Dr.Liakat Ali

Published:
2021-08-02 18:14:41 BdST

টেবিল আচার কি, কে কেমন, কতটা মেনে চলি!


 

অধ্যাপক ডা শুভাগত চৌধুরী
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যাচার্য
____________________
টেবিল আচার ।

টেবিল ম্যানারস নিয়ে আমরা ততটা মাথা ঘামাইনা । তবে সামরিক বাহিনীতে এর অপরিসীম গুরুত্ব ।
আমার মনে আছে একবার এক ঘটনা । কোন এক প্রতিষ্ঠানে একবার একজন বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ ব্যক্তি পরিদর্শনে গেছেন। সবাই অপেক্ষা করছেন আর তাকে মধ্যাহ্ন ভোজনে আমন্তন জানানো হয়েছে সেখানে তিনি স্টাফ দের কিছু বলবেন । তিনি এলেন বার্তা এল । সেই প্রতিষ্ঠান প্রধান আর সঙ্গে আমরা সিনিয়ার ব্যক্তি গেলাম তাকে নিয়ে আসতে । ইতিমধ্যে সেখানে বসা যারা তারা ভোজন শুরু করে ফেলেছেন। তিনি যখন ঢুকলেন তখন টেবিলে চামচ আর প্লেটে টুং টাং শব্দ। অতিথি স্বজন তাই তিনি তখন নিজে ক্ষুব্ধ হলেও টেবিল ম্যানা রস নিয়ে একটি নাতি দীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন।
আম রা অনেকে অনেক শিক্ষিত কিন্তু টেবিলে অন্যদের সাথে বসে ভদ্র ভাবে খেতে পারিনা।
নানান বড় বড় পদে অনেক দেশে নিয়োগ দেবার আগে লাঞ্চ বা ডিনারে আহবান দেয়া হয় কি করে প্রার্থী টেবিলে আচরন করেন কারন অনেক সময় ক্লায়েন্ট তা দেখে ইম্প্রেসড হন
সামাজিক অনুষ্ঠানেও টেবিল আচার , অফিসিয়াল ডিনারে টেবিল আচ্রার অনেক গুরুত্ব পূর্ণ ।
আমাদের দেশে সামরিক বাহিনীতে এই প্রশিক্ষন দেয়া হয় ।
তাই খাওয়ার সময় যথা যথ আচরন করলে নিজে বিব্রত হতে হয়না অন্যরাও হন না।
অনেক বাড়িতে মা বাবা শেখান আবার এর পরও শিখতে হয়। নিজেকে খুব তুলে ধরা বা শো অফ করা না , আপনি আমন্ত্রন কারিকে সম্মান জানাবেন মৃদু ভাবে । আর এই টেবিল আচার আপনার চরিত্র ও কিছু প্রতিফলিত করে। আপনার হো সট আর আহার সঙ্গি খুব পছন্দ করবেন।
ভাল টেবিল আচার করলে তা আপনার সামাজিক কৌশল বা সোশ্যাল স্কিল কে প্রতিফলিত করে আর এজন্য অনেক ইন্টার ভিউ প্রক্রিয়ার এ হয় একটা অংশ যেখানে আপনি অনেক উচু পদে যাবেন আর বড় নামকরা ক্লায়েন্টদের সাথে নিগোশিয়েট করে সফল হতে হবে ।
এমন এক বড় উদ্যোক্তার কথা বলি তিনি প্রার্থী অন্তিম নির্বাচন করেন তার সাথে লাঞ্চ , ডিনার আর পানীয় পানের শেষে তিনি দেখেন নানা পরিস্থিতিতে প্রার্থী কেমন আচরন করেন।আর সঠিক ম্যনারস না জানলে তিনি অবশ্যই চাকরি টি পাবেন না। ভাল আচরন করলে আপনার সঙ্গি আপনার সাথে বসে স্বস্তি বোধ করবেন। এতে আলাপের স্রোত চালু থাকবে আর অন্যান্য যেমন হাসি ছোট বাক্য বিনিময় , দেহ ভঙ্গি সব যা আলোচনার কম বড় অংশ নয়। সঠিক আহার আচার খুব সহায়ক আর কখনও আহত করবেনা আপনাকে।

