SAHA ANTAR

Published:
2021-09-05 17:20:39 BdST

মায়ের জবানীতে শেষ  কয়েক ঘন্টা এবং সিদ্ধার্থ শুক্লার মর্মান্তিক চলে যাওয়া



ডেস্ক
____________
প্রয়াত সিদ্ধার্থ শুক্লাকে নিয়ে
দুটি লেখা প্রকাশ করছি। একটি বলাকা সেনগুপ্তর বিজ্ঞান বিশ্লেষণ। অন্যটি মর্মস্পর্শী।


বলাকা সেনগুপ্ত লিখেছেন,
সিদ্ধার্থ শুক্লা মারা গেছেন মাত্র ৪০ বছর বয়সে। ইংলিশে একটা কথা আছে লাইফ বিগিনস অ্যাট ফরটি। কিন্তু সিদ্ধার্থর জীবন ফরটিতেই শেষ হয়ে গেল।
কিসের জন্য এই বয়সের একটা যুবককে হার্ট অ্যাটাকে মরতে হলো? আসুন এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
এই ছবিটা দেখুন। তিনি একজন মডেল কাম অভিনেতা। কিন্তু তাঁর হাত দুটো এক খনি শ্রমিক বা ডকের খালাসীর মত। কি করে এমন হলো? তিনি তো কোনদিন কঠোর পরিশ্রম করেন নি। তাঁর বাবা একজন ব্যাংক অফিসার। স্বচ্ছলতার মধ্যে বড় হয়েছেন। পড়াশুনা করেছেন, মডেলিং, অভিনয় করেছেন।
আসলে মাসল এমনি এমনি হয় নি, মাসল বানানো হয়েছে। সুন্দর দেখানোর জন্য এরা যা কিছু করতে রাজী। বোধবুদ্ধি নেই, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান নেই। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিয়ে ডাম্বেল নিয়ে এক্সারসাইজ করলে অল্পদিনেই হাত দুটো ভীমাকৃতি ধারণ করে। আচ্ছা চলো করা যাক। আমারও ওই রকম চাই।
কেবল সিদ্ধার্থই নয়, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের বহু যুবক এইভাবে মাসল ফুলিয়ে ঘোরে। ওজন নিয়ে ব্যায়াম করে এবং প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নেয়। বাইসেপ ট্রাইসেপ হবে, দেখতে ভালো লাগবে। এটাই তাদের ধারণা। কিন্তু ধারণাটা ভুল। দেখতে মোটেই ভালো লাগে না। অ্যাবনর্মাল লাগে। যেটা স্বাভাবিক সেটাই সুন্দর। এ কথা কেউ বোঝে না।
প্রোটিন জিনিসটা দেহের এক প্রয়োজনীয় উপাদান। এটা মাসল বিল্ডিং এও সাহায্য করে। কিন্তু এই প্রোটিন যদি অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয় তবে সমস্যা দেখা দেয়।
কি সমস্যা? আসুন একটু বোঝার চেষ্টা করি।

ম্যাক্রোফেজ নামক এক ব্লাড সেল আমাদের আর্টারিকে পরিষ্কার থাকতে সাহায্য করে। আর্টারিয়াল প্লাক, কলেস্টেরল ইত্যাদি পরিষ্কার করে রক্তপ্রবাহকে স্বচ্ছন্দ রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত প্রোটিন থেকে উদ্ভূত অ্যামিনো অ্যাসিড এই ম্যাক্রোফেজকে সঙ্কেত পাঠায়, অনেক খেটেছো, এবার একটু আরাম করো, বংশবৃদ্ধি করো। ম্যাক্রোফেজ নিজের কর্তব্য ছেড়ে অতি দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকে। ফলে আর্টারিয়াল প্লাক বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত ম্যাক্রোফেজও মরে গিয়ে সেই মৃত কোষগুলো ধমনীতে অতিরিক্ত প্লাক তৈরি হতে থাকে। আর্টারিয়াল প্লাক বাড়তে বাড়তে ধমনীর ভিতরের দেওয়ালে এঁটে বসতে থাকে। ধমনী মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। রক্ত চলাচলের জায়গা সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়। রক্ত সংবহন বাধাপ্রাপ্ত হয়, ব্লাড প্রেশার বাড়ে। চরম পর্যায়ে হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মৃত্যু এগিয়ে আসে।
তাই স্বাভাবিক ডায়েট থেকে প্রোটিন গ্রহণ করাই ঠিক। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়া একেবারেই ঠিক নয়। জেনে রাখবেন, কোন ডায়েটেশিয়ান কিচ্ছু জানে না, আর জানলেও আপনাকে সুপরামর্শ দেবে না। সব হিংসুটে। তাই আপনি বুঝতেই পারবেন না আপনি কখন প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা ছাড়িয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনছেন। সুতরাং অতিরিক্ত প্রোটিন থেকে দূরে থাকুন। বাইসেপ ট্রাইসেপের জন্য জীবন দেওয়া বোকামি।

 

মায়ের জবানিতে
সিদ্ধার্থ’র জীবনের শেষ কয়েক ঘন্টা


বৃহস্পতিবারের সকালটা এমন একটা খারাপ খবর নিয়ে আসবে তা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করেনি কেউ। ৪০ বছরের ফিট ছেলেটা এইভাবে ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমের দেশে চলে যাবে তা কে জানত?

 

 

সিদ্ধার্থের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার আন্ধেরির ফ্ল্যাটে ছুটে গিয়েছিলেন টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুরা। পৌঁছেছিলেন বিগ বস খ্যাত রাহুল মহাজন। সিদ্ধার্থের মা, বান্ধবী শেহনাজ গিলকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাননি রাহুল। এক সাক্ষাৎকারে রাহুল জানান, সিদ্ধার্থের মা তাকে জানিয়েছে ঠিক কী ঘটেছিল বৃহস্পতিবার ভোররাতে।

 

রাহুল বলেন‘তার মা খুব আধ্যাত্মিক মানুষ। উনি আমাকে যা বলেছেন, হতে পারে এটা পুলিশকে দেওয়া আনুষ্ঠানিক বয়ানের সঙ্গে পুরোপুরি মিল খাবে না… উনি জানান রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা নাগাদ সিদ্ধার্থ বাড়ি ফেরে, বাইরে থেকে খেয়েই ফিরেছিল। সাধারণত ও বাড়িতেই খায়। এরপর ও ঘুমোতে চলে যায়, এরপর ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে ঘুম থেকে উঠে ওর শরীরে অস্বস্তি হচ্ছিল… এরপর ও এক গ্লাস জল খায়….এরপর আর ঘুম থেকে উঠেনি’।

রাহুল যোগ করেন, ‘ওর মা সকাল সাতটা নাগাদ সিদ্ধার্থকে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখেন। কিছুক্ষণ পর উনার মনে হয় সিদ্ধার্থ একটু অদ্ভূতভাবে ঘুমিয়ে রয়েছে। এরপর ডাকাডাকি করলেও ঘুম ভাঙেনি, উনি ডাক্তার ডাকেন। তিনি এসে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সিদ্ধার্থকে হাসপাতালে নিয়ে যান…’।

এরপরের ঘটনা কারো অজানা নয়, কুপার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয়েছিল সিদ্ধার্থের।

 

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়