Razik hasan

Published:
2021-09-21 18:53:39 BdST

Real Happiness, by renowned Buddhist teacher Sharon Salzberg থেকে অনুবাদবিমূর্ত এই পূর্ণিমার রাতে গৌতম বুদ্ধের জীবনের উপর একটি গল্প বলি


 

রাজিক হাসান
লন্ডন থেকে
____________________

আজ পূর্ণিমার রাত। ভাদ্র পূর্ণিমার এই রাতে জোৎস্নায় মায়াবী আলোতে চারিদিক ভরে আছে। এই পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করেই গৌতম বুদ্ধের জীবনে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যা লেখা আছে গৌতম বুদ্ধের ঐতিহ্যশালী জীবনীগ্রন্থগুলিতে। ত্রিপিটকে বুদ্ধবংস নামক গ্রন্থে গৌতম বুদ্ধের জীবনীও পাওয়া যায়। প্রাচীন যুগের ভারতীয়রা ইতিহাস ও কালপঞ্জীর ব্যাপারে নির্লিপ্ত ছিলেন, বরং তারা দর্শনের ওপর বেশি মনোযোগী ছিলেন। বৌদ্ধ গ্রন্থগুলিতে এই ধারার চিত্র লক্ষ্য করা যায়, যেখানে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি সম্বন্ধে যত বা উল্লেখ রয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে তার শিক্ষা ও দর্শনের বর্ণনা করা হয়েছে। বিমূর্ত এই পূর্ণিমার রাতে গৌতম বুদ্ধের জীবনের উপর একটি গল্প বলি আজ।

বসন্তের এক সকাল, যুবরাজ সিদ্ধার্থ তার শিক্ষা শেষ করে প্রাসাদের বাগানে খেলা করছিল। সে দেখলো এক ঝাঁক রাজহাঁস নীল আকাশে উড়ছে। হঠাৎ সে একটা আওয়াজ শুনতে পেল। সে দেখল এক আহত রাজহাঁসের ডানা থেকে রক্ত ঝরছে। রাজপুত্র ছুটে গেল সেখানে, দেখল একটি তীর পাখিটির ডানা ভেদ করেছে। দ্বিধা না করে সে ডানা থেকে তীরটি বের করল। পাখিটির মাথা তুলে কানে কানে বলে উঠলো, "তোমার ডানা থেকে তীরটি সরিয়েছি। সুস্থ হও তুমি।"

সিদ্ধার্থ বাগান থেকে কিছু ভেষজ সংগ্রহ করে কাই বানিয়ে পাখিটির ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিল। নিজের পোশাক ছিঁড়ে সে রাজহাঁসকে আলতো করে জড়িয়ে নিল।

" সিদ্ধার্থ ! রাজহাঁসটা আমাকে দাও, ওটা আমার!" সিদ্ধার্থ ঘুরে দেখল তার কাকার ছেলে দেবদত্তকে, কাঁধে তীর-ধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে, চোখ তার রাগে জ্বলছে। চিৎকার দিয়ে জানালো সে "আমিই পাখিটি মেরেছি, তাই পাখিটি আমার। দিয়ে দাও আমাকে।"

" না।" জবাব দেয় সিদ্ধার্থ, " আমিই ভূমি থেকে আহত রাজহাঁসটিকে উঠিয়েছি। এই পাখি প্রকৃতির যেখানে সে মুক্ত হয়ে উড়ে। এর জীবনের প্রতি তোমার কোন অধিকার নেই ভ্রাতা। তুমি ফিরে যাও।"

দেবদত্ত নম্র সিদ্ধার্থের কাছে এমন কঠিন প্রত্যুত্তর আশা করেনি কখনও। কেমন করে এত সাহস হয় তার। দেবদত্ত চিৎকার করে," কী? তুমি কি তোমার শিক্ষা সঠিকভাবে গ্রহণ করেছো, সিদ্ধার্থ ? " তুমি কি আমাদের রাজ্যের আইন জানো না? শিকারির অধিকার থাকে তার শিকারের উপর।"