টেবিল আচার কি
বস্তুত তা হল ডাইনিং টেবিল এ আচার আচরন , আমরা অনেক ভাবে খাই আর অনেক সময় অনানুষ্ঠানিক হলে যেমন তেমন ।
এর মানে এই নয় কেউ মুখ খুলে খাবার চর্বণ করবেন আর শব্দ করবেন ।এ খুব অসভ্যতা ।
আপনি বসলেন । আপনি অতিথিদের সঙ্গে বসলে ফোনের রিঙ্গার বন্ধ করা উচিত।আর পকেটে রাখুন হাতে বা টেবিলে নয় ।টেবিলে রাখা ঠিক না কারন এতে প্রবনতা হয়ে তুলে ফোনের বার্তা দেখা যা অন্য দের সামনে ভদ্র আচরন নয়।
টেবিল তৈরি আপনি এসে বসলেন হতে পারে কিউ আপনি এতে দাড়িয়ে এর পর এসে বসলেন । অনেক সময় আমন্ত্রন কারি বসলে পর বসতে হয়।
সোজা হয়ে আরামে , নুয়ে নয় , বা হাত দুটো জড়িয়ে নয় বা এমন ভাবে নয় যে আপনি টি ভি তে ফুট বল খেলা দেখছেন ।
সব সময় আপনার জীবন সঙ্গীর সাথে বসবেন তা না আমন্ত্রণকারী নির্দেশিত লাইনে এসে বসুন। সাধারনত সবাই মিশ্রিত বসে। হয়ত ভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে আলোচনা পায় ভিন্ন মাত্রা।
আপনার প্লেটে রপাশে রুমাল থাকলে বা উপরে থাকলে তা আপনার কোলের উপর রাখুন।
প্লেট সেটিং
থাকবে অন্তত একটি প্লেট , একটি ছুরি আর একটি কাঁটা চামচ। ডেজারট /পায়েস সারভ করার থাকলে থাকবে একটি চামচ আর কাটা চামচ প্লেটের উপর।স্যুপ থাকলে চামচ পাবেন।
এ হল অনানুষ্ঠানিক
আনুষ্ঠানিক ডিনারে সাজান আরও বেশি ।
প্লেটের দান দিকে থাকে গ্লাস যা পানিতে পূর্ণ থাকে।
আপনার প্লেটের বাম দিকে ছোট প্লেট সঙ্গে বাড়তি ছুরি এটি ব্রেডের আর মাখনের জন্য।
রুপার চামচ ছুরি কাটা চামচ।
আপনি দেখলেন প্লেটের দু দিকে দুটো ছুরি আর দুটো কাঁটা চামচ।
শুরু করবেন বাহিরের ছুরি আর কাঁটা চামচ দিয়ে। তা হল এপিটাই জার বা স্টারটার কোর্সের জন্য। শেষ হলে দুটোই রেখে দেবেন ফউর টু ফাইভ ও ক্লক অবস্থানে। শেষ না হলে রাখুন আড়া আড়ি তবে কখন ও রাখা যাবেনা টেবিল ক্লথের উপরে।প্লেটের উপর রাখবেন যাতে একে সরিয়ে নেয়া যায় । আমেরিকান রে৪স্তরায় অনেক সময় প্লেটের বাম দিকে থাকে দুটো কাঁটা চামচ আর একটি ছুরি ডান দিকে। সে ক্ষেত্রে বামের বাইরের কাঁটা চামচ আর ডান দিকের ছুরি নিন। শুরু হোক স্টারটার । পরে নিতে পারেন আরেক নতুন ছুরি হতে পারে সটীক নাইফ । বা রেগুলার নাইফ মেন কোর্স কাবার জন্য।
এখন খাবার সারভ করার সময়।
ইনফরমাল ডিনার বাসায় খাবেন ফেমিলি টাইপ ডিনার ।
খাবার আছে বাটিতে আর সেখান থেকে পরিবেশন।
টেবিলে প্লেট বা বাটি যাতেই খাবার থাক কারো উপর দিয়ে হাত গলিয়ে বাটি ধরা ঠিক না।শুরু করার সময় বাটি নেবেন বাম থেকে ডানে । নিজেকে সারভ করার পর আপনার ডান দিকে দেবেন। সারভ করার চামচ ইত্যাদি ব্যবহার করুন আপনার প্লেটের চামচ নয়। নুন দরকার হলে চাইতে পারেন হাত বাড়িয়ে নেবেন না । আপনার একেবারে সামনে থাকলে নিতে পারেন। কেউ যদি চাই নুন লঙ্কা দুটো তাহলে এক সাথে দিন।
নিজে যখন খাবার নেবেন তখন বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে পরিমিত নিবেন দেখবেন টেবিলে ক জন আছে। সবার প্রতি আইটেম পাওয়ার কথা তাই নিজের প্লেটে খাবার স্তুপ করবেন না । অনেকে এরকম খাবার স্তুপ করেন আমন্ত্রিত ডিনারে বসে , বিয়ের দাওয়াতেও । খুব বাজে অভ্যাস। নিজের যেটুক নেওয়া উচিত এর বেশি নেওয়া ঠিক না।
কোন খাবার পছন্দ হচ্ছে না সে ক্ষেত্রে খোলা মনের হবেন। পরিবেশন করে দিলে সামান্য খেতে চেষ্টা করুন।
যদি গুরুতর ফুড এলারজি থাকে কোন খাবারে বা কোন খাবার খান না তা আগে নিমন্ত্রন কর্তাকে জানালে তিনি সে রকম ব্যবস্থা করবেন।

