SAHA ANTAR

Published:
2021-07-16 14:59:07 BdST

ইদি জলসা এক হারিয়ে যাওয়া রেল স্টেশনের গল্প


 

চিরঞ্জিত দাস

_______________

এখানে সকালটা রোজই শুরু হয়, দরজার শিকলের ঠক ঠক আওয়াজে, আওয়াজের নেপথ্যে আমার কাজের দিদি। আজও তাই ছিল। হুগলি জেলার, সিঙ্গুর নিবাসী আমি, কর্মসূত্রে বীরভূমের বড়রা গ্রামে থাকি। ছুটির দিনে আজকের রুটিন ছিলো, ঘুম থেকে উঠে বাজার যাওয়া, ফিরে সানডে সাসপেন্স শুনতে শুনতে রান্না করা, সারাদিন কারেন্ট না থাকার দৌলতে রান্না শেষে কুয়ো থেকে দড়ি টেনে জল তুলে চান করা, তারপর খাওয়া দাওয়া সেরে একটু গড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পরা ঝাড়খণ্ডের পলাস্থলীর উদ্দেশ্যে।
একসময় ভীমগর-পলাস্থলী রেল যোগাযোগ ছিলো। ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া এই স্টেশনটি বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের জামতারা জেলায় অবস্থিত। একসময় কয়লা মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে বন্ধ হয়ে যায় ভারতীয় রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই শাখা। শোনা যায় মাফিয়ারা গোটা একটা ট্রেন হাইজ্যাক করে নিয়েছিল ট্রেন চালককে গান পয়েন্টে রেখে, সম্ভবত ২০০২ সালে। তারপর বহুদিন খাতায় কলমে চালু রেললাইনে ট্রেন যাতায়াত বন্ধ ছিলো। কিছু বছর আগে রেল সরকারি ভাবে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। বর্তমানে পলাস্থলী স্টেশনের নিচে সামান্য কয়লার খোঁজ পাওয়ায় কিছু মানুষ ইচ্ছামত, সেই কয়লা তোলার কাজে লেগে পড়েছে। ফল স্বরূপ এই এলাকা দিন দিন ধসপ্রবন হয়ে উঠছে।
বড়রা থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে শাল-পলাশ-মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা এক সময়ের ব্যস্ত এই স্টেশন এখন পরিত্যক্ত ভগ্নপ্রায়। প্রায় জনহীন এই প্রান্তে দিনের আলোতেও বেশ গা ছমছম করে। রেল লাইনের একদম পাশেই আছে একটি পরিত্যক্ত কয়লা খাদান। স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরও কিছু ভগ্নপ্রায় ঘর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকা মদের বোতল প্লাস্টিকের গ্লাস ওখানে মানুষের নিয়মিত আনাগোনার প্রমান বহন করে।
এখানের সাধারণ মানুষ এখনও এই আশায় আছে যে একদিন আবার চালু হবে এই রেলপথ। এক গ্রামবাসী আমায় ছবি তুলতে দেখে কাছে এসে কাতর স্বরে বলেই বসলো, "বাবু দেখুন না যদি আবার চালু হয় লাইনটা।" ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত হলেও পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম লাগোয়া এই অঞ্চলের মানুষরা সাধারণত বাংলাতেই কথা বলে।
স্টেশন থেকে কাছেই অজয় নদ। ফেরার সময় চায়ের দোকানে কিছু লোক মুখে শুনলাম স্টেশন পেরিয়ে নদীর পথে যেতে পলাশের জঙ্গল পরে। ঠিক করলাম, পলাশ ফুটলে আবার একদিন বেড়িয়ে পড়বো পলাস্থলী উদ্দেশ্যে।
...
স্থান: বড়রা, বীরভূম এবং পলাস্থলী, ঝাড়খন্ড
তাং: ২৩-০২-২০২০

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়