" অবশ্যই রাজ্যের নিয়ম আমি জানি। কিন্তু এই রাজহাঁস মৃত নয়। তারও জীবনের প্রতি অধিকার আছে। আমি একে সুস্থ হতে সাহায্য করতে চাই।" রাজপুত্তর সিদ্ধার্থ পাখিটি নিয়ে শান্তভাবে রাজগৃহের দিকে এগিয়ে যায়।

রাজপুত্রের এমন আচরণে দেবদত্ত আরও ক্ষিপ্ত হয়। তার শিকারের সঙ্গীরাও চলে আসে তখন। দেবদত্ত ক্রুদ্ধ হয়, "দেখ ভ্রাতা, আমার বন্ধুদের, যারা স্বাক্ষী দেবে আমিই তীর দিয়ে রাজহাঁসটিকে মেরেছি।"

রাজপুত্র সিদ্ধার্থ সবাইকে অভিবাদন জানায়, " অবশ্যই এখানে কোন দ্বিমত নেই, আপনার নিক্ষিপ্ত তীরেই পাখিটি মাটিতে পড়ে। বরং চলুন বিষয়টি নিয়ে আমরা রাজদরবারের যাই, সেখানে অনেক বিজ্ঞজনেরা আছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন আহত পাখিটির কী পরিণতি হওয়া উচিত।"

দেবদত্ত সুবিচার প্রার্থনা করে রাজদরবারে আবেদন জানালো। ক্রুদ্ধ দেবদত্ত বলল, "আমি তীর নিক্ষেপ করে একটি রাজহাঁস শিকার করি কিন্তু রাজপুত্র সিদ্ধার্থ সেই রাজহাঁস বুকে করে রাজগৃহে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই রাজহাঁসটির প্রতি ন্যায্য অধিকার শুধুই আমার।"

"তুমি ঠিকই বলেছো, দেবদত্ত। এটাই আমাদের রাজ্যের আইন।" সমস্বরে মন্ত্রীরা জানালো।

"কিন্তু শুধু মরে গেলে," বলল সিদ্ধার্থ। " দেখো, এই রাজহাঁস শুধু আহত, মৃত নয়। আমি তাকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। রাজহাঁসের বেঁচে থাকার অধিকার অবশ্যই আছে। " বিনীতভাবে সে জানালো।

রাজা শুদ্ধোধন রাজদরবারে উপস্থিত থাকলেও ছিলেন নিশ্চুপ। সবার শেষে তিনি বলেন " আমি আজ সকালে একজন জ্ঞানী মানুষের সাথে সাক্ষাৎ পেয়েছি এবং তাকে রাজদরবারে নিয়েও এসেছি। আসুন আমরা তার মতামত জিজ্ঞাসা করি।" তিনি ইঙ্গিত করলেন দাঁড়িয়ে থাকা এক অদ্ভুত দীপ্তময় চেহারার বৃদ্ধর দিকে।

" রাজপুত্র ঠিক বলেছে।" জানালেন বৃদ্ধ। "রাজহাঁস মুক্ত হওয়ার অধিকার রাখে এবং জীবন তার নিজস্ব। কেউ পারে না তার উপর মালিকানা দাবি করতে। বলতে পারবে কেউ, কেন রাজহাঁসটি তার ঘর ও পরিবারে ফিরে যাওয়ার যোগ্য নয়? যুবরাজ সিদ্ধার্থ শুধু সাহায্য করতে যাচ্ছে যাতে আবার রাজহাঁস উড়তে পারে। পাখিটি তাঁরই রাখা উচিত।"

মন্ত্রীরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে তাদের মাথা নাড়ে আর বলে, "জ্ঞানীলোকটি ঠিকই বলেছেন। তাই এটাই নিষ্পত্তি। যুবরাজ সিদ্ধার্থ, তুমি রাজহাঁসটির খেয়াল রাখতে পারো।"

( গল্পটি Real Happiness, by renowned Buddhist teacher Sharon Salzberg থেকে অনুবাদ করা)

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়