৪। এখন খাবার সময় এলো ।
সবাইকে খাবার পরিবেশন হয়ে গেলে আর আমন্ত্রন কর্তা খাবার পেলে আর শুরু করলে তবে খাবার খাওয়া শুরু করুন। অনেকের প্লেট খালি খাবার পান নি এ সময় নিজে প্লেটের খাবার খাওয়া শুরু করা খুব অভদ্র আর রুঢ় একটি কাজ , কখন ও এমন করা ঠিক নয় ।আমি অনেক সময় এরকম করতে দেখেছি ।
সিল্ভার চামচ দিয়ে খেতে পারেন আমেরিকান পদ্ধতি বা কন্টিনেন্টাল পদ্ধতিতে।আমেরিকান পদ্ধতিতে কাঁটা চামচ ডান হাতে। আর এভাবে খান। কিছু কাটতে হলে কাটা চামচ বা হাতে নিয়ে আর ছুরি নিন ডান হাতে। কাটা হলে ছুরি রাখুন প্লেটের উপর। বা নাইফ রেস্ট থাকলে সেখানে । এরপর বা হাত থেকে ডান হাতে নিন কাঁটা চামচ আর খেতে শুরু করুন।
কন্টিনেন্টাল পদ্ধতিতে কাঁটা চামচ বা হাতে আর ছুরি ডান হাতে। এতে ছুরি আর চামচ এক হাত থেকে অন্যহাতে নিতে হয়না । আলাপ হতে থাকলে কন্টিনেন্টাল ভাল চামচ দু হাতে অদল বদলের ঝামেলা থাকেনা।
কি করে খাবার দেবেন মুখে। বা হাতে কাটা চামচ খাবার ধরে আছে আর নিয়েছেন পেন্সিল ধরেছেন যেন , কোন কিছু কাটতে হলে কাঁটা চামচ ধ্রবেন ১৮০ ডিগ্রিতে , মাংস কাটছেন আপনি কাঁটা রেখে দিতে পারেন কাটিং পজিসনে। আর মুখে দিতে পারেন। বা ফেস আপ করেও দিতে পারেন।
এ কাজ যেন সাবলিল আর সহজে হয় সে জন্য বাসায় প্র্যাকটিস করা ভাল।
এখন আপনার হাতের কনুই দিয়ে কি করবেন?
সাধারনত আহারের সময় কনুই টেবিলের উপর রাখা যাবেনা , এটি অভব্য আচরন। কবজি বরং থাকবে/ তবে আহারের পর আলাপ কালে কনুই রাখা যাবে দেহ ভঙ্গি হিসাবে।
আহারের দ্রুতি গুরুত্ব পূর্ণ , খুব দ্রুত না ধীরেও না।
আহার করার সময় খাবার খণ্ড করবেন আগে টুকরো টুকরো করে খেতে বসবেন না। বাচ্চাদের জন্য এমন করা যায়
ছোট টুকরা মখে নেবেন , চর্বণ করবেন শব্দ না করে। আর গিলে নেবেন পুরোপুরি । এরপর অন্য গ্রাস নেবেন।
মুখ বন্ধ করে খাবেন। চর্বণের শব্দ যেন না হয়। আগে খাবারে লবন ছিটিয়ে আহারে বসবেন না। আর আপনি খাবার না খেয়ে আগেই লবন ছি টালে বাজে অভ্যাস আরফ একজন চাকরি হারান এই মেনারস এর জন্য ,
