের সঙ্গে ফিরতে দিতে চাননি। আর কখনো নির্যাতন করবেন না, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলমাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যান ইফতেখার। বাসায় গিয়েই এলমার ফোনটা কবজা করেন ইফতেখার পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দেন।

এ বিষয়টি বিভিন্ন তথ্যের সমাহারে ইনফরমেটিভ ময়নাতদন্ত করেছেন লেখক শিল্পী চিকিৎসক ডা গুলজার হোসেন উজ্জ্বল।
তিনি লিখেছেন,

"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী ইলমা নিহত হয়েছে। স্বামীর নির্যাতনে মারা গেছে বলেই স্পষ্ট ধারণা মিলছে। মেয়েটির বাবা মা ও সহপাঠীদের কথা বার্তা শুনে মনে হয়েছে মেয়েটির স্বামী অসুস্থ ও বিকৃত মানসিকতার ছিল। স্ত্রীকে অবিশ্বাস করত। কারো সাথে মিশতে দিতোনা। মেয়েটির বাবা (যার পরনে পাঞ্জাবী, মুখে সুন্নতী দাড়ি) কেঁদে কেঁদে বলেছেন আমার মেয়েটারে হিজাব পরাইছে, চুল কেটে দিছে।
এক সহপাঠী বলেছে বিয়ের পর মেয়েটি আগের মত আর হাসিখুশি ছিলনা। সবার সাথে মিশতোনা। বিয়ের পর যে ক'দিন ভার্সিটিতে এসেছে একটানা ভিডিও ক্যামেরা ওপেন করে রেখেছে স্বামীর কাছে নিজের সতীত্ব প্রমানের জন্য। এক পর্যায়ে মেয়েটির মোবাইল ফোন, সিম সবই কেড়ে নেওয়া হয়। মেয়েটির মা বলেছে "আমাদের সাথে ইলমাকে যোগাযোগ করতে দিতোনা।"

এরপর ইলমার বাবা মা কোন ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়নি। এই যোগাযোগহীনতাকে ধরে নেওয়া যায় তারা মেনেও নিয়েছে। শেষে পেয়েছে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ ইলমার শাশুড়ির কাছে। শাশুড়ি ফোন করে বলেছে "আপনার মেয়ে ঘুমের ওষুধ খাইছে।"

এদিকে এক ফেসবুক সেলিব্রেটি দাবী করছে ইলমা তাকে বেশ কিছুদিন আগে নক করেছিল। সেলিব্রেটির একটি গ্রুপ বা পেইজ ছিল যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে পজিটিভ ভাইভ দেওয়া। পজিটিভ কাউন্সেলিং করা। লাইফ মোটিভেশন টাইপ। এই সেলিব্রেটি আবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মী।

ইলমা সেলিব্রেটিকে বলছে তার বিয়ে হচ্ছেনা বলে তার মন খারাপ লাগছে। কারণ বাবা মা এটা নিয়ে খুব চিন্তিত। তারা ভেবে পাচ্ছেনা তাদের মেয়ের কি সমস্যা? কেন বিয়ে হচ্ছেনা? এমনকি ইলমাও ভেবে পাচ্ছেনা। এদিকে তার ছোটবোন আছে বিয়ের উপযুক্ত। যদিও ইলমা নিজেও তখনো ছাত্রী। পড়াশুনাই শেষ হয়নি। ইলমাকে সেলিব্রেটি জিজ্ঞেস করেছে "আপনার কোন পছন্দ আছে? " ইলমা বলেছে "না আপু, বাবা মা যা ভাল মনে করেন তাই হবে।"

তারপর সেলিব্রেটি কাম কাউন্সিলর বলেছে " অপেক্ষা করেন আপু, আল্লাহ নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনার জন্য ভাল কিছু রেখেছে সেজন্য দেরি হচ্ছে। " সেলিব্রিটির দাবী এরপর তিনি ইলমাকে বিশ্বাস করাতে পেরেছেন যে আল্লাহ তার কপালে সত্যিই ভাল কিছু রেখেছে সেজন্য বিয়ে দেরি হচ্ছে। নিশ্চয়ই অদূর ভবিষ্যতে তার ভাল বিয়ে হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্মান আর সুখ সে পাবে। ইলমা তার কাউন্সেলিং এ এতটাই আশ্বস্ত হয়েছিল যে সে বলেছিল "আপু আপনার কথা শুনে আমার তো এখনই বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। "

