ডেস্ক

Published:
2021-08-15 13:43:39 BdST

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একগুচ্ছ কবিতা


আনোয়ার হোসেন বাদল
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একগুচ্ছ কবিতাঃ

১. উদ্ধত তর্জনী
----------------------

তখন গর্জে উঠলেন বাঙলার শ্রেষ্ঠ পুরুষ,
পাহাড়, অরণ্য আর বাঙলার আকাশ ভেদ করে
তাঁর উদ্ধত তর্জনী পৃথিবীময় ছড়িয়ে গেলো
ঘোষিত হলো পৃথিবীর তেজদীপ্ত সেই অমোঘ নির্দেশ
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। "

মধ্য বসন্তের সেই উদ্যান তখন কানায় কানায় পূর্ণ
অতঃপর বুক টানকরে কিঞ্চিত ডানে ঘুরে আবার তিনি বললেন
"এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"
ঠিক তখনই আমাদের বাড়ির রেডিওর সামনে বসে থাকা মিনহাজরা
দৃপ্তকন্ঠে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলেন
"জয় বাঙলা।

আকাশ কেঁপে গেলো, ছেয়ে গেলো হানাদার যুদ্ধ বিমান
রক্তাক্ত হয়ে গেলো বহমান স্রোত, বাঙলার আকাশ
লাশে লাশে ভরে গেলো তেরশত নদী
সখিনা হারালো তার সোয়ামীর ঘর
মালতীর মুছে গেলো সিথির সিঁদুর
ধর্মের দোহাই দিয়ে হায়েনার লুটে নিলো মায়ের সম্ভ্রম।

ঘরে ঘরে তখন জয় বাংলার দূর্গ
মুখে মুখে বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র "জয় বাঙলা"
প্রাণে প্রাণে পিতার শেষ নির্দেশ
" আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি
তোমাদের যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো"
পালিয়ে গেলো পৃথিবীর ঘৃনিত পশুর দল
আমরা পেলাম আমাদের স্বাধীনতা এবং আমাদের পিতা।
----------------------

২.  ভেঙ্গে গেলো বাঙালিদের মন
--------------------------------------------
সাতই মার্চে, অবশেষে বলেন জাতির পিতা
"পশ্চিমারা আর নয়তো বাঙলাদেশের মিতা।
যুক্তি দিয়ে কথা বলি মুক্তি মিলে না
অস্ত্র ছাড়া যুক্তি দিয়ে মুক্তি হবে না।

"এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম"

জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ
ধরিয়ে দিলো হায়েনাদের বুকের মাঝে কাঁপন।

যুক্তি গেলো ভেসে
মুক্তি পেতে বীর বাঙালী মরলো হেসে হেসে।
লড়াই করে মুক্তিসেনা,
সাগরসমান রক্তে কেনা
ডিসেম্বরে স্বাধীন সূর্য উঠলো পুব আকাশে।

---------------------
৩. বঙ্গবন্ধু
--------------

এই দেশের যে নেতা ছিলেন নাম ছিলো তার মুজিবর
চেহারাতে নায়ক ছিলেন ছিলোনা তার কোনো ডর।

বাঙালীরা রুদ্ধ যখন পাকিস্তানের দুঃশাসন
শেখ মুজিবর সাহস দিতেন বজ্রকন্ঠে সেই ভাষণ।

উঠলো জেগে বীর বাঙালী সুদৃঢ় তার মনোবল
নেতা মুজিব হর্ষে বলেন সবাই খুঁজো মুক্তিকল।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে মুজিব করেন প্রতিবাদ
নির্যাতিত সকল মানুষ ক্ষুব্ধ চোখের অশ্রুপাত।

জনপ্রিয় মহান মুজিব বঙ্গবাসীর মঙ্গলে
কথা বলেন যেমন সিংহ গর্জনে তার জঙ্গলে।

ভিত ভেঙ্গে যায় পশু যারা পাকিস্তানি পশ্চিমা'র
এবং তাদের দোষর যারা দেশের ঘৃণ্য রাজাকার।

বন্দী করে শেখ মুজিবকে চালায় কতো নির্যাতন
এমনি ভাবে সামনে আসে সত্তুরের সেই নির্বাচন।

একত্রিত পূর্ব বঙ্গ সকল মানুষ দিয়ে ভোট
নির্বাচিত করেন সবাই স্বাধিকারেও ঐক্যজোট।

কিন্তু তারা কুচক্রী সব কালক্ষেপন করেন বেশ
ছল-চাতুরী করতে করতে ৭ই মার্চে ভাষণ শেষ।

পঁচিশে মার্চ কালোরাতে পাক-হানাদার সশস্ত্র
হত্যা করে বাঙালীদের সবাই ছিলেন নিরস্ত্র।

হ্যামিলিয়নের যাদুর মতন বঙ্গবন্ধুর আদেশে
বাঙালীরা রক্ত দিলেন হর্ষ চিত্তে স্ব-দেশে

স্বাধীন হলো মাতৃ-জঠর কিন্তু সেই যে রাজাকার
নেয়না মেনে স্বাধীন বঙ্গ ষড়যন্ত্র বারংবার।

হত্যা করে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ক'দিন পর
স্বপ্নভেঙে বিচূর্ণ হয় বঙ্গবাসী হলেন পর।

দুঃখে সবার কত্তো বছর বুকে আজও সর্বনাশ
নাও জেনে হে সকল মানুষ স্বাধীন বঙ্গের ইতিহাস।।