আহারের পর নিমন্ত্রন দাতাকে ধন্য বাদ দিন আর দিন খাবার আর আয়োজনের জন্য।
কারো সাথে কথা বলার আগে খাবার চিবানো শেষ করুন , অনেক মুখে খাবার নিয়ে চিবিয়ে কথা বলেন । অভব্য আচরন।
প্রস্ন হলে চর্বণ শেষ হলে উত্তর দিন। কেউ খাবার চিবাচ্ছেন এমন সময় প্রশ্ন করা ঠিক না উনারা বিব্রত বোধ করবেন।
ডিনারে ব্রেড দেওয়া হলে তা দেওয়া হয় বাস্কেটে । বা বাটিতে । আর নিয়ে দিন বাম থেকে ডানে । মাখন থাকলে অল্প নিয়ে রাখুন প্লেটে ।আমেরিকায় মাখন পুরো ব্রেডে লাগিয়ে এর পর মুখে দেন। জার্মানিতে টুকরো করে মাখন লাগিয়ে খেয়ে এর পর আবার এক টুকরো কর ভেঙ্গে ভেঙ্গে খাওয়া। তাই বাইরে গেলে তাদের সাংস্কৃতিক আচার আচরন জানা ভাল। আর তা সম্মান করা ভাল।
রুমাল দিয়ে মুখ মুছলেন , তবে টেবিলে বসে টুথ পিক দিয়ে দাঁত খোঁচানো বা আঙ্গুল দিয়ে মুখে ঢুকানো বাজে অভ্যাস। বরং বেশি অসুবিধা হলে ক্ষমা চেয়ে যান রেস্ট রুমে।
তাই টুথ জন সমক্ষে ব্যবহার করবেন না।
জরুরি কল এল খাওয়ার সময় কি করবেন?বা আসবে আশা করছেন , তাহলে বলবেন ক্ষমা করবেন আমি আবার ফিরে আসছি। গেলেন রেস্ট রুমে। এর ব্যখ্যা দেবেন না ।
খেতে বসে প্লেটে আঙ্গুল ব্যবহার করা ঠিক না। আঙ্গুলের সাহায্য খাবার তুল্ বেন না বরং ব্যবহার করুন ছুরি। খাবার খুব সবাদু হলেও আঙ্গুল দিয়ে চুষ বেন না। কাঁটা চামচ দিয়ে কিছু কাটবেন না। টেবিলে খাবার চ্যাপ্টা করা বা স্মেশ করা ঠিক না , খুব অভব্য।
কোম্পানি ডিনার হলে এ র মুল ব্যাপার আলাপ আর আলোচনা । তা দেহ ভঙ্গি আর আলাপের ধরন গুরুত্ব পূর্ণ । আস্তে কথা জোরে না চেচিয়ে না। শুনুন এর পর ব্লুন কথার মাঝে কথা না। প্রশ্ন থাকলে পরে করুন।
খাওয়ার পর ন্যাপকিন ভাজ করে পাশে রাখুন প্লেটের উপর নয়। ব্ল্যাক আর ব্লু কম্বিনেসন পরতে পারেন সুট । বা চেক আর নিল পেন্ট ।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়