SAHA ANTAR

Published:
2021-09-20 19:14:42 BdST

Osho: ”Secret of secrets“ অনুবাদপ্রত্যাশা, ভয় ও জ্ঞান


 


রাজিক হাসান
লন্ডন থেকে
_____________

এক সুফী দরবেশ যখন মৃত্যুশয্যায় তাঁর এক সহচর তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে সুফী দরবেশ, "কে আপনার গুরু?" উত্তরে সুফী দরবেশ বলেন, " উঁহু তার আর দরকার নেই, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সময় ফুরিয়ে আসছে। মৃত্যু আমার জন্য অপেক্ষা করছে।" প্রশ্নকর্তা নাছোড়বান্দা। আবার প্রশ্ন করলেন, "শুধু নামটি যদি বলেন। আপনি এখনও জীবিত, আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস আছে, আর আপনি তো কথাও বলতে পারছেন।" সুফী বলেন, "এর উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। কারণ আমার গুরুর সংখ্যা হাজারের উপর। শুধুমাত্র তাদের নাম বলতেই মাস লেগে যাবে। আসলেই খুব দেরি হয়ে গেছে। তবে আমার তিনজন গুরুর কথা অবশ্যই বলব আমি। "

প্রথম জনের কথা বলছি। তিনি ছিলেন এক চোর। অনেকআগে একবার আমি মরুভূমিতে হারিয়ে যাই। এরপর যখন আমি একটি গ্রামে এসে পৌঁছাই তখন গভীর রাত। বাজারের দোকান, সরাইখানা সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তায় কোন জনমানুষ নেই। আমি কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজছিলাম। কিছুক্ষন পর রাস্তায় একজনের দেখা পেলাম। সে একটি বাড়ির দেয়ালের পার্শে রাস্তার উপর একটি গর্ত খুঁড়ছিল। তাকে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি মুসাফির, আজ রাতের জন্য আমি কি কোথাও আশ্রয় পেতে পারি? সে আমাকে বলল, আমি একজন চোর, চুরি আমার পেশা। আপনাকে দেখে সুফী দরবেশ মনে হচ্ছে। এই গভীর রাতে থাকার জন্য কোন থাকার জন্য কোন জায়গা বের করা খুব মুশকিল আপনার জন্যে। যদি আপত্তি না করেন আপনি আমার ঘরে রাত্রি যাপন করতে পারেন।

আমি দ্বিধাগ্রস্থ হলাম। তারপরই মনে হলো, যদি এক চোর সুফীকে ভয় না পায়, এক সুফী কেন চোরের জন্য ভীত হবে? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি অবশ্যই রাজি আছি।" তারপর চোরের সঙ্গে সঙ্গে গেলাম তার বাড়িতে রাত্রি যাপন করতে। সেই চোরটি ছিল মানুষ হিসেবে অতি উত্তম, অতি চমৎকার। আমি সেখানে বাস করি পুরো একটি মাস। প্রতিরাতে সে আমাকে বলতো, এখন আমি কাজে যাচ্ছি। আপনি বিশ্রাম করুন। আপনি আপনার প্রার্থনা করুন। আপনি আপনার কাজ করুন। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে জানাবেন আমাকে। যখন সে ফিরে আসতো, আমি তাকে জিজ্ঞেস করতাম, আজ তোমার কিছু কি মিলেছে? সে উত্তর দিতো, নাহ, আজ রাতে কিছুই মেলেনি। আগামীকাল আমি আবার চেষ্টা করবো।

যদিও প্রতিরাতে খালি হাতেই ফিরতো সে কিন্তু কখনও হতাশ হতে দেখি নি তাকে। সে বলতো, আমি আগামীকাল আবার চেষ্টা করবো, আর ঈশ্বরের কৃপায় অবশ্যই কিছু পাবো। তুমিও কিন্তু আমার জন্য প্রার্থনা করবে। তুমি তো বলতে পারো, হে ঈশ্বর তুমি সাহায্য কর এই দরিদ্রকে।
যখন আমি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর প্রার্থনা করছিলাম, কিন্তু কোন ফল পাচ্ছিলাম না, মনে হচ্ছিল এই সকল প্রার্থনা আসলে আমার পাগলামি, আমি হতাশ হতে লাগলাম। মনে মনে ভাবলাম, ঈশ্বর বলে আসলে কিছু নেই। ঠিক তখনই আমার চোরটির কথা মনে পরে গেল, সে প্রতি রাতেই বলতো, ঈশ্বরের কৃপায় আগামীকাল আমি কিছু পাবো।