সেলিব্রেটি ইলমার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় লেখা তার সেই পোস্টটির সাথে তার কাউন্সেলিং পেইজটার লিংকও দিয়ে দেয়। যথারীতি শেয়ারও হচ্ছে প্রচুর।

তো এই হলো অবস্থা।
এই হলো কাউন্সেলিং এর নমূনা। বিয়ে হচ্ছেনা বলে মন খারাপ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, আর তার জন্য সান্ত্বনা হচ্ছে "ধৈর্য ধরেন আপনার জন্য খুব ভাল স্বামী, সেরা স্বামী অপেক্ষা করছে। একটা সেরা স্বামীই আপনার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে তোফা"। দুর্বল চিত্ত, সোশ্যাল স্টিগমাতে আক্রান্ত মানুষকে মিথ্যা সান্ত্বনা দেওয়ার নাম তাহলে কাউন্সেলিং।

আচ্ছা, ফেসবুকে গ্রুপ/পেইজ খুলে যারা কাউন্সেলিং করে তাদের এ সংক্রান্ত লেখাপড়া, প্রশিক্ষণ লাগেনা?

মেয়েটির জন্য খারাপ লাগছে। সে না পেল ভাল জীবন সংগী, না পেল ভাল শ্বশুর-শাশুড়ি, না পেল ভাল কাউন্সেলর।
"

বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন,এদেশে সাইকিয়াট্রিস্ট আর সাইকোলজিস্ট রা হচ্ছে পাগলের ডাক্তার। বাকি সবাই স্বঘোষিত কাউন্সেলর !!!

কাউন্সেলিং একটি স্বাস্থ্য সেবা- যে কেউ এটি দিতে গেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। ভুল কাউন্সেলিং আমাদের মনোজগতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অদক্ষ কাউন্সেলর নয়, পেশাদার সাইকিয়াট্রিস্ট /সাইকোলজিস্ট এর পরামর্শ নিন। সাইকিয়াট্রি আর সাইকোলজি দুটো আলাদা পেশা। স্ব স্ব জায়গায় পেশাদারিত্ব তৈরিটাই জরুরি। নামে বেনামে প্রতিষ্ঠান চিকিৎসকেরাও কম খোলেনি। আর অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসাসেবা (শারীরিক আর মানসিক উভয় দিকেই) বিক্রি করার ক্ষেত্রে দু একজন চিকিৎসক তো রীতিমত পাইয়োনিয়ার।

ডা প্রবাল অধিকারী লিখেছেন,
সাইকোলজির হর্তাকর্তারা এমবিবিএস চিকিৎসকদের 'ক্লিনিক‍্যাল সাইকোলজি'তে মাস্টার্স করার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।
নামে বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে সাতদিন-পনেরদিনের কোর্স পড়িয়ে কিছু অখাদ‍্য কুখাদ‍্যকে 'সাইকোলজিস্ট''কাউন্সিলর' বানিয়ে মাঠে ছেড়ে দিয়েছে।

সামনে আরো আসছে।

 

 

গত মঙ্গলবার এলমার মৃত্যু হয়। তাঁর সারা শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন। এলমার বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে বনানী থানায় গতকাল ইফতেখার আবেদীনকে ১ নম্বর আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় অপর দুই আসামি ইফতেখারের মা শিরিন আমিন ও পালক বাবা মোহম্মদ আমিন।

 

এদিকে এলমা চৌধুরী হত্যা মামলায় গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ইফতেখার আবেদীনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। অপর দুই আসামি এখনো পলাতক।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম জানাজার পর রাতেই ধামরাইয়ে এলমাকে দাফন করা হয়।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এলমাকে ‘হত্যা’র ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়