৪. নেতার প্রতি
---------------------

একবার তাকিয়ে দেখো হে নেতা
তোমার এ পথ আজ দাম্ভিক আর অহঙ্কারির পদভারে প্রকম্পিত,
বঞ্চিত, বুভুক্ষের দল এখানে পিষ্ট হয় অবিরত,
এপথ আজ ভুলে গেছে তোমার সেই অমোঘ নির্দেশ,
'এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম '।
সন্তানেরা তোমার ভালো নেই।

তোমার বাংলা এখন হায়েনাদের চারণভূমি
শুধু মৃত্যুই ওৎ পেতে আছে  ধ্বান্ত এ পথের প্রতি বাঁকে।
অশরিরী এক উটের পিঠে এ পথ আজ ছুটে চলেছে নরকের মোহনায়,
উত্তরসূরী ভালো নেই।

হে অধিনায়ক
তোমার মাটিতে আজও
মায়ের সম্ভ্রম রাজপথে ভাগাভাগি হয়,
স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে কারা যেন নিজেরাই খোদা বনে যায়,
যেনো ফেরাউনের মতো বুড়িগঙ্গার স্রোত উল্টে দিবে তারা
তোমার ষোল কোটি বনি আদম  আজ ষোল লাখ হামানের হাতে বন্দী কাটায়।

তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলায়
শিশু রাসেলের নির্মম মৃত্যুর মতো,
অগনিত শিশু হত্যা হয় আমরা নিরুদ্ধ তাকিয়ে থাকি
প্রতিদিন শিশু নিগ্রহ চলে
ক্যাম্পাসে, রাজপথে ধর্ষনের সেঞ্চুরি হয়
তোমার সন্তান দুধেভাতে নেই।

আশীর্বাদ দাও হে  অগ্রদূত,
একাত্তরের মতো গর্জে উঠুক বাংলার মানুষ,
তোমার বজ্রকন্ঠ আজ বেজে উঠুক কোটি জনতার কন্ঠে,
ঘুচে যাক সব অন্ধকার, অনাচার, অবিচার
জেগে উঠুক প্রতিবাদী, বিপ্লবী জনতা।
দূর হতে তোমার আশীর্বাদে যেমনি জেগেছিলো সাতকোটি বাঙালী,
হায়েনারা যেমন পর্যদুস্ত হয়েছিলো,
তোমার দামাল ছেলেদের হাতে,
উনিশ শো একাত্তরে।

--------------------

৫. ভেঙ্গে গেলো বাঙালিদের মন
--------------------------------------------

মুক্ত হলো বঙ্গবাসী শেখ মুজিবের ডাকে
পঁচাত্তরে সেই মুক্তি আটকে গেলো পাঁকে
বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে করেন এক আদেশ
'নব্য দেশের সভ্য তোমরা
গড়ো সোনার দেশ।'
যুক্তি দিলেন তিনি
বঞ্চিত আর ক্ষুধার্তদের পাশে থাকবেন যিনি
আমি তারেই চিনি।

মহৎ হৃদয় জাতির পিতা পাকবাহিনীর চামচাদেরও মুক্তি দিয়ে বলেন
যুক্তি করে সবাই মিলে দেশটা এবার গড়েন।
মুক্তি পেয়ে চামচাগুলো আবার যুক্তি করে
দেশটা আবার পাকিস্থানই হয়
যদি কি না বঙ্গবন্ধু মরে।

এলো পঁচাত্তর
যুক্তি করে তারা
দেশটা আবার বানাতে চায় সাতই মার্চের পূর্ব একাত্তর।

যুক্তিবিহীন নিষ্ঠুরতা দিয়ে
সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর বসভবনে গিয়ে
হত্যা করেন তাঁহার পরিজন
ভেঙ্গে গেলো বাঙালিদের মন।

---------------------

৬. আজ আমি স্বাধীন বাঙাল
------------------------------------------

ষোলই ডিসেম্বর এলেই নিজেকে চিনতে পারি
হাজার বছরের পরাধীন বাঙাল
পরম্পরার দিকে ফিরে তাকাই
আমি আমার পরিচয়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি।

এই দিন এলেই আয়নায় নিজেকে দেখি
আজ আমি জিতে গেছি,
লাল সবুজ পতাকা হাতে বাংলার দামাল ছেলে
এই আমি ছিলাম বখতিয়ারের শিকার।

বিজয়ের এই ক্ষণে
আমি মনে রাখি ইঙ্গ ফরাসীর কথা
গোড়াদের দাস হয়ে কাটিয়েছি দু'শো বছর
ধর্মের আবরণে বলৎকারের শিকার
আজ আমি বিজয়ী বীর।

যে পতাকা তিরিশ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত
তাকে আমি কখনও বিস্মৃত হই না
বঙ্গবন্ধুর উদ্ধত তর্জনীতে বেঁধে
বারবার ঘুরে আসি ছাপান্না হাজার বর্গমাইল
আজ আমি স্বাধীন বাঙাল।
-----------------------

#anwarbadol
লেখকঃ
আনোয়ার হোসেন বাদল
কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, পর্যটক ও অনুবাদক।
পেশাঃ শিক্ষকতা
ঠিকানাঃ
একুশে সড়ক, কালিকাপুর, পটুৃযাখালী
মোবাঃ ০১৭১৮৭৪৮০৯৭

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়