SAHA ANTAR

Published:
2021-10-25 22:26:42 BdST

ডায়াবেটিস,হাইপারটেনশন,স্থূলতা,ডিপ্রেশন,অস্টিও আর্থরাইটিস, আলঝাইমার্স ডিমেনশিয়া রিভার্স প্রসঙ্গে


লেখক

 

ডা সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

চিকিৎসাসেবার সেরা লেখক
__________________
ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, স্থূলতা, ডিপ্রেশন বা বিষাদ, অস্টিও আর্থরাইটিস, এমন কি, আলঝাইমার্স ডিমেনশিয়াও রিভার্স হয়েছে, এমন প্রমাণ আছে।

যেহেতু, এদের কোনটিই সংক্রামক বা সংক্রমণ জনিত নয়, লো কার্ব ডায়েটে থাকলে এবং প্রয়োজনে কিছু ওষুধ / কয়েকটি ওষুধ কিছুকাল ব্যবহার করে চললে নিরাময় হওয়া সম্ভব বৈকি।

এবং স্থূলাঙ্গ অথবা স্থূলাঙ্গী দের ও ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম আবশ্যক নয়, কারণ যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের বেশি হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে বলা মানেই প্রধানত তাঁদের দুই হাঁটুর ক্ষয়ে যাওয়া কার্টিলেজ ( পড়ুন অস্টিও আর্থরাইটিস) কে আরো বেশি করে শরীরের ওজন ধারণ করে চলাফেরা করতে বাধ্য করা আর কি!
এগুলি সবই রক্তে অধিক ইনসুলিনের প্রভাব থেকে বাঁচতে শরীরের অধিকাংশ কোষগুলির ইনসুলিন রেজিস্টান্স তৈরী করে ফেলা এবং তজ্জনিত প্রদাহ বা inflammation এর প্রভাবের ফল।

আর ডিপ্রেশন ও ডিমেনশিয়া রিভার্স হওয়ার কারণ টি অবশ্যই আলাদা।

মানব মস্তিষ্ক দু রকম ইন্ধনে চলে, ১/ ১০০% কার্বোহাইড্রেট, ২/ ৭৫% কিটোন বডিজ + ২৫% কার্বোহাইড্রেট এ। নাহ, মানব মস্তিষ্ক ১০০% কিটোন বডি ব্যবহার করতে অক্ষম। আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ, যেমন হৃদপিণ্ড, এবং অন্য সব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কম গুরুত্ব পূর্ণ অঙ্গ ই ( ব্যক্তিগত ধারণা, এমন বিভাজন হয় ই না) দিব্য ১০০% কিটোন বডি কে ইন্ধন হিসেবে ব্যবহার করে কাজ চালাতে পারে, এবং এইভাবে কাজ চালালেই তাদের ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার সম্ভব।
একমাত্র লোহিত রক্তকণিকা, এবং যে কোন ক্যানসার কোষ এই কিটোন ইন্ধন কে ব্যবহার করতে পারে না।

লোহিত রক্তকণিকা এবং মস্তিষ্ক ১০০% কিটোন বডি কে ইন্ধন হিসেবে কাজে লাগাতে পারে না, পারে না ক্যানসার কোষ ও, কিন্তু মানবশরীরের প্রযুক্তি বা ইঞ্জিনিয়ারিং এত উচ্চমানের যে, মানবশরীর ফ্যাট ( গ্লিসারল) ও নানা অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ গ্লুকোনিওজেনেসিস প্রণালী তৈরী করতে পারে। তবে, এই শরীর এতো উন্নত প্রযুক্তির যে, জমা ফ্যাট থেকেই প্রথমে গ্লুকোজ তৈরী হয়, এই ফ্যাট ভাণ্ডার পূর্ণ থাকলে প্রোটিন ভেঙে সচরাচর গ্লুকোজ তৈরী হয় না। মস্তিষ্কের উত্তুৃঙ্গতম ( Optimal) খাদ্য বা ইন্ধন হলো ৭৫% কিটোন বডি এবং ২৫% কার্বের একটি মিশ্রণ।।

বিশুদ্ধবাদী এবং স্থিতাবস্থা ( Status quo বাদী) দের চক্ষু উন্মীলিত হবে, এই আশা করা যায়, ২০২০ গ্রেগরীয় অব্দ বা তারপরে।

প্রশ্ন আসবে স্বাভাবিকভাবেই, যে মানবশরীরে অ্যামাইলেজ এবং টায়ালিন ( Ptyalin) উৎসেচকের উপস্থিতির কি কারণ? কেন এই উৎসেচক আছে??