তাই আমি আর একবার চেষ্টা করলাম। যদি এক চোর যদি আশাবাদী হয়, সেই বিশ্বাস রাখতে পারে, আমার অন্তত আর একদিন বেশি চেষ্টা করা উচিত। যদিও এই রকম অনেকবারই হয়েছে কিন্তু এবার শুধু চোরের কথা মনেকরে আবারও আমি প্রার্থনায় বসলাম। প্রার্থনায় আমার মনে হল, এবার ঈশ্বর আমার দিকে চেয়েছেন। আমার জীবনে দ্রুত পরিবর্তন এলো। যেন সত্যিই কিছু একটা হলো। আমি মাথা নত করলাম এক চোরের বাড়ির দিকে যদিও সে তখন আমার থেকে হাজার মাইল দূরে। সেই চোর হচ্ছে আমার জীবনের প্রথম গুরু।

আমার দ্বিতীয় গুরু হচ্ছে এক কুকুর। সেদিন আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম। ক্লান্ত হয়ে এক নদীর কিনারে পৌঁছালাম। পেছন পেছন চলে এলো এক কুকুর। সেও তৃষ্ণার্ত ছিল। সে নদীর ধারে গেল, নদীর শান্ত জলে সে তার প্রতিবিম্ব দেখলো। সে চিৎকার দিল। প্রতিবিম্বও চিৎকার দিল। সে ভয়ে পিছিয়ে গেল। দিনটি ছিল প্রচণ্ড গরম আর কুকুরটি এতো বেশি তৃষ্ণার্ত ছিল যে সে পিছিয়ে যেতে দ্বিধাগ্রস্থ ছিল। সে আবার ফিরে এলো এবং জলের দিকে তাকালো। সে আবার তার প্রতিবিম্ব দেখলো। কিন্তু তার তৃষ্ণা এতো বেশি ছিল যে সে জলের মধ্যে লাফ দিল। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবিম্বটি চলে গেল। সে জল পান করলো। তারপর কিছুক্ষন জলে সাঁতার কাটলো। আমি দেখছিলাম। আমি বুঝলাম ঈশ্বর আমাকে বার্তা পাঠিয়েছেন - ভয়কে জয় কর। ওই কুকুরের মতো আমি যখন অপরিচিত কোন সীমানায় লাফ দিতে যাই, ঠিক একই রকম ভয় আমাকেও গ্রাস করে। আমিও তখন কুকুরটির মতো তার খুব কিনারে যাই, দ্বিধান্বিত হই, তারপর ফিরে আসি। যদি এক কুকুর জয় করতে পারে তার অজানা আতঙ্ককে, আমি কেন পারবো না আমার অজানা আতঙ্ক জয় করতে? এরপর আমিও আমার অজানা আতঙ্কের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। আমার সব অজানা ভয় আমাকে পেছনে ফেলে চলে গেল। মৃত্যু ভয়েও ভীত হই নি আর কখনও।

আমার তৃতীয় গুরু এক ছোট্ট বালক। আমি একবার এক দূরের শহরে পৌঁছালাম। সেখানে দেখলাম এক ছোট্ট বালক একটি জ্বলন্ত মোমবাতি হাতের তালু দিয়ে আড়াল করে মসজিদের দিকে যাচ্ছে। মজা করেই আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি নিজে বাতিটি জালিয়েছো?" সেই বালকটি বলল, "জ্বি, মহাশয়।" আমি তাকে আবার মজা করে বললাম, একটা সময় ছিল যখন মোমবাতিটি নেভানো ছিল, তারপর একটা সময় মোমবাতিটি জ্বালানো হলো, তুমি কি আমাকে বলতে পারো এই আলোর উৎস কোথায় যেখান থেকে এই আলোক ছড়ায়? যেহেতু তুমি এই আলো জ্বালিয়েছো সেহেতু তুমি নিশ্চয় বলতে পারবে এর সঠিক উত্তর। বালকটি হেসে দিল, তারপর সে এক ফুঁ দিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিয়ে বলল, এখন আপনি দেখছেন আলো চলে গেল, বলুন তো এবার আলো কোথায় চলে গেল? বালকটির উত্তর শুনে আমার অহং ধ্বংস হলো, জ্ঞানও হলো চূর্ণবিচূর্ণ।
------------------------------------------------------------------
Osho: ”Secret of secrets“ অনুবাদ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়