Dr.Liakat Ali

Published:
2021-07-22 22:39:47 BdST

চট্টগ্রামের ডাক্তার খাস্তগীর, কে এই মহান চিকিৎসক


 

ডেস্ক

চট্টগ্রামের খাস্তগীর ডাক্তার। ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কতটা জানি মহান চিকিৎসক সম্পর্কে।।

জয়দেব দে শিপলুর লেখা থেকে জানা যায়,
চট্টগ্রামে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল আছে। অনেকেই জানেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তর পিতা যাত্রামোহন সেন তার শ্বশুরের পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশ্য ১৯০৭ সালে জামাল খানে এই স্কুলটি স্থাপন করেন। যাত্রামোহন সেনগুপ্তের শ্বশুর হিসেবেই পরিচিত হয়ে আছে ডাক্তার খাস্তগীর নামের আড়ালে ডা. অন্নদাচরণ খাস্তগীর। কিন্তু ডা. খাস্তগীর নিজেও যে একজন প্রথিতযশা ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর কথা এ অঞ্চলের মানুষ খুব একটা জানে না। গত ২১ জুলাই ছিল ১৩৪তম তিরোধান দিবস। তাই এই সামান্য নিবেদন।
ভারতবর্ষের প্রথম প্রজন্মের গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকদের মধ্যে ডা. খাস্তগীর ছিলেন অগ্রগণ্য। শুধু চিকিৎসক নয়, সমাজ সংস্কারক ও প্রবন্ধলেখক হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল।
১৮২৯ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রামচন্দ্র খাস্তগীর ছিলেন সরকারি উকিল। পিতার ইচ্ছা ছিল ছেলে বড় হয়ে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হোক। সেভাবেই তিনি লেখাপড়া করছিলেন। চট্টগ্রাম ইংরেজি স্কুল থেকে ছাত্রবৃত্তি পাশ করার পর অন্নদা ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় তিনি আরো দুজন ছাত্রের সঙ্গে থাকতেন। এদের মধ্যে একজন এক রাত্রের কলেরায় মারা গেলে তিনি দারুণ মনোকষ্টে পড়েন। স্থির করেন বড়ো হয়ে মানুষের মৃত্যু জরার বিরুদ্ধে লড়বেন। ভবিষ্যতে ডাক্তার হবেন।
পরবর্তীতে তিনি সিনিয়র পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ৫৫ টাকা বৃত্তি নিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি প্রথম পরীক্ষাতেই প্রথম হন। কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন তাকে লন্ডনে পাঠানো হবে পরবর্তী শিক্ষার জন্য। কিন্তু সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী ও জাত খোয়ানোর ভয়ে তার পরিবার তাঁকে লন্ডন যেতে অনুমতি দেয়নি। তাঁর স্থলে দ্বিতীয় রাজেন্দ্র চন্দ্র লন্ডন যান।
মেডিকেল থেকে পাশ করে সরকারি মেডিকেলে চাকরি নেন। আরাকানে তিনি এসিস্টেন্ট সার্জন হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে তাকে পালকি যোগে যেতে হয়েছিল। তার উদ্যোগে কলকাতার সঙ্গে আরকানের জাহাজ চলাচল শুরু হয়। তারপর তাকে বরিশালে বদলি করা হয়। সেখান থেকে উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে তিনি চাকরি করে অবশেষে কলকাতায় ফিরে আসেন। কিছুদিন কলকাতা মেডিকেলে শিক্ষকতা করেন। বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা ছিল। ১৮৮৭ সালের ২১ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর সময় বিদ্যাসাগর উপস্থিত থাকতে না পারায় বিদ্যাসাগরের আফসোসের অন্ত ছিল না।
তার তিন পুত্র ও চার কন্যা ছিল। তিনি তাঁর তিন কন্যাকেই ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করছিলেন। তার বড়ো কন্যা কুমুদিনী চট্টগ্রামের প্রথম মহিলা স্নাতক।
দ্বিতীয় কন্যা মনোমোহিনীর সঙ্গে বিখ্যাত ব্রাহ্মনেতা, বক্তা ও বাঙালি হিন্দু সমাজের অন্যতম ধর্মসংস্কারক কেশবচন্দ্র সেনের বড়ো ছেলে করুণাচন্দ্র সেনের বিয়ে দেন। আর তৃতীয় কন্যা বিনোদিনীকে বিয়ে দেন চট্টগ্রামের বিখ্যাত জমিদার যাত্রামোহন সেনগুপ্তের সঙ্গে।
ব্রাহ্মধর্ম বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলেন ডা. খাস্তগীর। তিনি প্রথম মহিলাদের প্রকাশ্যে প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেন। ‘চিকিৎসা সম্মিলনী’ নামের একটি চিকিৎসা বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকার সহ-সম্পাদনা করতেন তিনি। গভর্নর জেনারেল লর্ড নর্থব্রুক বর্ধমান অঞ্চলের ম্যালেরিয়া সমস্যা নিয়ে প্রবন্ধ আহবান করেন। সেবার ডা. খাস্তগীরের প্রবন্ধ প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল। বাংলা ও ইংরেজিতে তিনি অনেক প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো: মানব জন্মতত্ত্ব, ধাত্রীবিদ্যা, নবপ্রসূত শিশুর পীড়া ও চিকিৎসা, স্ত্রীজাতির ব্যাধিসংগ্রহ, আয়ুবর্ধন, শরীর রক্ষণ, পারিবারিক সুস্থতা।
চট্টগ্রামের এই গৌরবকে  সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি।
#জয়দেব দে শিপলুর পোস্ট থেকে)।

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়