কৃষির আবিষ্কারের আগের মানবজীবনে, কার্ব পাওয়া খুব কঠিন ছিল, এবং চাষ না করে পাওয়া উদ্ভিদের পাকা ফল টি, কখনো সখনো মানুষের আয়ত্বে আসতো। ( ১০০% মাংসাশী প্রাণী দেরো অ্যামাইলেজ উৎসেচক টি শরীর ক্ষরণ করে বৈকি)। বিশেষত :, মেরু দ্বয়ের কাছাকাছি এলাকায় বৃক্ষ ই খুব কম ছিল বা থাকলেও তা থাকতো নিতান্ত কম সময়ের জন্য। অতএব পাকা ফল ( এটিই উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি বা প্রজননের অন্যতম প্রচেষ্টা) পাওয়া ছিল, একধরণের প্রাইজ,বা পুরষ্কার।

আজ্ঞে প্রাইজ যদি কেউ প্রতিদিন পায় বা পেতে থাকে, তাহলে প্রাইজের বা পুরস্কারের মূল তত্ব টির ই লঙ্ঘন হয় বৈকি!! সেটি এজন্যই সুখপ্রদ নয়।।

এই কার্ব সমৃদ্ধ মিষ্ট ফল কে যাতে মানবশরীর ব্যবহার করতে পারে, তাইই এই গন্ধ ও দর্শনে টায়ালিন এর ক্ষরণ হওয়া শুরু হয় এবং ভক্ষণে অ্যামাইলেজ এর ক্ষরণ হয়।
আরেকটি লক্ষ্য করার বিষয় আছে। এতো উৎসেচক থাকলেও আমাদের খাদ্যনালীর শুধু মাত্র ক্ষুদ্রান্ত্রের শেষ ভাগ থেকেই কার্ব রক্তে শোষিত হয়, কিন্তু প্রোটিন ও ফ্যাটের মেটাবলিজম ও রক্তে শোষণ পর্ব শুরু হয় পাকস্থলী থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশেই, কারণ এই দুই ইন্ধন বা খাদ্য মানবশরীরের বিশেষ প্রয়োজন, অভিযোজন অনুযায়ী।।

লেখা যায়, যে এই কিটোন বডি ব্যবহারেই মানবমস্তিষ্ক চূড়ান্ত ভাবে কাজ করতে পারে, এবং উন্নত Cognition এর দ্বারাই বিষাদ, এবং পার্কিনসনিজম, ও এমন কি আলঝাইমার্স ডিমেনশিয়া ও রিভার্স হওয়া সম্ভব। এই উন্নত মনন ও চিন্তন ও এক অনাস্বাদিতপূর্ব অনুভূতি ও বটে, যা আমাদের কৃষি আবিষ্কারের আগের পূর্বজ রা বার বার বা লাগাতার অনুভব করেছেন। এই অবস্থা তেই মানব মস্তিষ্ক ৫০০ গ্রাম থেকে বেড়ে ১৫০০ গ্রামে পৌঁছেছিল।

আবার কৃষি উত্তর সময়ে অধিকতর কার্ব গ্রহণে তা কমে হয়েছে ১৩০০ গ্রাম।

মনে রাখতে হবে যে, অধিকাংশ কার্ব সমৃদ্ধ খাদ্য খেলে আমাদের শরীর কিন্তু কার্ব কেই ইন্ধন হিসেবে ব্যবহার করবে কারণ এই সময়ে ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকার ফলে ফ্যাট কে শরীর ব্যবহার করতেই পারে না, যেহেতু উচ্চ ইনসুলিনের উপস্থিতি তে গ্লুকাগন হরমোন আদৌ কাজ ই করতে পারবে না, কারণ কার্বোহাইড্রেট এর অভাব হলে, তখনই শুধু, গ্লুকাগন ফ্যাট সেল কে ফ্যাটি অ্যাসিডে ভেঙে, ইন্ধন হিসেবে কাজে লাগাতে পারে।

তবে, কার্বোহাইড্রেট ন্যূনতম বা শুন্য হওয়াটি আবশ্যক।।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়